চিত্রনায়িকা পরীমণিকে ঢাকা বোট ক্লাবে পায়ে হেঁটে সুস্থ অবস্থায় ঢুকতে দেখা গেলেও এক ঘণ্টা ৩৭ মিনিট পর তাকে এই চিত্রনায়িকাকে ধরাধরি করে প্রায় অচেতন অবস্থায় সেখান থেকে বের করতে হয়েছে।
পুলিশের উদ্ধার করা ঢাকা বোট ক্লাবের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে এমনটাই দেখা গেছে।
পুলিশ বলছে, ভিডিও ফুটেজ থেকে এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে, ওই রাতে বোট ক্লাবের ভেতরে ‘কিছু’ একটা ঘটেছে।
ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার আবদুল্লাহিল কাফী বলেন, কালো রঙের একটি গাড়িতে ওই রাত ১২টা ২২ মিনিটে পরীমণি ক্লাবে ঢোকেন, আর বের হন ১টা ৫৯ মিনিটে। বের হওয়ার সময় তাকে দুজন চ্যাংদোলা করে বের করতে দেখা যায়।
ফুটেজে দেখা যায়, সময় তখন রাত ১২টা ২২ মিনিট। ঢাকা বোট ক্লাবের সামনে একটি কালো গাড়ি থামে। গাড়িটি ছিল বোট ক্লাবের সদস্য তুহিন সিদ্দকী অমির। গাড়ির সামনের দরজা থেকে নামেন চিত্রনায়িকা পরীমণি। পেছনের ডান পাশের দরজা দিয়ে বের হন গ্রেপ্তার হওয়া অমি, পরীমণির কস্টিউম ডিজাইনার জিমি ও তার বোন বনি।
ক্লাবের বাইরের ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, ক্লাবে ঢোকার সময় পরীমণি কালো টপস, জিন্সের প্যান্ট পরা ছিলেন। বনি লাল টপস, সঙ্গে জিন্সের প্যান্ট এবং জিমি কালো হাতাকাটা গেঞ্জি ও হাফ প্যান্ট পরা ছিলেন। অমির পরনে ছিল সাদা গেঞ্জি ও গ্যাবার্ডিনের প্যান্ট। শুধুমাত্র অমি ছাড়া বাকি সবাই মাস্ক পরে ক্লাবে প্রবেশ করেন।
রিসিপশনের ক্যামেরায় তাদের চারজনকে একসঙ্গে বারে ঢুকতে দেখা যায়। তখন রিসিপশন ডেস্কে ছিলেন দুজন এবং ডেস্কের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন আরও একজন স্টাফ।
রাত ২টায় রিসিপশনের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, পরীমণিকে অচেতন অবস্থায় কোলে নিয়ে বের হন জিমি ও একজন সিকিউরিটি গার্ড। পেছনে দৌড়াচ্ছিলেন তার বোন বনি। তাদের পেছনে স্বাভাবিকভাবে হেঁটে যাচ্ছিলেন অমি। গাড়িতে ওঠার সময় আঙুল তুলে সবাইকে ধমকের ইঙ্গিত দিতে দেখা গেছে অমিকে।
এদিকে বনানী থানার বাইরের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, রাত ৩টা ৫২ মিনিটে বনানী থানায় প্রবেশ করেন পরীমণি। প্রথমে তারা ডিউটি অফিসারের রুম হয়ে থানার ভেতরে প্রবেশ করেন। পরে একজন অফিসার তাদের ডিউটি অফিসারের কাছে যেতে বলেন। পরীমণি ডিউটি অফিসারের রুমে গিয়ে তার বরাবর চেয়ারে বসেন এবং ঘটনার বর্ণনা দেন। তবে ডিউটি অফিসার তার কথা বুঝতে পারছিলেন না। পরে তাকে পুলিশের একটি গাড়িতে এভার কেয়ার হাসপাতালে পাঠানো হয়।
বারের ভেতরে সিসিটিভি ফুটেজ না থাকলেও জিমি তার মোবাইলে ১৬ সেকেন্ডের মতো একটি ধস্তাধস্তির ভিডিও করেছিলেন। এতে নাসিরকে হই-হুল্লোড় ও গালমন্দ করতে শোনা যায়।
সে রাতের ঘটনা সম্পর্কে ডিবি উত্তর বিভাগের যুগ্ম-কমিশনার হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, তারা দুইজনই (নাসির ও অমি) পরীমণির গালে থাপ্পড় মারা এবং মাটিতে ফেলে দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। মূলত তারা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন। কারণ অমির গাড়িতেই পরীমণিকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়। অমি না নিয়ে গেলে এমন ঘটনা নাও ঘটতে পারত।
এর আগে পরীমণির দায়ের করা মামলার পর তুহিন সিদ্দিকী অমির উত্তরার বাসায় অভিযান চালায় ডিবি। সেখান থেকে অভিযুক্ত নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও অমিসহ তিন নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযানে অমির বাসায় তল্লাশি চালিয়ে এক হাজার পিস ইয়াবা, বিদেশি মদ ও বিয়ার জব্দ করা হয়।
রবিবার রাতে ফেসবুক পোস্টে পরীমণি অভিযোগ করেন, ৯ জুন (বুধবার) উত্তরার বোট ক্লাবে তাকে ধর্ষণ ও হত্যার চেষ্টা চালান ব্যবসায়ী নাসির ইউ মাহমুদ ও তার সহযোগীরা। এ ঘটনায় তিনি সাভার থানায় ছয়জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন।