Sunday, May 19, 2024
HomeScrollingশিবচরে বৃদ্ধ মাকে রাস্তার পাশে ফেলে গেলো তারই মেয়ে!

শিবচরে বৃদ্ধ মাকে রাস্তার পাশে ফেলে গেলো তারই মেয়ে!

মাদারীপুর প্রতিনিধি।।
৯০ বছরের বেশি নিজের গর্ভধারিনী মাকে রাস্তার পাশে ফেলে গেছে তারই মেয়ে! ঢাকায় নিজের বাসা থেকে এনে গ্রামের বাড়ির কাছাকাছি সড়কের পাশে একটি ব্যাগ দিয়ে ফেলে রেখে যায় ওই বৃদ্ধাকে। সন্ধ্যার দিকে রাস্তার পাশে পরে থাকতে দেখে এক ভ্যানচালক ওই বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসে। পরে খোঁজ-খবর নিয়ে বৃদ্ধার নাতনীর বাড়িতে পৌছে দেয় তাকে। ঘটনাটি মাদারীপুর জেলার শিবচরে গত এক সপ্তাহ আগে ঘটলেও জানাজানি হয় শুক্রবার(২৬ ফেব্রয়ারী)। হতভাগ্য অসহায় ওই বৃদ্ধার নাম সাম্প্রীয় বৈরাগী(৯৫)।

বৃদ্ধা সাম্প্রীয় বৈরাগী ও তার পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, শিবচর উপজেলার শিরুয়াইল ইউনিয়নের সাদেকাবাদ গ্রামের মৃত্যু রাজমোহন বৈরাগীর স্ত্রী সাম্প্রীয় বৈরাগী। প্রায় ত্রিশ বছর আগে তার স্বামী রাজমোহন বৈরাগী দুই মেয়ে ও তিন ছেলে রেখে মারা যান। তিন ছেলের মধ্যে বড় ছেলে কুমোদ বৈরাগী গত ১৯ বছর আগে মারা যায়। মেঝো ছেলে স্বত্ব বৈরাগী বর্তমানে কিডনী রোগে আক্রান্ত হয়ে শয্যাসায়ী। অন্যদিকে ছোট ছেলে নিত্য বৈরাগী কলকাতায় থাকেন। ছোট মেয়ে স্বরসতী স্বামীর সাথে কলকাতার স্থায়ী বাসিন্দা। পরিবারের সাথে তাদের কোন যোগাযোগ নেই। আর সাম্প্রীয় বৈরাগীর বড় মেয়ে পার্বতী মন্ডল ঢাকার আগারগাও থানার তালুকদার রোড এলাকার চতুর্থ তলার একটি ফ্লাটে স্বামীর সাথে বসবাস করেন। তার স্বামী দিনা মন্ডলের রয়েছে লোহার গ্রীলের ব্যবসা। গত প্রায় ৪ বছর আগে পার্বতী তার মা সাম্প্রীয় বৈরাগীকে নিজের কাছে রাখার জন্য গ্রামের বাড়ি শিবচরের সাদেকাবাদ থেকে ঢাকায় নিয়ে যায়।

প্রথম অবস্থায় মেয়ের বাসায় সুখ ও শান্তিতেই ছিলেন সাম্প্রীয় বৈরাগী। তবে করোনা পরিস্থিতি শুরুর পর থেকে বৃদ্ধা মায়ের স্থান হয় ঘরের একটি কক্ষের বেলকোনিতে। অবশেষে গত ১৮ ফেব্রুয়ারী বৃহস্পতিবার মেয়ে পার্বতী মন্ডল ঢাকা থেকে একটি গাড়িতে করে বৃদ্ধা মা সাম্প্রীয় বৈরাগীকে গ্রামের বাড়ি শিবচরের সাদেকাবাদ এলাকায় নিয়ে এসে বাড়িতে নেয়ার পরিবর্তে ঐ এলাকার একটি কাঁচা রাস্তার পাশে ফেলে রেখে দিয়ে ঢাকায় ফিরে যায় ।

রাস্তার পাশে পড়ে কাঁদছিল অসহায় সাম্প্রীয়। পরে সন্ধ্যার দিকে ভ্যান চালক আনোয়ার মিয়া তাকে দেখতে পেয়ে নিজ বাড়িতে নিয়ে যায়। পরে বৃদ্ধা সাম্প্রীয় মাদবরচর ইউনিয়নের ডাইয়ারচর গ্রামের তার বড় ছেলের মেয়ে নাতনী রিতা রানী মন্ডলের শশুর বাড়ির কথা বলে। পরের দিন শুক্রবার(১৯ ফেব্রুয়ারি) ভ্যান চালক আনোয়ার হোসেন বৃদ্ধা সাম্প্রীয়কে তার নাতিন জামাই ডাইয়ারচর গ্রামের দয়াল মন্ডলের ছেলে জগদীশ মন্ডলের বাড়িতে পৌছে দেয়। সেখানেই নাতনির আশ্রয়ে আছেন সাম্প্রীয় বৈরাগী।

ভ্যান চালক আনোয়ার মিয়া বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সাদেকাবাদ রাস্তার পাশে মায়ের বয়সী বৃদ্ধাকে পড়ে থাকতে দেখে অসুস্থ্য অবস্থায় উদ্ধার করে আমার বাড়ীতে নিয়ে যাই। সে তার নিকটতম এক আত্মমীয় মাদবরচর ইউনিয়নের ডাইয়ার চর গ্রামের জগনাথ মন্ডলের কথা বলে। তাই শুক্রবার সকালে আমি তাকে তার আত্মীয়ের বাসায় পৌছে দেই।’

বৃদ্ধার নাতিন জামাই জগদীশ মন্ডল বলেন, ‘পৃথিবীতে সন্তান দেখেছি। এত নিষ্ঠুর সন্তান কোথাও দেখিনি। প্রায় শতবর্ষী বৃদ্ধা মাকে কিভাবে রাস্তার পাশে ফেলে দিয়ে গেল। এটা আমি বুঝে উঠতে পারছি না।’

বৃদ্ধার নাতনী রিতা রানী মন্ডল বলেন, নিজের বয়স্ক ভাতার টাকা উত্তোলন করে আমার দাদী তার এই মেয়েকে দিয়েছে। সেই মেয়ে মাকে নিজের বাসায় নিয়ে অনেক কষ্ট দিয়েছে। যদি নিজের মায়ের ভরন পোষনের এতই কষ্ট হচ্ছিল তাহলে আমার বাড়িতে রেখে গেলেও পারতো। তা না করে রাস্তায় ফেলে গেলো কেন? আমি এর বিচার চাই।’

সাম্প্রীয় বৈরাগী বলেন, মেয়ের বাসায় চার বছর ধরে ছিলাম। করোনার পর থেকে ফ্লাটের খোলা বেলকনিতে থাকতে হয়েছে। কষ্ট সহ্য করতে না পেরে রাত জেগে একা একা কান্না করেছি। আমার পেটের মেয়ে আমাকে গাড়িতে করে তুলে এনে রাস্তার পাশে এভাবে ফেলে যাবে কখনো বুঝতে পারিনি। তবুও চাই ওরা সুখে থাকুক!’

বৃদ্ধার মেয়ে পার্বতী মন্ডলের স্বামী দিনা মন্ডলের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায় নি।

 

RELATED ARTICLES
Continue to the category

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments