Saturday, April 20, 2024
HomeScrolling‘জীবনযুদ্ধে পার পাই না, করোনার সঙ্গে কী যুদ্ধ করব’

‘জীবনযুদ্ধে পার পাই না, করোনার সঙ্গে কী যুদ্ধ করব’

মেহেদী হাসান সোহাগ, মাদারীপুর|

মহামারি করোনায় মরছে মানুষ। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ। সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার দূরপাল্লার বাসসহ বন্ধ রেখেছে নৌ ও রেল। তবু মানুষ ঢাকা ছাড়ছে। করোনার ভয়কে উপেক্ষা করে কয়েক হাজার যাত্রীর ফেরি করে পদ্মা পাড়ি দেওয়ার খবর নিয়ে শনিবার দিনভর আলোচনা।

কিন্তু কেন এমন গাদাগাদি করে, অনেক কষ্ট করে ঢাকা ছাড়ছেন তারা। সে উত্তরই যেন পাওয়া গেল আনোয়ার নামে এক যাত্রীর কাছে।

এ মহামারি করোনার সময় কেন ঢাকা না থেকে বাড়ি যাচ্ছেন তিনি, জানতে চাইলে জানান, ‘ভাই মরলে বাড়ি গিয়ে মরি, ঢাকা থেকে না খেয়ে মরার চেয়ে ভালো। আর করোনা কী?  জীবনযুদ্ধ করেই পার পাই না করোনার সঙ্গে কী যুদ্ধ করব।’

তিনি বলেন, ‘এরপর দেখেন ইনকাম নেই তেমন। ঢাকা থেকে বাড়ি পৌঁছাতে মনে হয় তিন হাজার টাকা শেষ হয়ে যাবে। কী দরকার এসব বন্ধ আর খোলা খেলা খেলে?’

সরেজমিনে দেখা যায়, শুক্রবার হঠাৎ করেই ফেরি বন্ধের ঘোষণার খবর না পেয়ে হাজার হাজার যাত্রী শনিবার ভোরে এসে ভিড় জমায় শিমুলিয়া ঘাটের পদ্মার পাড়ে। রোদের তাপ বাড়তে থাকে। বাড়তে থাকে অস্থিরতা। পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে যাত্রী, অ্যাম্বুলেন্স ও ছোট গাড়ির সংখ্যাও।

একই চিত্র দেখা গেছে শিবচরের বাংলাবাজার ঘাটেও।

ফেরি ছাড়বে কিনা তখনো জানা নেই কারো। যাত্রীর চাপে সকাল ৯টার দিকে একটি রোরো ফেরি সহস্রাধিক যাত্রী নিয়ে বাংলাবাজার ঘাটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। দুপুর ১টার দিকে ফেরিটি শিবচরের বাংলাবাজার ঘাটে এসে নোঙর করে। এ ছাড়া বাংলাবাজার ঘাট থেকে অ্যাম্বুলেন্স ও জরুরি কিছু গাড়ি পার করার জন্য একটি ফেরি পন্টুনে প্রস্তুত করলে প্রায় এক হাজার যাত্রী তাতে ওঠেন। পরে ঘাট কর্তৃপক্ষ কিছু যাত্রী নামিয়ে অ্যাম্বুলেন্স ওঠার ব্যবস্থা করে দেয়। কুমিল্লা নামের আরেকটি ফেরি দুপুরের দিকে শিমুলিয়ার উদ্দেশ্যে বাংলাবাজার ঘাট ছেড়ে যায় বলে ঘাট সূত্রে জানা গেছে।

এ ছাড়া জানা যায় সকাল ৯টার একটি ফেরি ছাড়ার পর যাত্রীদের নিয়ে আরো দুটি ফেরি শিমুলিয়া ঘাট থেকে ছেড়ে আসে।

তবে কর্তৃপক্ষ জানায়, শুধু যাত্রী নয় ছোট গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্স থাকায় আরো দুটি ফেরি ছাড়া হয়েছে।

যাত্রীরা জানান, গণপরিবহন বন্ধ থাকায় পদ্মা পার হয়ে আসা দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়ছেন শিবচরের বাংলাবাজার ঘাটে এসে। বাস বন্ধ, কয়েকটি মাইক্রোবাস রয়েছে। এ ছাড়া থ্রি-হুইলার (মাহিন্দ্রা ও ইজিবাইক) ও মোটরসাইকেল রয়েছে ঘাটে। পরিবার-পরিজন নিয়ে আসা যাত্রীরা ঘাট এলাকায় এসে গাড়ি না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন। মাইক্রোবাসে বরিশাল যেতে ভাড়া নিচ্ছে এক হাজার টাকা করে আর মোটরসাইকেলে নিচ্ছে দেড় হাজার টাকা। এ ছাড়া দূরপাল্লায় থ্রি হুইলার সাধারণত যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে ঘাটে গাড়ির তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে।

জাকির নামে এক যাত্রী বলেন, ‘শিমুলিয়া ঘাটে ভোরে এসেছি। আর দুপুরে এসে পৌঁছালাম বাংলাবাজার ঘাটে। ফেরি ছাড়বে না ছাড়বে না করে একটা ফেরি ছাড়ল। হাজার হাজার যাত্রী নিয়ে। এখন এই পাড়ে এসে তো বাড়ি যাওয়ার গাড়ি পাচ্ছি না। বাস তো বন্ধই। মাইক্রোবাসও নাই। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে আছি। কীভাবে বাড়ি যাব জানি না। রোজা রেখে এত কষ্ট সহ্য করা যায় না।’

নাজমুল মোড়ল নামে পটুয়াখালীর যাত্রী বলেন, ‘ঈদের আগে বাড়ি যেতে হয়। বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা-মা আছেন। আজকে পদ্মা পার হতে যে দুর্ভোগ হয়েছে তা আর এ জীবনে হয় নাই। সরকারি সিদ্ধান্তের কোনো কিছু বুঝি না। ফেরি চলবে না তা একদিন আগেই জানিয়ে দিত। আবার বন্ধ ঘোষণার পরও তো ফেরি চলেছে। এদিকে মার্কেট খোলা। ঢাকায় গাড়ি চলছে। অথচ দূরপাল্লার পরিবহন বন্ধ। ঘাটে নেমে এক শ টাকার ভাড়া পাঁচ শ টাকা দিয়ে যেতে হচ্ছে। তা ছাড়া আরো দূরের যাত্রীরা তো গাড়িই পাচ্ছে না।’

বিআইডব্লিউটিসি’র বাংলাবাজার ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক মো. সালাহউদ্দিন আহমেদ জানান, ‘অ্যাম্বুলেন্স ও জরুরি গাড়ি পার করার জন্য ফেরি খুলে দিলে যাত্রীরা গিয়ে উঠে পড়ে। ঘাট এলাকায় অসংখ্য যাত্রী রয়েছে। তাদের ঠেকানো যাচ্ছে না।’

শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘ফেরি চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে ক্রিটিক্যাল রোগীদের পার হওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্সগুলো সকালে একটি ফেরিতে ওঠানোর চেষ্টা হয়। কিন্তু যাত্রীদের চাপে ব্যর্থ হলে ফেরিটি বন্ধ রাখা হয়। পরে চেষ্টা করে ঘাটে আটকে থাকা অ্যাম্বুলেন্স পার করা হয়েছে। তবে এরপরই যাত্রীদের চাপ বেশি থাকায় একটি রোরো ফেরি তাদের নিয়ে বাংলাবাজার ঘাট ছেড়ে গেছে বলে আমি জানতে পেরেছি। তবে এ বিষয়ে ফেরি কর্তৃপক্ষ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। তারা হয়তো বিআইডব্লিউটিসি’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ফেরিটি ছেড়েছে’।

RELATED ARTICLES
Continue to the category

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments