মাদারীপুরের সদর উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে সদস্য (মেম্বার) প্রার্থীকে না জানিয়ে ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে ভোটার এলাকার নাম পরিবর্তন করে অন্য এলাকায় স্থানান্তর করার অভিযোগ উঠেছে বর্তমান সদস্যের বিরুদ্ধে।
মাদারীপুর সদর মোস্তফাপুর ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের বর্তমান সদস্য মো. মুনজুর হোসেন মিন্টুর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তোলেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হাবিব হাওলাদার।
হাবিব হাওলাদার অভিযোগ করে বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে আমার এলাকায় মাদকের বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছি। এলাকার জনগণ চাওয়ায় আমি ৪ নং ওয়ার্ডে সদস্য পদে নির্বাচন করতে চাচ্ছি। কিন্তু বুধবার দুপুরে আমার ভোটার তালিকা তুলতে গিয়ে দেখি আমার ভোট আমার এলাকা বড়মেহেরের (৪ নং ওয়ার্ডে) তালিকায় নেই। আমাকে পাশের চাপাতলী গ্রামে (৫ নং ওয়ার্ডে) পরিবর্তন করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কিন্তু আমি কখনো পরিবর্তন করতে কোনো আবেদন করিনি। তা ছাড়া আমার পরিবর্তন করার কোনো প্রয়োজন নেই। আমার পূর্বপুরুষরা এমনকি আমিও বড়মেহের হাওলাদার বাড়িতে বসবাস করি।
এরপর আমি উপজেলা নির্বাচন অফিসারের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, এটা নাকি আমিই নিজে করছি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিয়ে। পরে কাগজপত্রগুলো দেখে বুঝলাম এবং জানতে পারলাম, ১৭ দিন আগে ১১ অক্টোবর মো. রমিজ মিঞা শনাক্তকারী হয়ে আমার নামে ভুয়া চেয়ারম্যান সনদ দিয়ে এবং ভুয়া স্বাক্ষর দিয়ে মস্তফাপুর ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের ভোটার থেকে ৫ নং ওয়ার্ড স্থানান্তর করা হয়েছে। প্রার্থী হাবিব হাওলাদার
তিনি বলেন, ভোটার পরিবর্তন করতে একটি বিদ্যুৎ বিলের (হিসাব নং- ২২৩-৬৮৫০) কাগজ ব্যবহার করা হয়েছে। ভোটার তালিকায় এলাকা পরিবর্তন করতে একটি নম্বর (০১৭৬০০৬৫১৭৫) ব্যবহার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমার ধারণা, আমার প্রতিপক্ষ বর্তমান মেম্বার মো. মুনজুর হোসেন মিন্টু এ কাজটি করেছে। আমি যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারি, এ জন্য সে এ ষড়যন্ত্র করেছে। আমি বিষয়টি জেলা ও উপজেলা নির্বাচন অফিসারকে জানিয়েছি। তারা আমার কাছ থেকে পুনরায় আবেদন নিয়ে সংশোধন করার কথা বলেছেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত বর্তমান ইউপি সদস্য (৪ নং ওয়ার্ড) মো. মুনজুর হোসেন মিন্টু বলেন, যে বা যারা এটা করেছে, তাদের আমি ধিক্কার জানাই। আর এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না।
মস্তফাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হাজী আব্দুল কুদ্দুস মল্লিক জানান, ভোটারের এলাকা পরিবর্তন করতে যে চেয়ারম্যানের সনদ ব্যবহার করা হয়েছে, সেটা সম্পূর্ণ ভুয়া। আমি ওই সনদে স্বাক্ষর করিনি বা ওই স্বাক্ষর আমার না। তা ছাড়া হাবিবের এলাকা ৪ নং ওয়ার্ডে। সে কেন ৫ নং ওয়ার্ডে যাবে? এটা অবশ্যই কেউ হাবিবের সঙ্গে প্রতারণা করেছে।
তিনি আরও বলেন, আমি বিষয়টি উপজেলা ও জেলা নির্বাচন অফিসারকে জানিয়ে এই ভোটার তালিকা সংশোধন করার সুপারিশ করেছি। আশা করি সংশোধন হয়ে যাবে।
মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাচন অফিসার বিকাশ চন্দ্র দে বলেন, আমি বিভিন্ন কাগজপত্র দেখে এবং গ্রাহকের দেওয়া নম্বরে কথা বলে তারপর ভোটারের এলাকা পরিবর্তন করেছিলাম।
মাদারীপুর জেলা নির্বাচন অফিসার মো. মনিরুজ্জামান বলেন, বিষয়টি জানতে পেরে সঙ্গে সঙ্গে উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখে বুঝতে পেরেছি যে এটা প্রতারণার মাধ্যমে করা হয়েছে। আমি তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে পুনরায় তার ভোটার তালিকা আগের এলাকায় (৪ নং ওয়ার্ডে) নিয়ে আসার ব্যবস্থা নিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, এই প্রতারণার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা নির্বাচন অফিসারকে নির্দেষ দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, আগামী ২৮ নভেম্বর তৃতীয় ধাপে সদর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত। তবে এখনো প্রার্থী চূড়ান্তকরণ প্রক্রিয়া শেষ হয়নি।