Friday, April 26, 2024
HomeScrollingহোমিওপ্যাথ ও ইউনানিতে ‘ডাক্তার’ পদবি ব্যবহার বেআইনি

হোমিওপ্যাথ ও ইউনানিতে ‘ডাক্তার’ পদবি ব্যবহার বেআইনি

হোমিওপ্যাথি, ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা শাস্ত্রে ডিগ্রিধারীদের নামের আগে ‘ডাক্তার’ পদবি ব্যবহার বেআইনি বলে রায় দিয়েছে উচ্চ আদালত। এ সংক্রান্ত রিট আবেদনের ওপর জারি করা রুল খারিজ করে বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দিয়েছে। ৭১ পৃষ্ঠার রায়টি বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়।

এর আগে গত বছরের ১৯ নভেম্বর রায় ঘোষণা করেছিল হাইকোর্টের এই বেঞ্চ। পূর্ণাঙ্গ রায়টি লিখেছেন বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল। তাতে একমত পোষণ করেন বেঞ্চের অপর বিচারপতি রাজিক আল জলিল।

রায়ে পাঁচ হাজার বছরের প্রাচীন বিকল্পধারা চিকিৎসা (অলটারনেটিভ কমপ্লিমেন্টারি মেডিসিন) পদ্ধতির এসব চিকিৎসা শাস্ত্রে  ডিগ্রিধারী ও পেশাধারীরা নামের আগে ইন্টিগ্রেটেড ফিজিশিয়ান, কমপ্লিমেন্টারি ফিজিশিয়ান, ইন্টিগ্রেটেড মেডিসিন প্র্যাকটিশনার এবং কমপ্লিমেন্টারি মেডিসিন প্র্যাকটিশনার পদবি ব্যবহার করতে পারেন বলে মত দিয়েছে হাইকোর্ট।

হোমিওপ্যাথি, ইউনানি, আয়ুর্বেদ ও আকুপাংচার চিকিৎসার মতো বিকল্পধারার চিকিৎসার গুরুত্ব উল্লেখ করে এসব চিকিৎসা শাস্ত্র নিয়ে পরিকল্পনা, আইন প্রণয়নসহ প্রয়োজনে পৃথক মন্ত্রণালয় গঠনের পরামর্শ ও অভিমত দিয়েছে হাইকোর্ট।

আইনজীবী সূত্রে জানা গেছে, ভলান্টারি অর্গানাইজেশন ন্যাশনাল মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ নামে একটি সংগঠনের সদস্যরা বিকল্পধারার চিকিৎসা শাস্ত্রের চিকিৎসক হয়েও ডাক্তার পদবি ব্যবহার করায় তাতে আপত্তি জানায় বিএমডিসি। পরে সংগঠনের সদস্যরা এ পদবি ব্যবহারের নির্দেশনা চেয়ে ২০১৯ সালে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। এর প্রেক্ষিতে জারি করা রুল খারিজ করে এ রায় দিল হাইকোর্ট।

রিটকারীপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম। অপরপক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার তানজীব-উল আলম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ওয়ায়েস আল হারুনী।

পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, দুঃখজনকভাবে এটি লক্ষণীয় যে, বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) আইন, ২০১০ এর ২৯ ধারা অনুযায়ী বিএমডিসি এর নিবন্ধনভুক্ত মেডিকেল বা ডেন্টাল ইনস্টিটিউট কর্তৃক এমবিবিএস অথবা বিডিএস ডিগ্রিধারী ছাড়া অন্য কেউ তাদের নামের পূর্বে ডাক্তার (ডা.) পদবি ব্যবহার করতে পারবেন না। সেখানে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের  স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের ২০১৪ সালের ৯ মার্চ তারিখের সংশোধিত বিজ্ঞপ্তিতে ‘অলটারনেটিভ মেডিকেল কেয়ার’ শীর্ষক অপারেশনাল প্ল্যানের বিভিন্ন পদে কর্মরত হোমিওপ্যাথি, ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক কর্মকর্তাদের স্ব-স্ব নামের পূর্বে ডাক্তার (ডা.) পদবি সংযোজনের অনুমতি দিয়েছে, যা এক কথায় আইনের কর্তৃত্ব ব্যতীত তথা বেআইনি।

রায়ে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক বোর্ড কর্তৃক ২০২০ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে বিভিন্ন শাখায় হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকদের তাদের নামের পূর্বে পদবি হিসেবে ডাক্তার (ডা.) ব্যবহারের অনুমতি দেওয়াও বেআইনি।

আদালত বলে, বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি পাঁচ হাজার বছরের প্রাচীন। সুতরাং পাঁচ হাজার বছর যাবৎ সমগ্র পৃথিবীতে চলে আসা প্রাচীন বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতির যথাযথ এবং সঠিকভাবে পঠন এবং প্রশিক্ষণ জনমানুষের সামগ্রিক চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়ন করবে। প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতি তথা পশ্চিমা চিকিৎসা পদ্ধতি আইনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হওয়া শুরু হয় আজ থেকে মাত্র ১৬২ বছর আগে। অপরদিকে পাঁচ হাজার বছর আগে থেকে মানুষ বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করে আসছে।

আদালত বলে, প্রচলিত বা পশ্চিমা বা ওয়েস্টার্ন চিকিৎসা পদ্ধতির সঙ্গে সঙ্গে বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতিও আমাদের গ্রহণ করতে হবে। এ ছাড়া বর্তমানে প্রচলিত বা পশ্চিমা চিকিৎসার সঙ্গে সম্পূরক মেডিসিন হিসেবে থেরাপির ব্যবহার হচ্ছে। এমনকি ইন্টিগ্রেটেড মেডিসিন এখন ব্যাপক আলোচনায়।

রায়ে আদালত বলে, পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় দুই তৃতীয়াংশ জনগোষ্ঠী বিকল্পধারার চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল। এর কারণ ১) সহজলভ্যতা, ২) স্বল্প খরচ ৩) অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসার তুলনায় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম এবং ৪) প্রচলিত চিকিৎসার অপ্রতুলতা  ইত্যাদি।

রায়ে বলা হয়, বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতির মধ্যে সবচে জনপ্রিয় হোমিওপ্যাথি। ১৭৯৬ সালে এর উদ্ভাবন করেন স্যামুয়েল হ্যানিম্যান। রোগীকে অল্প ওষুধ দিয়ে সুস্থ করে তোলাই হোমিওপ্যাথির মূল মন্ত্র।

আদালত বলে, বিকল্পধারা শুধুমাত্র হোমিওপ্যাথি,  ইউনানি ও আয়ুর্বেদ এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং কয়েক হাজার বছর ধরে বিভিন্ন দেশে প্রচলিত নানা চিকিৎসা ব্যবস্থান (যা শুধুমাত্র ওষুধ নির্ভর নয়) অন্তর্ভুক্ত।

রায়ে বলা হয়, সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রত্যেক নাগরিকের চিন্তা ও  বিবেকের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দান করা হয়েছে। প্রত্যেক নাগরিক তার বিবেকের মাধ্যমে এবং চিন্তার মাধ্যমে কোন পদ্ধতির চিকিৎসা তথা  প্রচলিত/পশ্চিমা/ অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা গ্রহণ করবেন নাকি বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করবেন এটি সম্পূর্ণ তার মৌলিক অধিকার।

সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে রায়ে বেশ কিছু পরামর্শ ও অভিমত দিয়েছে হাইকোর্ট। এগুলো হলো- ১) ‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’ নিশ্চিত করণে ‘কাজাখস্তান ঘোষণা’ থেকে ‘আলমাআটা ঘোষণা’ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সার্বিক পরিকল্পনা, নীতিমালা এবং প্রয়োজনীয় আইন দ্রুত প্রণয়ন ২) সার্বিক চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় তথা প্রচলিত এবং বিকল্প ধারার চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় ‘রোগী কেন্দ্রিক চিকিৎসা সেবা’ নীতিমালা অনুসরণ ৩) প্রয়োজনে বিকল্প ধারার চিকিৎসা পদ্ধতির পৃথক মন্ত্রণালয় তথা ‘মিনিস্ট্রি অব আয়ুশ গভর্নমেন্ট অব ইন্ডিয়া’র আদলে বাংলাদেশের একটি পৃথক মন্ত্রণালয় সৃষ্টি করা এবং ৪) বিকল্প ধারার চিকিৎসা শাস্ত্র সম্পর্কিত শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও সেবার মান নির্ধারণ ও উন্নয়ন এবং বিকল্প ধারার  চিকিৎসা শাস্ত্র সংশ্লিষ্ট বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও তৎ প্রদত্ত ডিগ্রিসমূহকে স্বীকৃতি প্রদান করার পদ্ধতি নির্ধারণ।

RELATED ARTICLES
Continue to the category

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments