Saturday, July 5, 2025
HomeScrollingকেন কঠোর ভিসানীতির পরিকল্পনা করছে ব্রিটেন?

কেন কঠোর ভিসানীতির পরিকল্পনা করছে ব্রিটেন?

কঠোর ভিসানীতির পরিকল্পনা করছে ব্রিটেন। এর মাধ্যমে দেশটি অভিবাসন ঠেকাতে চায়। সোমবার যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লেভারলি পাঁচ দফার একটি পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। গত মাসে যুক্তরাজ্য সরকারের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে ২০২২ সালে দেশটিতে ৭ লাখ ৪৫ হাজার মানুষ অভিবাসন গ্রহণ করেছে, যেটি যুক্তরাজ্যের অভিবাসন ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এর ফলে উদ্বেগ সৃষ্টি হওয়ায় নতুন এই পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে দেশটির সরকার। এতে যেসব পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে অভিবাসী দক্ষ কর্মীদের বেতন বৃদ্ধি।

আগে যেখানে তাদের ন্যূনতম বেতন ছিল ২৬ হাজার ২০০ পাউন্ড, এখন সেটি বাড়িয়ে ৩৮ হাজার ৭০০ পাউন্ড নির্ধারণ করা হয়েছে।আর এই বেতন বৃদ্ধির ফলে গত বছর যে তিন লাখ নতুন অভিবাসী যুক্তরাজ্যে আসার যোগ্য বলে বিবেচিত হয়েছিলেন, তারা আর আসতে পারবেন না বলে জানাচ্ছেন ক্লেভারলি।

এছাড়া নতুন এই পরিকল্পনায় পারিবারিক ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় ন্যূনতম আয়ের পরিমাণও বাড়ানো হয়েছে। ফলে এখন থেকে পারিবারিক ভিসায় যুক্তরাজ্যে যেতে হলে আবেদনকারীর ন্যূনতম আয় থাকতে হবে ৩৮ হাজার ৭০০ পাউন্ড।

সংসদ সদস্যদের উদ্দেশ্যে দেওয়া এক বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাজ্যে অভিবাসনের লাগাম টানা প্রয়োজন।বছরের পর বছর ধরে দেশটিতে স্বাস্থ্য ও পরিচর্যা ভিসার অপব্যবহার করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

“যথেষ্ট হয়েছে”, বলেন ক্লেভারলি।

তিনি আরও বলেন, “অভিবাসন নীতি অবশ্যই স্বচ্ছ, ন্যায্য ও টেকসই হতে হবে।”

70b07380-9321-11ee-8df3-1d2
অভিবাসন রোধে সোমবার যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লেভারলি পাঁচ দফার একটি পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন।

গত মাসে ২০২২ সালের অভিবাসনের তথ্য প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই দেশটিতে অভিবাসন কমিয়ে আনার ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ও তার সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির এমপিরা।

দেশটিতে অভিবাসীদের সংখ্যায় এমন বৃদ্ধি সুনাক ও ক্ষমতাসীন দল কনজারভেটিভ পার্টির জন্য একটি বড় রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।

কারণ তারা ২০১০ সাল থেকেই অভিবাসন কমানোর ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছে।

এছাড়া ব্রেক্সিট ভোটের পরেও দলটি যুক্তরাজ্যের সীমান্তের “নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে নেওয়ার” প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।

তবে ২০১৯ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে নির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ না করেই অভিবাসীদের সংখ্যা কমানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল।

তার আগে প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় ডেভিড ক্যামেরন একবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছিলেন যে যুক্তরাজ্যে অভিবাসীর সংখ্যা বছরে এক লাখের নিচে নামিয়ে আনা হবে।

২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে অভিবাসন নীতির বিষয়টি যুক্তরাজ্যে ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।

এ অবস্থায় জনমতকে প্রাধান্য দিয়ে যুক্তরাজ্যে অভিবাসনের সংখ্যা কমানোর জন্য “যা করা প্রয়োজন তা করার” নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক।

নতুন পরিকল্পনায় স্বাস্থ্য ও পরিচর্যা কর্মীদের পরিবারকে যুক্তরাজ্যে নিয়ে আসার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে।

এছাড়া যেসব কোম্পানি তাদের বর্তমান বেতন কাঠামোর চেয়ে ২০ শতাংশ কম বেতন দিচ্ছে, তারা যেন অভিবাসী শ্রমিকদের আনতে না পারে, সে ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে।

পাশাপাশি বিভিন্ন দেশ থেকে যারা যুক্তরাজ্যে পড়তে আসেন, সেই সব শিক্ষার্থীরা যেন ইচ্ছা করলেই তাদের পরিবারের সদস্যদের দেশটিতে আনতে না পারেন, সে ব্যাপারেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

এসব পরিবর্তন আগামী বসন্ত থেকে কার্যকর করা হবে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

“এই নীতির ফলে গত বছরের তুলনায় আগামী বছর অন্তত তিন লাখ কম অভিবাসী আসবে”-সংসদ সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন ক্লেভারলি।

নতুন নীতির কারণে যুক্তরাজ্যে পড়তে আসা বিদেশি শিক্ষার্থীরা এখন চাইলেই আর তাদের পরিবারের সদস্যদের আনতে পারবেন না। আর এতেই অভিবাসীদের সংখ্যা অর্ধেকে নেমে আসবে বলে বিশ্বাস করে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

এদিকে নতুন এই পরিকল্পনার প্রতিক্রিয়ায় লেবার পার্টির সংসদ সদস্য ইভেট কুপার বলেছেন, সোমবারের ঘোষণা এটি বুঝিয়ে দিয়েছে যে অভিবাসন ব্যবস্থা ও অর্থনীতি- উভয় ক্ষেত্রেই বছরের পর বছর ধরে টোরিরা কীভাবে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।

তিনি বলেন, অভিবাসীদের সংখ্যায় লাগাম টানা উচিত, অথচ এ বিষয়ে কনজারভেটিভরা আর উল্লেখযোগ্য কোনো টেকসই সংস্কার আনতে পারছে না।

অন্যদিকে ব্রিটেনের ট্রেড ইউনিয়ন ইউনিসনের জেনারেল সেক্রেটারি ক্রিস্টিনা ম্যাকানিয়া নতুন অভিবাসন নীতিকে নিষ্ঠুর বলে অভিহিত করেছেন।

তিনি বলেন, এই পরিকল্পনা যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য ও সামাজিক পরিচর্যার ক্ষেত্রে বিপর্যয় ডেকে আনবে।

“অভিবাসী শ্রমিকদের এখানে আসতে উৎসাহিত করা হয়েছিল, কারণ উভয় সেক্টরেই কর্মীদের যথেষ্ঠ অভাব রয়েছে। হাসপাতাল ও কেয়ার হোমগুলো এসব অভিবাসী শ্রমিকদের ছাড়া কাজ চালাতে পারবে না”, বলেন ক্রিস্টিনা ম্যাকানিয়া।

caa9a5a0-9326-11ee-91bf-230
ব্রিটেনে অভিবাসনকামীরা সীমান্তে ফরাসি পুলিশের নিরাপত্তা কর্ডন ভেদ করার চেষ্টা করছে (২০১৫ সালের ছবি)।

তবে নতুন এই পরিকল্পনাকে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির অনেক সংসদ সদস্য স্বাগত জানিয়েছেন।

সাবেক মন্ত্রী সাইমন ক্লার্ক একে “বাস্তবসম্মত” ও “বিশ্বাসযোগ্য” পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেছেন।

যদিও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্র্যাভারম্যান এ নতুন পরিকল্পনায় খুব একটা মুগ্ধ নন বলে জানিয়েছেন।

তার মতে, নতুন এই পরিকল্পনাটি খুব দেরিতে হয়েছে এবং এটাতে আরও অনেক কাজ করা উচিৎ ছিল, যেটা করা হয়নি।

বিশেষত, অভিবাসী কর্মীদের বেতন এবং অভিবাসী শিক্ষার্থীদের লাগাম টানার ক্ষেত্রে অনেক কাজ করার ছিল বলে মনে করেন সাবেক এই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

সূত্র : বিবিসি

RELATED ARTICLES
Continue to the category

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments