যেন একটা স্লোগানই শুরু হয়েছিল, ‘ফেরাতে হাল, ফেরাও হাসান সাকিব আল’। সেই স্লোগানধারীদের দাবি অবশ্য বাস্তবায়ন হয়েছে শনিবার। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের টানা ব্যর্থতার পর ফের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক হলেন সাকিব। তৃতীয় মেয়াদে নেতৃত্ব ফিরলেন এই অলরাউন্ডার। প্রশ্ন ওঠা তাই স্বাভাবিক, এবার কি সাকিব পারবেন দলের হাল ফেরাতে!
শুরুটা হয়েছিল অনেক আগেই। করোনার কারণে ভারতের বিশ্বকাপ চলে যায় সংযুক্ত আরব আমিরাতে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেই আসরে বাংলাদেশ যায় সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্ন নিয়ে। কিন্তু স্কটল্যান্ডের সঙ্গে প্রথম ম্যাচেই হেরে বসে টাইগাররা। ধুঁকতে থাকা লাল-সবুজ জার্সিধারীরা শেষ পর্যন্ত মূলপর্বে জায়গা করে নেয়। কিন্তু সেখানে কোনো জয় আসেনি। তারপর থেকেই অধিনায়ক বদলের গুঞ্জন উঠেছিল। শেষ পর্যন্ত বোর্ড আস্থা হারায়নি অধিনায়ক রিয়াদের ওপর থেকে। ফের সুযোগ পেলেও কাজে লাগাতে পারেননি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর শেষেই তাই অধিনায়ক পরিবর্তন করে বিসিবি।
বাংলাদেশের জার্সি গায়ে এর আগে ২১ ম্যাচে অধিনায়কত্ব করেছেন সাকিব আল হাসান। মাশরাফির অবসরের পর তিনি যখন পূর্ণকালিন অধিনায়ক হলেন, তখন জুয়ারির প্রস্তাব গোপন রাখার দায়ে এক বছরের নিষেধাজ্ঞায় পড়েন। এরপর থেকেই মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন। দেশের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ইতিহাসে তিনিই সবচেয়ে বেশি ম্যাচে নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশকে। এই ফরম্যাটের সফল অধিনায়কও তিনিই। তবে সম্প্রতি অফফর্মের কারণে নেতৃত্ব হারাতে হয়েছে তাকে। ‘উপায়হীন’ বিসিবি আস্থা খুঁজেছে তাই সাকিবেই।
বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রথম টি-টোয়েন্টি খেলেছিল ২০০৯ সালে। মাশরাফির চোটের কারণে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটের একমাত্র ম্যাচে অধিনায়কত্ব করেন সাকিব। সে ম্যাচ অবশ্য বাংলাদেশ হেরেছিল ৫ উইকেটে। ক্রিকেটের এই সংস্করণে তার নেতৃত্বের পথচলাটা তাই হার দিয়েই শুরু হয়। তারপর ২০১০ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আরও তিন ম্যাচে নেতৃত্ব দেন সাকিব। কিন্তু জয়ের দেখা পাননি।
এই সংস্করণে নেতৃত্বের পরিসংখ্যান অবশ্য সাকিবের পক্ষে কথা বলে না। টি-টোয়েন্টিতে তার নেতৃত্বে ২১ ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ জয় পেয়েছে সাতটিতে। বাকি ১৪টিতে হার দেখতে হয়েছে। জয়ের চেয়ে হারের সংখ্যা দ্বিগুণ।
২০১১ সালে দেশের মাটিতে ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর জিম্বাবুয়ে সিরিজ হারে বাংলাদেশ। সেই হারের জের ধরে হারাতে হয় অধিনায়কত্ব। দলের বাকি খেলোয়াড়দের সঙ্গে প্রাণ খুলে মিশেন না, এমন অভিযোগও উঠেছিল। সঙ্গে সহ-অধিনায়কের দায়িত্বও হারান তামিম ইকবাল।
সাত বছর পর ২০১৭ সালে ফের টি-টোয়েন্টিতে অধিনায়ক হিসেবে নামেন সাকিব। তবে সেবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দুই ম্যাচেই হারের মুখ দেখতে হয় বাংলাদেশকে। টানা ৫ ম্যাচে অধিনায়ক হিসেবে পরাজিত সাকিব জয়ের দেখা পান ২০১৮ সালের নিদহাস ট্রফিতে। চোট কাটিয়ে দলে ফিরেই অধিনায়ক হিসেবে নেমেছিলেন। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অসাধারণ ব্যাটিং নৈপুণ্যে দুই উইকেটের জয় পায় বাংলাদেশ। সেটাই সাকিবের নেতৃত্বে বাংলাদেশের প্রথম টি-টোয়েন্টি জয়।
কিন্তু সেই ধারা অব্যাহত থাকেনি। পরের ম্যাচেই টুর্নামেন্টের ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে হার। শুধু তাই নয়, হারের ধারা অব্যাহত ছিল এতটাই যে আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজ হোয়াইটওয়াশ হতে হয়েছে তার নেতৃত্বে। পরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে প্রথম ম্যাচে হারলেও ফ্লোরিডায় শেষ দুই ম্যাচ জিতে নেয় বাংলাদেশ। মার্কিন মুল্লুকে অবশেষে সাকিবের নেতৃত্বে প্রথম টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয় করে টাইগাররা।
সাকিবের নেতৃত্বে সবশেষ দুটি টি-টোয়েন্টি বাংলাদেশ খেলেছিল ২০১৯ সালে। চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত সেই ম্যাচ দুটিতেই জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। ত্রি-দেশীয় সিরিজের শেষ দুটির একটিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৩৯ রানে এবং আফগানিস্তানের বিপক্ষে শেষটিতে ৪ উইকেটের জয় পায়। ফাইনালে খেলার কথা ছিল বাংলাদেশ-আফগানিস্তানের। তবে বৃষ্টিতে ম্যাচ ভেসে যাওয়ায় দ্বৈতভাবে চ্যাম্পিয়ন হয় দুই দল।
এই সিরিজের পরই নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েন সাকিব আল হাসান। এক বছর পর নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফিরলেও পাননি অধিনায়কত্ব। কিছুদিন আগে মমিনুলের অফফর্মের কারণে ফিরে পেয়েছেন টেস্ট দলের দায়িত্ব। এখন রিয়াদের ব্যর্থতায় ফিরে পান টি-টোয়েন্টির দায়িত্ব।
পরিসংখ্যানের কথা যখন উঠলই তখন বাকি অধিনায়কদের পরিসংখ্যানটাও দেখা যাক। এখন অবধি ৯ জন অধিনায়কের নেতৃত্বে খেলেছে টাইগাররা। বাংলাদেশের প্রথম টি-টোয়েন্টি নেতৃত্ব দেন শাহরিয়ার নাফিজ। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একবারই তাকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অধিনায়কত্ব করতে দেখা যায়। সেই ম্যাচে জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছিল বাংলাদেশ। জয়ের হার তাই ১০০ শতাংশ।
বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি ৪৩ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এর মধ্যে জয় এসেছে ১৬টিতেই। বাকি ২৬টিতে এসেছে হার, একটিতে কোনো ফল আসেনি। তালিকায় আছে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জয়ও। মাশরাফি বিন মুর্তজার নেতৃত্বে ২৮ ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ জয় পেয়েছে ১০টিতে। ১৭ টি হারের বিপরীতে ম্যাচে ফল আসেনি একটিতে। মুশফিকুর রহিমের নেতৃত্বে ২৩ ম্যাচ খেলে ১৪ হারের বিপরীতে জয় এসেছে ৮টিতে। কোনো ফল আসেনি এক ম্যাচে। এছাড়া মোহাম্মদ আশরাফুল ১১ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়ে জয় নিয়ে ফিরেছেন মাত্র দুটিতে। বাকি ৯টিতে হেরেছে বাংলাদেশ।
শাহরিয়ার নাফিজ ছাড়া একটি করে ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন লিটন কুমার দাস ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। দুজনের কেউই জয়ের দেখা পাননি। তবে নুরুল হাসান সোহান দুটি ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন। একটি ম্যাচ হারলেও অপরটিতে জিতেছেন।