Wednesday, May 8, 2024
HomeScrollingসাদেক কুরাইশীর মৃত্যুতে শোকার্ত ঠাকুরগাঁও

সাদেক কুরাইশীর মৃত্যুতে শোকার্ত ঠাকুরগাঁও

ঠাকুরগাঁও সংবাদদাতা।।

‘এমন জীবন তুমি করিবে গঠন, মরণে হাসিবে তুমি কাঁদিবে ভুবন’- কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখনিটি চিরকাল বাণী হয়ে রইল। এক কীর্তিমানের মরণে অশ্রুর সঞ্চার ঘটলো, কেদে উঠলো হাজারো প্রাণ। তার মৃত্যু নেই, কেবলই প্রস্থান করেন অনন্তকাল। বেঁচে থাকেন মানুষের অন্তরের অন্ত‍ঃস্থলে, মানুষের ভালোবাসায় নিমজ্জিত হয়ে থাকেন। তবে তার শূন্যতা রয়ে যায় পৃথিবীর বুকে অনন্তকাল। সেই শূন্যতায় ভুগবে এখন ঠাকুরগাঁও। মুহূর্তেই যেন নিভে গেল প্রদীপটি। যিনি নিজের মেধা, মননশীলতা সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রজ্জ্বলিত দ্বীপকে আগলে রেখেছিলেন। ঠাকুরগাঁও পৌরসভার ইসলাম নগরে বেড়ে ওঠে সমাজের গণ্ডি ছাড়িয়েও যার যশ-খ্যাতি, সেই মানুষের প্রস্থানে যেন অন্ধকারে নিমজ্জিত পুরো জেলা।

মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার উত্তরায় মেয়ের বাসায় ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ সাদেক কুরাইশী ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। তিনি স্ত্রী ও ২ কন্যা সন্তানসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী ও আত্মীয়স্বজন রেখে যান।

সাংবাদিকদের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দীপক কুমার রায় বলেন, হার্ট অ্যাটাকে তার মৃত্যু হতে পারে। তার মৃত্যুতে আমরা গভীর শোক প্রকাশ করছি এবং জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষে থেকে তিনদিনের শোক ঘোষণা করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের এই নেতার মৃত্যুর খবর প্রচারিত হওয়ার পর দলমত নির্বিশেষে সকল মহলে শোকের ছায়া নেমে আসে। খবর পেয়ে দলীয় নেতাকর্মীরা তার বাসায় ছুটে আসেন। ভিড় করছেন এলাকাবাসীরাও।

এদিকে তার মৃত্যুতে ঠাকুরগাঁও-১ আসনের সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন, ঠাকুরগাঁও-২ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মোঃ দবিরুল ইসলামসহ দলীয় নেতাকর্মীরা শোক প্রকাশ করেছেন।

আগামীকাল বুধবার (২৫ অক্টোবর) সকাল ১১ টায় ইসলাম নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে বলে নিশ্চিত করেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. আ.স.ম. গোলাম ফারুক রুবেল।

জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা জানান, মুহাম্মদ সাদেক কুরাইশী দেশ ও জনগণের কল্যাণে নিবেদিতপ্রাণ একজন নেতা ছিলেন। তিনি ছিলেন খুবই শান্তিপ্রিয়। সকল দলের নেতাদের প্রতি তিনি খুবই শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। তার কারণেই জেলায় সরকারি ও বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ছিল।

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলী আসলাম জুয়েল বলেন, সাদেক কুরাইশী ছিলেন একজন সৎ ও নির্ভীক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে উঠে তিনি মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন। তিনি ছিলেন জননেত্রী শেখ হাসিনার অত্যন্ত বিশ্বস্ত। দলের ক্রান্তিলগ্নে তিনি সাহসিকতার সাথে দলের হাল ধরেছেন।

জানা গেছে, সাদেক কুরাইশী ১৯৬০ সালের ৩১ আগস্ট ঠাকুরগাঁও পৌরসভার ইসলাম নগর খানকা শরীফে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন ইসলাম নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। এরপর ৬ষ্ঠ থেকে ৭ম শ্রেণি পড়েছেন বর্তমান ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে। ১৯৭৫ সালে ইসলাম নগর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন তিনি। ১৯৭৭ সালে ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি ও ১৯৭৯ সালে বিএ পাস করেন মুহাম্মদ সাদেক কুরাইশী। সরকারি কলেজে অধ্যায়নরত অবস্থায় ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন তিনি।

তিনি ১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমানের সামরিক আইন জারির সময় গণতন্ত্রের জন্য ছাত্রদের সুসংগঠিত করে সভা, সমাবেশ মিছিলসহ বিভিন্ন ধরনের আন্দোলন সংগ্রামেও লিপ্ত ছিলেন। সেই সময়ে অধ্যক্ষ আব্দুর রশিদকে অন্যায়ভাবে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ায় আন্দোলনে আরও কার্যকরী হন মুহাম্মদ সাদেক কুরাইশী। তার আন্দোলনের পর পুনরায় চাকরিতে যোগদান করতে সক্ষম হন অধ্যক্ষ আব্দুর রশিদ।

১৯৮২ থেকে ৮৩ সাল পর্যন্ত ঠাকুরগাঁও জেলা যুবলীগের আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। পরে ১৯৮৪-৮৬ সাল পর্যন্ত জেলা যুবলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এরপর যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পদ লাভ করেন তিনি। পরে স্থান পান জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে। ১৯৯১ সালে দায়িত্ব পান প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদকের। এরপর ১৯৯৪ সালে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পান। ২০০১ সালে দলীয় কোন্দলে দল জড়িয়ে পড়ে জেলা আওয়ামী লীগ। কমিটি কেন্দ্র থেকে ভেঙে দেওয়া হয়। সাদেক কুরাইশী জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়কের পদ থেকে কোন্দল দূর করে দলকে সুসংগঠিত করেন।

২০০৫ সালের দলীয় কাউন্সিলে ভোটের মাধ্যমে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন সাদেক কুরাইশী। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে জেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বে পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জেলা পরিষদের প্রশাসক পদে নিয়োগ দেন সাদেক কুরাইশীকে। নিয়োগ প্রাপ্তির পর জেলা পরিষদ সম্পর্কে মানুষের নেতিবাচক ধারণা পাল্টিয়ে ইতিবাচকে নিয়ে এসেছেন। দক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে জেলার উন্নয়ন করে যাচ্ছেন নিরলসভাবে। ইতোমধ্যে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে জেলা শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ম্যুরাল ও স্মৃতিফলক স্থাপন করেছেন জেলা পরিষদ থেকে।

সর্বশেষ ২০১৫ সালের আওয়ামী লীগের সম্মেলনে ভোটের মাধ্যমে পুনরায় সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি। পরে ২০১৯ ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে সভাপতি নির্বাচিত হন মুহাম্মদ সাদেক কুরাইশী। আমৃত্যু তিনি এই পদে আসীন ছিলেন।

LN24BD

RELATED ARTICLES
Continue to the category

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments