Friday, April 26, 2024
HomeScrollingনৌঘাঁটিতেই থাকবেন মাহিন্দা

নৌঘাঁটিতেই থাকবেন মাহিন্দা

অনলাইন ডেস্ক |

শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আগ পর্যন্ত দেশটির ত্রিনকোমালি শহরের উপকূলের নৌবাহিনীর ঘাঁটিতেই সপরিবারে থাকবেন শ্রীলঙ্কার সদ্য পদত্যাগ করা প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাক্ষে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর ত্রিনকোমালি ত্যাগ করবেন তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা।

কিন্তু তারপর কোথায় থাকবেন- সেটি নির্ভর করছে মাহিন্দা ও তার পরিবারের সদস্যদের ইচ্ছার ওপর। তবে যতদিন তিনি নৌঘাঁটিতে থাকবেন, ততদিন শ্রীলঙ্কার সামরিক বাহিনী তাকে পূর্ণ নিরাপত্তা দেবে।

বুধবার শ্রীলঙ্কার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব কমল গুণারত্নে সংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন।

ব্যাপক গণবিক্ষোভের মুখে গত সোমবার দেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন ৭৬ বছর বয়স্ক মাহিন্দা রাজাপাক্ষে। কিন্তু তার পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার আগে সোমবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন টেম্পল ট্রিজের সামনে সরকারবিরোধী আন্দোলনকারীদের ওপর চড়াও হয়েছিল মাহিন্দার সমর্থকরা। তাদের হামলায় বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারী আহত হন।

এ ঘটনা উত্তেজিত জনতাকে আরও ক্ষুব্ধ করে তোলে। সোমবার সন্ধ্যার পর শ্রীলঙ্কার উত্তর পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর কুরুনেঙ্গালায় মাহিন্দা রাজাপাক্ষের ব্যক্তিগত বাসভবন আগুনে পুড়িয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। কাছাকাছি সময় হামলা হয় বেশ কয়েকজন মন্ত্রী-এমপির বাসভবনে। সেসব বাসভবনও পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

তারপার সোমবার দিবাগত রাতে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন টেম্পল ট্রিজে হামলা চালায় বিক্ষোভকারীরা। সোমবার মধ্যরাতের দিকে টেম্পল ট্রিজের ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়েন হাজারো বিক্ষোভকারী। এ সময় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভবনের দ্বিতীয় তলায় আশ্রয় নেন মাহিন্দা রাজাপাক্ষে।

পরে সামরিক বাহিনীর সদস্যরা বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেন এবং রাজাপাক্ষে ও তার পরিবারের সদস্যদের টেম্পল ট্রিজ ত্যাগের ব্যবস্থা করেন। সেই অনুযায়ী, মঙ্গলবার ভোরে সশস্ত্র বাহিনীর হেলিকপ্টারে করে সপরিবারে কলম্বো ছাড়েন শ্রীলঙ্কার সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজপাক্ষে।

শ্রীলঙ্কার রাজনীতিতে রাজাপাকসে পরিবার অত্যন্ত প্রভাবশালী। গত ২০ বছর ধরে দেশটির রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছেন এই পরিবারের সদস্যরা। এই পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্য ৭৬ বছর বয়সী মাহিন্দা রাজাপাকসে ২০০৪ সালে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। তারপর ২০০৫ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত দেশের প্রেসিডেন্ট ছিলেন, ২০১৯ সালে ফের প্রধানমন্ত্রী হন।

শ্রীলঙ্কার বর্তমান প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাক্ষে তার আপন ছোট ভাই।

গত ৫ মার্চ শ্রীলঙ্কার মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের পদত্যাগের আগ পর্যন্ত রাজাপাক্ষে পরিবারের আরও ৩ জন সদস্য সরকারে ছিলেন। এরা হলেন বাসিল রাজাপাক্ষে (অর্থমন্ত্রী), চামাল রাজাপাক্ষে (সেচমন্ত্রী) ও মাহিন্দার ছেলে নামাল রাজাপাক্ষে (যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী)।

শ্রীলঙ্কার সংবাদমাধ্যমগুলোর বরাত দিয়ে ভারতীয় বার্তাসংস্থা এএনআই জানিয়েছে, ইতোমধ্যে দেশটির বেশ কয়েকজন সাবেক মন্ত্রী ও এমপি গোপনে দেশত্যাগ করেছেন।

করোনা মহামারি, উচ্চাভিলাষী ও অলাভজনক বিভিন্ন প্রকল্পে সরকারের বিনিয়োগ, ত্রুটিপূর্ণ কূটনীতি ও সরকারি অব্যবস্থাপনার কারণে শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ব্যাপকভাবে কমে গেছে। ফলে অনেকদিন ধরে জ্বালানি তেল, খাদ্য, ওষুধসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য আমদানি করতে পারছে না দেশটি।

পাশপাশি, ঝড়ের গতিতে বাড়তে থাকা মুদ্রাস্ফীতির প্রভাবে দক্ষিণ এশিয়ার এই দ্বীপরাষ্ট্রে শুরু হয় ভয়াবহ আর্থিক ও মানবিক সংকট।

মাসের পর মাস ধরে এই অবস্থা চলতে থাকায় এক পর্যায়ে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে শ্রীলঙ্কার জনগণ। গত মার্চ থেকে শ্রীলঙ্কার ছোট-বড় সব শহরে শুরু হয় সরকারবিরোধী বিক্ষোভ। তাদের দাবি, প্রেসিডেন্ট-প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সবাইকে পদত্যাগ করতে হবে।

জনগণের দাবি আংশিক মেনে নিয়ে মার্চের প্রথম সপ্তাহে একসঙ্গে পদত্যাগ করেন মন্ত্রিপরিষদের সব সদস্য। তারপর সোমবার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাক্ষের অনুরোধে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান মাহিন্দা রাজাপাক্ষে। ইতোমধ্যে সর্বদলীয় সরকার গঠনের জন্য বিরোধী বিভিন্ন দলের সঙ্গে আলোচনায় বসার আগ্রহ জানিয়েছেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট।

কিন্তু কোনো কিছুতেই কমছে না জনগণের বিক্ষোভ। এদিকে, আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন দাতাসংস্থা শ্রীলঙ্কা সরকারকে শর্ত দিয়েছে- পরিস্থিতি শান্ত না হলে আর্থিক সহায়তা মিলবে না।

RELATED ARTICLES
Continue to the category

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments