Saturday, July 5, 2025
HomeScrollingবাজেট বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ আরও একধাপ এগিয়ে যাবে: প্রধানমন্ত্রী

বাজেট বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ আরও একধাপ এগিয়ে যাবে: প্রধানমন্ত্রী

অনলাইন ডেস্ক |

প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ নেতা শেখ হাসিনা ২০২১-২২ অর্থবছরের পেশকৃত বাজেটকে ‘মানুষের জীবন-জীবিকা রক্ষার বাজেট’ আখ্যায়িত করে এর মাধ্যমে চলমান করোনার মধ্যেও দেশকে এগিয়ে নেয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ নেতা শেখ হাসিনা মঙ্গলবার অপরাহ্ণে একাদশ জাতীয় সংসদের ত্রয়োদশ অধিবেশন (২০২১-২২ সালের বাজেট অধিবেশন) এর সমাপনী ভাষণে এ কথা বলেন। স্পিকার ড.শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনের সভাপতিত্ব করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশের মানুষের জীবন-জীবিকা রক্ষার বিষয়টিতে প্রাধান্য দিয়ে আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের যে বাজেট অর্থমন্ত্রী সংসদে পেশ করেছেন-আমি মনে করি সেই বাজেট বাস্তবায়ন করতে আমরা সক্ষম হব। বাংলাদেশ আরও একধাপ সামনে এগিয়ে যাবে এবং জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ ইনশা আল্লাহ আমরা গড়ে তুলব।’

‘লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই দেশে শহীদের রক্ত বৃথা যেতে পারে না,’ মর্মে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই দেশের জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন করতে গিয়েই জাতির পিতা জীবন দিয়ে গেছেন। সেই সাথে তিনি তার মা, তিন ভাই এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের হারিয়েছেন।

স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশ যেন সাফল্য অর্জন করতে না পারে, কোনো দিন মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে সেই ষড়যন্ত্র নিয়েই এই আঘাত এসেছিল। তবে, আজকের বাংলাদেশ মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে এবং এগিয়ে যাবে, বলেন তিনি।

অস্বাভাবিক পরিস্থিতির মধ্যে বাজেট দিলেও এই বাজেট নিয়ে বিরোধী দলীয় উপনেতা এবং সংসদ সদস্যদের সমালোচনার উত্তরে প্রধানমন্ত্রী তাদের বর্তমান বিশ^ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে তারপর মতামত দেয়ার আহ্বান জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, দেশবাসীর মাথাপিছু আয় এই করোনার মধ্যে বৃদ্ধি পেয়ে দুই হাজার ২২৭ মার্কিন ডলার হয়েছে যা অনেক দেশকে ছাড়িয়ে গেছে। এই ধারাটা আমাদের অব্যাহত রাখতে হবে।

এই সময়ে আমাদের রেমিট্যান্স এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টিও স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের অর্থনীতি যথেষ্ট শক্তিশালী এবং এর মধ্যে শ্রীলঙ্কা ২৫০ মিলিয়ন ডলার ঋণ চাওয়ায় তাঁদের সেই ঋণ প্রদানের মাধ্যমে বাংলাদেশ সব সময় আঞ্চলিক সহযোগিতার বিষয়ে যে আন্তরিক সেটা প্রমাণ করেছে।

তা ছাড়া ঋণ মওকুফের মাধ্যমে সুদান ও সোমালিয়ার ঋণ মওকুফ তহবিলে বাংলাদেশ অংশ নিয়েছে। ফলে বাংলাদেশ যে অর্থনৈতিকভাবে সক্ষম আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সেটাই প্রমাণিত হয়েছে, বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর ফলে বহি:বিশে^ যেমন বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বেড়েছে তেমনি জনগণের সম্মানও বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সামাজিক সূচক সমূহে আমাদের শক্ত অবস্থান বিশ^ মহলে প্রশংসিত হয়েছে।

তিনি বলেন, জাতিসংঘ টেকসই উন্নয়ন প্রতিবেদন ২০২১ এর তথ্য অনুযায়ী এসডিজি বাস্তবায়নের অগ্রগতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশে^র শীর্ষস্থানীয় তিনটি দেশের একটির স্বীকৃতি পেয়েছে এবং বৈশি^ক শান্তি সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান সাত ধাপ এগিয়েছে।

সংসদে বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের এবং বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (জেপি) সদস্য আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ও সংসদে বক্তৃতা করেন। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সমাপনী বক্তৃতা করেন।

করোনা মহামারিতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ক্ষতি হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রাথমিক হিসেব অনুযায়ী ২০১৯-২০ এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে করোনা ভাইরাসজনিত কারণে দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে আনুমানিক ১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ সময় অর্থনৈতিক অভিঘাত থেকে উত্তরণে আমরা ১৫ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ ২৩টি প্রণোদনা প্যাকেজ প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।

‘তার সরকারের দেয়া প্রণোদনা প্যাকেজগুলো অত্যন্ত সন্তোষজনকভাবে এগিয়ে চলছে, উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ২৩টি প্যাকেজের এক লাখ ২৮ হাজার ৪৪১ কোটি টাকার বিপরীতে মে ২১ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হার ৭১ দশমিক ৫০ শতাংশ। এ পর্যন্ত ছয় কোটি পাঁচ লাখ ব্যক্তি এবং এক লাখ ছয় হাজার প্রতিষ্ঠান সরকারের এসব উদ্যোগের মাধ্যমে প্রত্যক্ষভাবে উপকৃত হয়েছে।

প্যাকেজ কার্যক্রম চলমান থাকায় উপকারভোগীর সামনে আরও বাড়বে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সেবা খাতের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে ৪১ হাজার কোটি টাকা স্বল্পসুদে ঋণসুবিধা প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে গত মে পর্যন্ত তিন হাজার ২৮৮ হাজার প্রতিষ্ঠানকে ৩২ হাজার ৫৩৬ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। কুটির ও মাঝারি শিল্পের মধ্যে ২০ হাজার কোটি টাকার তহবিলের মধ্যে মে মাস পর্যন্ত ৯৬ হাজার ৬৭৫টি এসএমই প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ১৪ হাজার ৭৭২ কোটি টাকা স্বল্পসুদে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। যার মধ্যে পাঁচ হাজার ২৫৩ জন নারী উদ্যোক্তা রয়েছেন।

কোভিড-১৯ এ সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় তার সরকার আগেই বিস্তারিত পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে এবং সব কাজ গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার ব্যয় বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকার ব্যাংক ব্যবস্থাপনা থেকে স্বল্প সুদে ঋণ সুবিধা প্রদান, সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম বৃদ্ধি ও বাজারে মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি করার উদ্যোগ নিয়েছে যার অন্যতম লক্ষ্য পুনরুদ্ধার কার্যক্রমের মাধ্যমে জনগণকে সুরক্ষা দেয়া এবং সব শ্রেণির মানুষ যাতে সুবিধা পায় সেই ব্যবস্থা করা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসের ফলে দেশের আমদানি-রপ্তানিসহ অর্থনীতির ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়ে, বিভিন্ন সেক্টরে এর প্রভাব দেখা দেয়। এই পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্যই সরকার প্রতিরোধমূলক নানাবিধ সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, করোনা আক্রান্তদের সেবায় সরাসরি নিয়োজিত চিকিৎসক, নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের দুই মাসের সমান বেতনের সমপরিমাণ বিশেষ সম্মানী দেয়া হয়েছে। এতে ২০ হাজার ৫০০ স্বাস্থ্যকর্মীকে ১০৪ কোটি টাকা সম্মানী প্রদান করা হয়েছে। পাশাপাশি করোনা সেবায় সরাসরি সম্পৃক্ত বিভিন্ন সেক্টরের কর্মচারীদের মধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারী ১৭৩ জনের পরিবারকে ৬৯ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, বাণিজ্যিক ব্যাংকে ঋণের বিপরীতে এক হাজার ২৯০ কোটি টাকা সুদ ভর্তুকি প্রদান করা হয়েছে। অতীতে দেশে কখনো সুদ ভর্তুকি দেয়া হয়নি। এতে ৭২ লাখ ৮০ হাজার ঋণগ্রহীতা সুবিধা পেয়েছেন।

ফলে দুর্যোগের সময় জনগণের জীবন ও জীবিকা যেমন রক্ষা করা গেছে তেমনি দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডও সচল রাখা সম্ভব হয়েছে, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের পদক্ষেপে দেশের অর্থনীতি সার্বিকভাবে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাব সত্ত্বেও সরকারের বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজের ফলে দেশের অর্থনীতি পূর্ণাঙ্গ পুনরুদ্ধারের পথে রয়েছে।

সংসদের চলতি অধিবেশনে করোনার মধ্যে তার সরকারের ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট প্রদান প্রসঙ্গে সংসদ নেতা বলেন, এ বাজেটে করোনার সেকেন্ড ওয়েভ মোকাবিলা, জীবন-জীবিকা সুরক্ষা এবং মহামারির অর্থনৈতিক প্রভাব দৃঢ়তার সঙ্গে কাটিয়ে ওঠার ওপর প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

তিনি বলেন, এই বাজেট বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে দারিদ্র্য বিমোচনসহ আমাদের উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে।

সরকার প্রধান বলেন, আমরা উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন চাই। আমরা প্রবৃদ্ধি চাই। আবার সমাজের দরিদ্র মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ঘটাতে চাই। প্রবৃদ্ধির সুফলটা যেন তৃণমূলের মানুষ পায় সেটাই চাই।

করোনায় বন্ধুপ্রতিম দেশ ও সংস্থাকে বাংলাদেশ পাশে পেয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহামারি নিয়ন্ত্রণে সরকারের উদ্যোগ ও প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ অর্থবছরে ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাজেট সহায়তা ঋণ পেয়েছি। ২০২১-২২ অর্থবছরে আরও প্রায় দুই বিলিয়ন ডলারের বাজেট সহায়তা আমরা পেতে যাচ্ছি। ভ্যাকসিন সাপোর্ট বাবদ আরও দুই বিলিয়ন ডলার সহায়তার আশ্বাস পেয়েছি।

তিনি বলেন, বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি অনেক বৃদ্ধি পাওয়ায় এ সহায়তা পাওয়া সহজ হয়েছে। বাংলাদেশকে বিপুল বৈদেশিক সহায়তা প্রদানের জন্য সব উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ও বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

সূত্র: বাসস।

RELATED ARTICLES
Continue to the category

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments