ইসলামে মানুষের জীবনের শেষ আমলটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ শেষ আমলের কারণে বদলে যেতে পারে আমলনামা। যেমন সারাজীবন গুনাহ করা লোকটিকে যদি মৃত্যুর আগে আল্লাহ তাওবার সুযোগ দেন, তাহলে সে জান্নাতবাসী হয়ে যাবে। আবার কেউ সারাজীবন ইবাদত-বন্দেগি করে মৃত্যুর আগে (নাউজুবিল্লাহ) এমন কাজে লিপ্ত হলো যে তার সারাজীবনের আমল বৃথা হয়ে গেল।
এ প্রসঙ্গে নবীজির সঙ্গে জিহাদে শামিল হওয়া এক লোকের জাহান্নামি হওয়া সংক্রান্ত দীর্ঘ হাদিসের শেষদিকে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন—إِنَّ الرَّجُلَ لَيَعْمَلُ عَمَلَ أَهْلِ الْجَنَّةِ فِيْمَا يَبْدُوْ لِلنَّاسِ وَهُوَ مِنْ أَهْلِ النَّارِ وَإِنَّ الرَّجُلَ لَيَعْمَلُ عَمَلَ أَهْلِ النَّارِ فِيْمَا يَبْدُوْ لِلنَّاسِ وَهُوَ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ ‘অনেক সময় মানুষ জান্নাতিদের মতো আমল করতে থাকে, যা দেখে অন্যরা তাকে জান্নাতিই মনে করে। অথচ সে জাহান্নামি। আবার অনেক সময় মানুষ জাহান্নামিদের মতো আমল করতে থাকে, যা দেখে অন্য মানুষও তেমনই মনে করে থাকে, অথচ সে জান্নাতি। (সহিহ বুখারি: ৪২০৩)
তাই কখনোই নিজের আমলের ওপর অহংকার করে নিজেকে জান্নাতি ব্যক্তি বা নেককার ভাবার সুযোগ নেই; বরং সর্বদা আল্লাহকে ভয় করতে হবে, নেক আমল করতে হবে এবং তাঁর রহমতের আশায় থাকতে হবে। কারণ তিনি ঈমানি মৃত্যু না দিলে সারাজীবনের সমস্ত আমল বিফলে চলে যাবে। রাসুল (স.) বলেন, ‘…তোমরা আমল করতে থাকো। কারণ যাকে যে আমলের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে, তার জন্য সে আমলকে সহজ করে দেওয়া হবে। যে ব্যক্তি সৌভাগ্যবান হবেন, তার জন্য সৌভাগ্যবান লোকদের আমলকে সহজ করে দেওয়া হবে। আর যে দুর্ভাগা হবে, তার জন্য দুর্ভাগা লোকদের আমলকে সহজ করে দেওয়া হবে। এরপর তিনি পাঠ করেন, সুতরাং কেউ দান করলে, মুত্তাকি হলে এবং যা উত্তম তা গ্রহণ করলে, আমি তার জন্য সুগম করে দেব সহজ পথ এবং কেউ কার্পণ্য করলে, নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে করলে, আর যা উত্তম তা ত্যাগ করলে, তার জন্য আমি সুগম করে দেব কঠোর পরিণামের পথ। (সহিহ বুখারি: ৪৯৪৯)
ভালো কর্মের মাধ্যমে জীবনের শেষ মুহূর্তে এসেও ভাগ্য পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন-‘… তোমাদের কেউ জান্নাতিদের আমল করে এতটুকু এগিয়ে যায় যে তার ও জান্নাতের মাঝে শুধু এক গজের দূরত্ব থাকতেই তার ওপর লিখিত তাকদির প্রবল হয়ে যায়। তখন সে জাহান্নামিদের মতো আমল করে। শেষে সে জাহান্নামে প্রবেশ করে। আবার তোমাদের কেউ জাহান্নামিদের মতো আমল করে এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে তার ও জাহান্নামের মাঝে মাত্র এক গজের দূরত্ব থাকতে তার ওপর তাকদিরের লেখা প্রবল হয়, ফলে সে জান্নাতিদের মতো আমল করে, শেষে জান্নাতেই প্রবেশ করে।’ (সহিহ বুখারি: ৭৪৫৪)
আমরা কতটুকু আমল করতে পেরেছি বা এই সংক্ষিপ্ত হায়াতে নিজেকে কতটুকু তৈরি করতে পেরেছি সেটাই এখন ভাবার বিষয়। আল্লাহ তাআলার এই বাণীটি আমাদের বারবার স্মরণ করা উচিত এবং সতর্ক হওয়া উচিত—‘মানুষের হিসাব নিকাশের সময় ঘনিয়ে এসেছে, অথচ তারা এখনো উদাসীনতার মধ্যে বিমুখ হয়ে আছে।’ (সুরা আম্বিয়া: ১)