Friday, April 18, 2025
HomeScrollingবয়স কমালে ভোটার সংখ্যা বাড়বে, তবে আইনি জটিলতা বাড়বে কি?

বয়স কমালে ভোটার সংখ্যা বাড়বে, তবে আইনি জটিলতা বাড়বে কি?

দেশের আইন অনুযায়ী, ভোটার হওয়ার জন্য বয়স ১৮ বছর হলেও, সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ বছর করার পক্ষে তার মতামত দিয়েছেন। ড. ইউনূসের মন্তব্যে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার ঝড় উঠেছে। প্রধান উপদেষ্টা তার বক্তব্যে বলেন, তরুণরা পরিবর্তনের প্রতি আগ্রহী এবং তাদের অধিকাংশই দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত। তাদের মতামত নেওয়ার জন্য ভোটার হওয়ার বয়স কমিয়ে ১৭ বছর করা উচিৎ।

অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেছেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভোটার হওয়ার বয়স বিভিন্ন রকম। তরুণরা দেশের পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, তাদের ভোটের সুযোগ দেওয়া উচিৎ। তরুণরা সংখ্যায় বেশি, তাদের আগ্রহ ও মতামত দেশের ভবিষ্যৎের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে, ১৭ বছর বয়সে ভোটার হওয়ার পক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন।

এদিকে, প্রধান উপদেষ্টার এই প্রস্তাবের পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এমন প্রস্তাব নির্বাচনের ওপর আরও এক ধাপ কালক্ষেপণ করতে পারে। ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ না ১৮ হবে, এটি নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের বিষয়। বিএনপি মহাসচিবের মতে—ভোটার হওয়ার বয়স কমালে তা নির্বাচনের সময়সূচি এবং কার্যক্রমের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের পর জামায়াতে ইসলামীও ১৭ বছর বয়সে ভোটার হওয়ার পক্ষে সমর্থন দিয়েছে। জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, তরুণদের আন্দোলন দেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তাদের জন্য ভোট দেওয়ার সুযোগ প্রদান একটি নৈতিক দায়িত্ব। নতুন প্রজন্ম দেশের ভবিষ্যৎ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

এদিকে, নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আগামী ২০ জানুয়ারি থেকে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম শুরু করার কথা ছিল। তবে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের পর নির্বাচন কমিশন এখন কিছুটা অনিশ্চয়তায় রয়েছে। নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ জানিয়েছেন, যদি ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ বছর করা হয়, তবে তা আইনগত পরিবর্তনের প্রয়োজন হবে। ২০ জানুয়ারির মধ্যে যদি আইনে পরিবর্তন আসে, তবে নির্ধারিত সময়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হবে, নাহলে কিছুদিন দেরি হতে পারে।

ভোটার তালিকা হালনাগাদ নিয়ে নির্বাচন কমিশন গত বছর ২ জানুয়ারি খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করে, যাতে ১ জানুয়ারি ২০২৫ যাদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হবে, তাদের তালিকাভুক্ত করা হয়। নির্বাচন কমিশন প্রতিবছর এভাবে তালিকা হালনাগাদ করে, পরে মার্চ মাসে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়। তবে, ১৭ বছর বয়সে ভোটার হওয়ার সিদ্ধান্ত হলে এটি আইনগত জটিলতা তৈরি করতে পারে, কারণ বর্তমানে ১৮ বছরের নিচে কাউকে অপ্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে গণ্য করা হয়।

নির্বাচন বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ভোটার হওয়ার বয়স কমালে আইনি অস্বস্তি তৈরি হতে পারে। সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের চেয়ারম্যান মুনিরা খান বলেন, এটি একটি জটিল বিষয়। বাংলাদেশে ১৮ বছরের নিচে কাউকে অপ্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে গণ্য করা হয়, আর ভোটার তালিকায় তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হলে নানা আইনি সমস্যা তৈরি হতে পারে।

বিশ্লেষকরা আরও উল্লেখ করেছেন, যদি ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ বছর করা হয়, তাহলে এ ব্যাপারে অন্যান্য আইন, যেমন ড্রাইভিং লাইসেন্স, বিবাহ আইনের সঙ্গে অসামঞ্জস্য তৈরি হতে পারে। এছাড়া, নতুন ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার জন্য যে সময় ও প্রক্রিয়া দরকার, তা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের সময়সূচিতে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

এছাড়া, যদি ভোটার বয়স কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তবে এটি নির্বাচনের প্রস্তুতিতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে পারে। নির্বাচন কমিশন থেকে জানা গেছে, বর্তমান ভোটার তালিকা আইন অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারি ১ তারিখে যাদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হবে, তারা ভোটার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবেন। তবে যদি ভোটার হওয়ার বয়স কমিয়ে ১৭ বছর করা হয়, তাহলে নতুন ভোটার তালিকায় আরও ৫০ থেকে ৬০ লাখ ভোটার যুক্ত হতে পারে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, এতে ভোটার সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে, তবে আইনগত পরিবর্তন হলে নতুন তালিকা তৈরি করতে কিছু সময় লাগবে।

তবে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, আমরা ২০ জানুয়ারি থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ শুরু করার প্রস্তুতি নিয়েছি। তবে আইনে যদি কোনো পরিবর্তন হয়, তবে সে অনুযায়ী আমাদের কার্যক্রমও পরিবর্তিত হবে।

নির্বাচনী বিশ্লেষক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, তরুণদের আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকার কারণে তাদেরকে ভোট দেওয়ার সুযোগ দেওয়া একটি নৈতিক দায়িত্ব। তরুণরা জেন-জি প্রজন্মের অংশ, যারা বিভিন্ন গণঅভ্যুত্থানে অংশ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

নির্বাচন কমিশন যদি ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ বছর করার জন্য প্রস্তুতি নেয়, তবে এর জন্য আইন ও সংবিধানে পরিবর্তন আনতে হবে। নির্বাচনী বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি একটি জটিল প্রক্রিয়া হতে পারে, এবং নির্বাচনের সময়সূচি এ কারণে আরও কয়েক মাস পিছিয়ে যেতে পারে।

এছাড়া, বাংলাদেশের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার সময় সাধারণত ভোটার বৃদ্ধির হার ২.৫ শতাংশ থাকে, কিন্তু যদি ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ বছর করা হয়, তাহলে এটি ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে। এর মানে, আগামী জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত নতুন ভোটারদের মধ্যে ৫০ থেকে ৬০ লাখ নতুন ভোটার যুক্ত হতে পারে। সূত্র: বিবিসি

RELATED ARTICLES
Continue to the category

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments