Saturday, March 22, 2025
HomeScrollingকালকিনিতে প্রকল্পের শিক্ষার্থীদের ভাগিয়ে নিজ ফার্মে ভর্তির অভিযোগ

কালকিনিতে প্রকল্পের শিক্ষার্থীদের ভাগিয়ে নিজ ফার্মে ভর্তির অভিযোগ

আশরাফুর রহমান হাকিম, কালকিনি(মাদারীপুর)

মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার শেখ কামাল আইটি ট্রেনিংয়ের ফ্রিল্যান্সিং ট্রেনিং সেন্টারের শিক্ষার্থীদের বেশি আয়ের লোভ দেখিয়ে নিজ ট্রেনিং সেন্টারে নিয়ে ভর্তি করান প্রশিক্ষক আবু সাঈদ নূর (রাকিব)। পরে সেই শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে টাকা হাতিয়ে নেন ও মেয়েদের কুপ্রস্তাব দেন ওই প্রশিক্ষক নুর। শিক্ষার্থীদের কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা করে দিতে না পেরে পালিয়ে যান ওই প্রশিক্ষক। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট লিখিত অভিযোগ দেয় ওই ভুক্তভোগীরা। অভিযোগ তুলে নিতে তাদের চাপ প্রয়োগ করার অভিযোগও রয়েছে ওই প্রশিক্ষকের বিরুদ্ধে। যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস উপজেলা প্রশাসনের।

জানা যায়, মাদারীপুর জেলা প্রশাসনের আই.সি.টি ডিপাার্টমেন্ট আয়োজিত কালকিনি পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে অনলাইন ড্রাপসিপিং ট্রেনিং কার্যক্রম চালু করা হয় ফেব্রুয়ারি মাসে। সংবাদ পেয়ে এই ফ্রিল্যান্সিং ট্রেনিংয়ে ভর্তি হয় কিছু শিক্ষার্থী। তাদের ফ্লিল্যান্সিং ট্রেইনার ছিলেন আবু সাইদ নুর নামে এক যুবক। ৩৫ জনের নিয়ে প্রথম ব্যাচের ক্লাস শুরু হওয়ার কিছুদিন পরে ওই প্রশিক্ষক শিক্ষার্থীদের অনলাইন ড্রাপসিপিং বিজনেস এর ব্যাপারে তার নিজের ট্রেনিং সেন্টারে ভর্তির বিষয়ে বলেন এবং এই বিজনেসে বেশি লাভবান হওয়ার প্রলোভন দেখান। এ অনলাইন বিজনেস এর বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে কিছু না বলতেও অনুরোধ করা হয়। সরকারী কোর্স করতে আগ্রহীদের তিনি আমাদের বিভিন্ন রকম হয়রানি করাতেন। পরে ওই কোর্সের ১০ জন শিক্ষার্থী ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার ব্যক্তিগত কোর্সে ভর্তি হতে বাধ্য হয়। ভর্তির সময় সব শিক্ষার্থীদের থেকে টাকা নেয় ওই প্রতারক প্রশিক্ষক। ২ মাসের মধ্যে কেউ ১শত ডলার আয় করতে না পারলে টাকা যে কোন সময়ে ফেরত দেয়ার আশ্বাস দেন তিনি। পরে শিক্ষার্থীরা ওই শর্তে রাজি হয়ে জন প্রতি ৮,৮২০ টাকা থেকে ৯,০০০ টাকা দেয়। এছাড়া আয় করতে ল্যাপটপ প্রয়োজন বলে তার থেকে ল্যাপটপ কিনে নিতেও বাধ্য করা হয়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারী মাস থেকে সেপ্টেম্বর মাস পযর্ন্ত কোনো রকম অর্থ উপার্জন এর পথ দেখাতে পারেনি তিনি। টাকার জন্য চাপ দিলে ওই প্রশিক্ষক আবু সাইদ নুর (রাকিব) অনেক মেয়েদেরকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উপায়ে কু-প্রস্তাব,আপত্তিকর কথাবার্তা বলেন এবং আপত্তিকর ছবি দেওয়ার জন্যে বলেন। কেউ রাজি না হয়ে টাকা দাবি করায় ও উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তাকে লিখিত অভিযোগ করায় বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে আসছে। এছাড়া অভিযোগ তুলে নিতেও বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিয়েই চলছে। তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানায় ওই ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা। যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ফারিয়া খাতুন বলেন, আমি শেখ কামাল আইটি ট্রেনিংয়ের ফ্রিল্যান্সিং ট্রেনিং সেন্টারের শিক্ষার্থী। কিন্তু প্রশিক্ষক আবু সাঈদ নূর (রাকিব) স্যার নিজ ট্রেনিং সেন্টারে নিয়ে ভর্তি করান এবং তিনি ভর্তির আগে আমাদের বিভিন্ন রকম প্রলোভন দেখান যে, আমরা দুই মাস কাজ করার পরে এই বিজনেস থেকে প্রায় ১০০ ডলার প্রতিমাসে অর্থ উপার্জন করতে পারব। তার এই শর্তে আমরা রাজি হয়ে জন প্রতি ৮,৮২০ টাকা (আট জন শিক্ষার্থী) থেকে ৯,০০০ টাকা (দুই জন শিক্ষার্থী) দিয়েছি। এছাড়া আয় করতে ল্যাপটপ প্রয়োজন বলে তার থেকে ও দোকান থেকে ল্যাপটপ কিনে নিতেও বাধ্য করা হয়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারী মাস থেকে সেপ্টেম্বর মাস পযর্ন্ত কোনো রকম অর্থ উপার্জন এর পথ দেখাতে পারেনি। টাকার জন্য চাপ দিলে ওই প্রশিক্ষক আবু সাইদ নুর স্যার আমাকে ও অন্য মেয়েদেরকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উপায়ে কু-প্রস্তাব,আপত্তিকর কথাবার্তা বলেন এবং আপত্তিকর ছবি দেওয়ার জন্যে বলেন। তখন আমরা মেয়েরা বিজনেস গ্রুপ থেকে বের হয়ে আমরা তার কাছে আমাদের পাওনা টাকা চাইলে আবু সাইদ নুর স্যার টাকা দিতে অস্বীকার করেন। এবং আরো বলে আপনারা আমাকে যা পারেন কইরেন এবং বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক ব্যক্তিদের কথা বলে ভয় দেখান এবং হুমকি দেন। এবিষয় গত ৫ই সেপ্টেম্বর আমরা সকলে প্রশিক্ষক আবু সাঈদ নূর (রাকিব) স্যারের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তার নিকট লিখিত অভিযোগ দেই। কালকিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করায় ওই প্রশিক্ষক বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে আসছে। এছাড়া অভিযোগ তুলে নিতেও বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিয়েই চলছে। আমিসহ সকলে আতংকের মাঝে আছি।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী শাহীন আলম বলেন, প্রশিক্ষক আবু সাইদ নুর (রাকিব) স্যার তার এ অনলাইন বিজনেস এর বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে কিছু না বলতেও অনুরোধ করেন। সরকারী কোর্স করতে আগ্রহীদের তিনি আমাদের বিভিন্ন রকম হয়রানি করেন। আমাদের বলে ৯,০০০ টাকা জমা দিয়ে বিজনেস শুরু করার ২ মাস পরে টাকা ইনকাম না করতে পারো তাহলে তোমাদের টাকা যে কোন সময়ে ফেরত নিতে পারবেন। আমাদের একজন সদস্য সাবিনা ইয়াসমিনের কাছ থেকে নগদ ৮,৮২০ টাকা নিয়েছে কিন্তু তাকে এই বিজনেসের কোন প্রকার ডোমেন বা স্টোর কিনে দেননি। আমাদের টাকা চাইলে বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক ব্যক্তিদের কথা বলে ভয় দেখান এবং হুমকি দেন। কালকিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করায় প্রশিক্ষক নুর স্যার আমার নামে থানায় মামলা দিয়েছে একথা বলে তাসরিফ নামে শিক্ষার্থীকে মামলার ভয় দেখিয়ে অভিযোগ তুলে নিতে বলেন। কালকিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি তা জানতে পেরে ওই প্রশিক্ষক নূর স্যার এলাকা থেকে পালিয়ে যায়। আমি আবু সাইদ নুর স্যারের বিচার চাই,এমনকি তিনি যেনো আমাদের মত অন্য কোন শিক্ষার্থীদের সাথে আর কখনো এমন প্রতারনা ও বাটপারি করতে না পারে। তাই তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানাই প্রশাসনের কাছে। আর আমাদের টাকা ফেরত চাই।

প্রশিক্ষক আবু সাইদ নুর (রাকিব) বলেন, আমি শেখ কামাল আইটি ট্রেনিংয়ের ফ্রিল্যান্সিং ট্রেনিং সেন্টারের প্রশিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিয়েছি।তবে আমার ভূরঘাটাতে ব্যক্তিগত অনলাইন ব্যবসার অফিস আছে। আমার অনলাইন ব্যবসায় কোন শিক্ষার্থীকে জোরপূর্ব ভর্তি করানো হয়নি,ওই শিক্ষার্থীরা ইচ্ছাকৃত ভাবে ভর্তি হয়েছে। আমার এখানে কোর্স ফি ১০,০০০ (দশ হাজার) টাকা কিন্তু ভর্তি সময় আমি ওই শিক্ষার্থীদের থেকে ৭,৭২০ টাকা করে নিয়েছি। কিন্তু আমার নামে অন্য যে অভিযোগ গুলো করার হয়েছে তা সম্পুর্ন মিথ্যা। কারন আমি কাউকে কোন প্রকার ভয় বা হুমকি দেই নাই। যেহেতু আমার বিরুদ্ধে ইউএনও স্যারের কাছে অভিযোগ করেছে সেহেতু আমি অনেক কিছুই জানি, তবে আমি তাদের বিরুদ্ধে এ্যাকশনে যাবো যদি মিথ্যা প্রমান হয়। কেউ আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিলে আমি তার বিরুদ্ধে এ্যাকশনে অবশ্যই যাবো তা আমার ফেইসবুকেও লিখে দিয়েছি। একটা কথাও ঠিক নাই, অনেক কথা ঠিক আছে আবার অনেক কথা ঠিক নাই। আমি কোন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে থানায় মামলা করি নাই। এব্যাপারে আমি ইউএনও অফিসে রবিবার (৬ই অক্টোবর) সকালে গিয়েছিলাম কিন্তু ওই শিক্ষার্থীরা আসেনি।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার দাশ বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। ওই প্রশিক্ষকের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চেষ্টা চলছে। আশা করি অল্প দিনেই ফল পাওয়া যাবে।

LN24BD/arh

RELATED ARTICLES
Continue to the category

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments