Saturday, May 18, 2024
HomeScrollingকরোনা প্রতিরোধী স্প্রে আবিষ্কার বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত সাদিয়ার

করোনা প্রতিরোধী স্প্রে আবিষ্কার বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত সাদিয়ার

অনলাইন ডেস্ক।। 

করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) প্রতিরোধ করতে পারে এমন একটি জীবাণুনাশক স্প্রে আবিষ্কার করেছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এক তরুণ ব্রিটিশ বিজ্ঞানী।

দেড় বছর ধরে গবেষণার পর ২৬ বছর বয়সী সাদিয়া খানম ‘ভলটিক’ নামের এই জীবাণুনাশক তৈরি করেছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।

‘ভলটিক’ যেকোনো বস্তুর সারফেসে স্প্রে করা হলে সেটি দুই সপ্তাহের জন্য জীবাণুমুক্ত থাকবে।

করোনা মহামারী মোকাবিলায় এই উদ্ভাবনকে বড় ধরনের আবিষ্কার হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে।

যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থা এনএইচএসসহ বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর এই স্প্রে অনুমোদন দিয়েছে।

যুক্তরাজ্যে করোনার প্রকোপ দেখা দেওয়ার পর সাদিয়া তার পিএইচডি গবেষণা স্থগিত রেখে উত্তর পশ্চিম ইংল্যান্ডের চেশায়ারে তার বাবার রেস্তোরাঁয় এই ভাইরাসটি নিয়ে প্রাথমিক গবেষণা শুরু করেন।

বিশেষ একটি মেশিন দিয়ে এই তরল স্প্রে করতে হয়। এই পুরো প্রক্রিয়াটির নাম ভলটিক।

সাদিয়া বলেন, ‘এই জীবাণুনাশ প্রক্রিয়ার একটি অংশ হচ্ছে- কোনো জীবাণু যদি কোনো কিছুর সংস্পর্শে আসে, তখন তাকে ধ্বংস করে ফেলা। অর্থাৎ কোনো কিছুর পৃষ্ঠ বা সারফেসের ওপর যদি কোনো ভাইরাস থাকে, এর সাহায্যে তাকে সঙ্গে সঙ্গেই মেরে ফেলা যায়।’

তিনি জানান, এটি চামড়া থেকে শুরু করে কাঠ, লোহা থেকে কাপড়- সব ধরনের সারফেসের ওপর কাজ করে বলে গবেষণায় দেখতে পেয়েছেন।

বর্তমানে বাজারে যেসব জীবাণুনাশক পাওয়া যায় তার বেশিরভাগই খুব বেশি সময় ধরে সুরক্ষা দিতে পারে না।

সাদিয়া দাবি করছেন, তার এই ভলটিক স্প্রে অন্যান্য জীবাণুনাশকের চেয়ে আলাদা। একবার স্প্রে করার পর সেটি ১৪ দিন কার্যকর থাকে।

তিনি বলেন, অনেক জীবাণুনাশক বিষাক্ত। কিন্তু তার ভলটিক স্প্রে যাতে কোনোভাবেই ক্ষতিকর না হয় কিংবা বর্তমানে ও ভবিষ্যতে যাতে এর কোনো ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা না দেয়, সে বিষয়ে তাকে সতর্ক থাকতে হয়েছে।

সাদিয়া বলেন, ‘আমি এমন একটা জিনিস তৈরি করতে চেয়েছি যা স্থায়ী হবে। আরও গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে- আমি হাসপাতালগুলোকে সাহায্য করতে চেয়েছি। এমন জিনিস তৈরি করতে চেয়েছি যা এই কঠিন সময়ে তাদের সাহায্য করবে- যা বিছানা, কম্বল, পর্দা, বালিশ, কুশন, সোফা ইত্যাদি নরম জিনিসের ওপর কাজ করবে।’

তরুণ এই বিজ্ঞানী দাবি করছেন, তার আবিষ্কৃত ভলটিক সব ধরনের করোনাভাইরাস ধ্বংস করতে সক্ষম।

তিনি বলেন, ‘আমি এমন একটা জিনিস তৈরি করতে চেয়েছি যা সবাই ব্যবহার করতে পারে। ভলটিক সব ধরনের ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে কাজ করে। কারণ, আমি এই ভাইরাসের আসল স্ট্রেইন নিয়ে কাজ করেছি।’

ভলটিক স্প্রে সব ধরনের করোনাভাইরাস, ইবোলা ভাইরাস, এভিয়েন ফ্লু, ইনফ্লুয়েঞ্জা এ, সার্স, এইচআইভি বি এবং অন্যান্য জীবাণু ধ্বংস করতে পারে বলে সাদিয়া জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ভলটিক স্প্রে ব্যবহার করলে সব ধরনের সারফেস যেহেতু দীর্ঘ সময়ের জন্য জীবাণুমুক্ত থাকবে, সে কারণে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করার জন্য একটি প্রতিষ্ঠানকে যত অর্থ ও সময় খরচ হয় তার অনেক সাশ্রয় ঘটবে।

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তার এই ভলটিক স্প্রে পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থা বা এনএইচএস। বিভিন্ন কেয়ার হোমেও এটি পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে।

ব্রিটেনে জীবাণুনাশক সংক্রান্ত বিভিন্ন দপ্তর ও কর্তৃপক্ষও ভলটিক স্প্রের ওপর ট্রায়াল সম্পন্ন করে এটিকে অনুমোদন দিয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যেই এটি ব্যবহারের ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে।

বলা হচ্ছে, কভিড নিরাপত্তার ব্যাপারে এই উদ্ভাবন অনেক বড় একটি পদক্ষেপ। হাসপাতাল, কেয়ার হোম, হোটেল রেস্তোরাঁ, বিমান ও পরিবহন খাতে এই স্প্রে ব্যবহারের সম্ভাবনা প্রবল।

শৈশব থেকেই সাদিয়ার স্বপ্ন ছিল তিনি বিজ্ঞানী হবেন। বিশেষ করে তার দাদা আলঝেইমার্স রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর তিনি স্বপ্ন দেখেন যে একদিন তিনি এই রোগের ওষুধ আবিষ্কার করবেন। তখন থেকেই তিনি এ নিয়ে পড়াশোনা করতে শুরু করেন।

তিনি আলঝেইমার্স রোগের ওপর পিএইচডি গবেষণা শুরু করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন সাদিয়া। কিন্তু মহামারি শুরু হলে তিনি সেসব বাদ দিয়ে করোনা মোকাবিলার উপায় খুঁজতে শুরু করেন।

সাদিয়া স্যালফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বায়োমেডিক্যাল সায়েন্স এবং চেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে জিনোমিক মেডিসিন বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন।

RELATED ARTICLES
Continue to the category

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments