দেশব্যাপী কোটা সংস্কার আন্দোলনের তীব্রতায় আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের মধ্যদিয়ে, ছাত্র-জনতার সামর্থনে নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড.মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বধীন অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের মাধ্যমে বাংলাদেশর রাজনৈতিক ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা সৃষ্টি হয়েছে।
সেই সাথে শুরু হয়েছে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলনেতা-কর্মীদের ব্যানারে প্রচার-প্রচারণা,পরিচিতি এবং মতবিনিময় সভা।
তারই নেপথ্যে মুখোমুখি গোপালগঞ্জের বিএনপির দুই কেন্দ্রীয় নেতা। তাদের বিরোধীতা এখন যেন প্রকাশ্যেই।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেসবাহ্ ও বিএনপির ফরিদপুর বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিমের মুখোমুখি অবস্থানে দ্বিধায় নেতা-কর্মীরা। কেন্দ্রীয় বিএনপির দুই নেতা একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ তুলেছেন।
কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেসবাহ্ বিএনপির ফরিদপুর বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিমের বিরুদ্ধে বিএনপির নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলেছেন।
আর বিএনপির ফরিদপুর বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেসবাহ্’র বিরুদ্ধে সুবিধাবাদী আওয়ামীলীগ নেতা-কর্মীদের প্রোভাইড করার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন।
গতকাল শনিবার (১৯ অক্টোবর) দুপুরে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার ভাবরাশুর ইউনিয়নের কালীনগর উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেসবাহ্’র কর্মী ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
সভা শেষে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেসবাহ্ সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপির ফরিদপুর বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম বিএনপির নাম ভাঙ্গিয়ে এলাকার সাধারণ মানুষকে মামলা-হামলার ভয় দেখিয়ে চাঁদ আদায় করছে। নিরীহ লোকজন ভায়ে কিছু বলতে পারছে না। বিএনপি এমন কর্মকান্ড কখনই মেনে নিবে না। দলের কো-চেয়ারম্যান তারেক রহমান এমন কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, সেলিমুজ্জামান সেলিমের বিরুদ্ধে প্রধান উপদেষ্টা, বিএনপির উপদেষ্টা মন্ডলী ও সেনা-ক্যাম্পে অভিযোগ করেছে এলাকাবাসী। শুধু আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা না,অনেক ব্যবসায়ীরা রয়েছেন এমনকি অনেক বিএনপির নেতা-কর্মী রয়েছে তারা তাকে পছন্দ করে না। তাদের সবাইকে হয়রানি করছেন। এলাকার সার্বিক নিরাপত্তার জন্য দল তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং অনিয়ম, দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে।
দ্রুত নির্বাচন দেয়ার দাবি জানিয়ে সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক আরও বলেন, যত সময় যাবে সরকারের জন্য ততই সমস্যা দেখা দিতে পারে। আশা করি সরকার আগামী ৬ মাসের মধ্যে নির্বাচন দিবে। দল আমাকে গোপালগঞ্জ-১ আসন থেকে মনোনয়ন দিলে আওয়ামী লীগের এ ঘাঁটি থেকে বিএনপি জয়লাভ করবে।
এবিষয়ে মোবাইল ফোনে সাংবাদিকদের বিএনপির ফরিদপুর বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম বলেন, সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ্ এলাকার সংস্পর্শে ছিলেন না। সুবিধাবাদী আওয়ামীলীগ নেতা-কর্মীদের প্রোভাইড করার চেষ্টা করছেন। যাদের দ্বারা আমরা বিগত দিনে নির্যাতিত হয়েছি। উনি আমার বিরুদ্ধে কেন এমন কথা বললেন আমার বোধগম্য নয়। আমি দলের সঙ্গে কথা বলবো। আমার বিরুদ্ধে যদি কোন অভিযোগ থেকে থাকে তাহলে তিনি দলের হাইকমান্ডে অভিযোগ দিতে পারতেন। কিন্তু তিনি, না তা করেন নি..! কেউ বলতে পারবে না আমি চাঁদাবাজি করেছি।
তিনি আরও বলেন, আমার বিরুদ্ধে সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ্ যে কথা বলেছে তা সত্য নয়। যারা অপরাধী পুলিশ তাদের গ্রেফতার করবে,সেখানে আমি কোন হস্তক্ষেপ করি না।এমন কী কাউকে ছাড়ানোর তদবিরও করি না। আমার বিরুদ্ধে প্রধান উপদেষ্টার কাছে বেনামে একটা অভিযোগ করেছে। বেনামা অভিযোগ গ্রহণ করার কোনো সুযোগ নেই।
কালীনগর উচ্চবিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ মোঃ সেলিম ভূঁইয়া।
স্থানীয় বিএনপি নেতা দুলাল চন্দ্র মন্ডলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মী সভায় বিএনপি আইন বিষয়ক সহ-সম্পাদক সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেসবাহ্, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক অবসরপ্রাপ্ত মেজর অহিদুল হক মোল্লা, জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক এস এম সুমন,সরকারী বঙ্গবন্ধু কলেজের সাবেক ভিপি সৈয়দ কামরুজ্জামান টুটুল বক্তব্য রাখেন। এ সভায় মুকসুদপুর ও কাশিয়ানীর চব্বিশটি ইউনিয়নের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।