Thursday, May 9, 2024
HomeScrollingপলাশবাড়ী মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

পলাশবাড়ী মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

মোঃ আশরাফুজ্জামান সরকার, পলাশবাড়ী(গাইবান্ধা)।।

গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে কিশোর-কিশোরী ক্লাবের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। দুর্নীতি আর অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে লুটপাটে মেতেছেন মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা শাহনাজ আক্তার।
জানা গেছে, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে একটি করে ও ১টি পৌরসভায় ২টি মোট ১০টি কিশোর-কিশোরী ক্লাবের প্রতিষ্ঠা করে তাদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। এই সব কিশোর-কিশোরী ক্লাবের কিশোর-কিশোরীদের জন্য নাস্তা বাবদ ৩০ টাকা করে সরকার অর্থ বরাদ্দ দিচ্ছেন। বরাদ্দ অনুযায়ী, প্রতিটি ক্লাবে ৩০ জনের নাস্তা বাবদ জনপ্রতি ৩০ টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও ১২ থেকে ১৫ টাকার নাস্তা সরবরাহ করা হচ্ছে। উপজেলার বেশ কয়েকটি ক্লাবে সরেজমিন গিয়ে এসব তথ্যের সত্যতা মিলেছে। শুধু তাই নয় ৩০ জনের স্থলে মাত্র ১০ থেকে ১৫ জন উপস্থিত শিক্ষার্থীদের মাঝে বরাদ্দ দিয়ে বাকী টাকা আত্মসাৎ করা হচ্ছে।

গত ১৪ অক্টোবর শনিবার উপজেলার বরিশাল ইউনিয়নের বরিশাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবস্থিত কিশোর-কিশোরী ক্লাবে গিয়ে দেখা যায় ৩০ জনের স্থলে মাত্র ১৯ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত রয়েছে। ব্যাগে করে নাস্তা এনেছেন শিক্ষক রোকানুজ্জামান, দেখা যায় নাস্তার মেনু হিসেবে রাখা হয়েছে ১ প্যাকেট বিস্কুট ও ১ প্যাকেট চানাচুর যার প্রতিটির মুল্য দেয়া আছে ১০ টাকা করে। জানতে চাইলে শিক্ষক রোকানুজ্জামান বলেন, আমাদের কিছুই করার নেই উপর থেকে যেভাবে নির্দেশ দেয়া আছে আমরা সেভাবেই দিচ্ছি। সেখান থেকেই মোবাইল ফোনে কথা হয় জেন্ডার প্রমোটর তুহিন মিয়ার সাথে। তিনি হোসেনপুর ইউনিয়নের মেরীরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবস্থিত ক্লাবে আসতে বললে সেখানে গিয়ে দেখা যায় ২২ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত রয়েছে। কিন্তু অনুসন্ধানে উঠে আসে অন্য চিত্র। ২২ জন শিক্ষার্থীর অনেকেই ওই ক্লাবের শিক্ষার্থী নয়, যারা শিক্ষার্থী নয় তারা বলেন আমাদেরকে কিছুক্ষণ আগে এখানে আনা হয়েছে। ওই ক্লাবের শিক্ষক লিটন চন্দ্র বলেন ১৫ জনের বেশি উপস্থিত হয় না কিন্তু হাজিরা খাতায় কিভাবে এত উপস্থিতি দেখানো হয় আমার জানা নেই। ওখানেই কথা হয় জেন্ডার প্রমোটর তুহিন মিয়ার সাথে তিনি জানান, যা কিছুই করা হচ্ছে তা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা শাহনাজ আক্তারের নির্দেশে।

২১ অক্টোবর শনিবার উপজেলার বেতকাপা ইউনিয়নের মাঠের বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবস্থিত ক্লাবে সাড়ে তিনটার দিকে গিয়ে দেখা যায় কয়েকজন শিক্ষার্থী মাঠে খেলা করছে। তবে চারটা পর্যন্ত অপেক্ষা করলেও দেখা মেলেনি কোন শিক্ষকের। স্থানীয়রা জানান, মাঝে মধ্যে একজন শিক্ষক ও কয়েকজন শিক্ষার্থী এসে কিছুক্ষণ থেকে আবার চলে যায়। সেখান থেকেই মোবাইল ফোনে কথা হয় জেন্ডার প্রমোটর মার্জিফা আক্তারের সাথে। তিনি বলেন শিক্ষক কেন যায়নি আমি জানি না, কোথার আছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন আমি ফকিরহাট ক্লাবে যাচ্ছি সেখান থেকে মহদীপুর ক্লাবে যাবো। ওই দিন সাড়ে চারটার দিকে মহদীপুর ইউনিয়নের মহদীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবস্থিত ক্লাবে গিয়ে দেখা যায় ৭ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত। জানতে চাইলে শিক্ষক মনিফা আক্তার বলেন বাকি শিক্ষার্থীরা নাস্তা আনতে দোকানে গেছেন। কিছুক্ষণ পর দেখা যায় ৩ জন শিক্ষার্থী ২৪ প্যাকেট বিস্কুট আনলেন দোকান থেকে। ওই তিনজনসহ ক্লাবে উপস্থিত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১০ কিন্তু হাজিরা খাতায় দেখা যায় ২৮ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত। শুধু তাই নয় চলতি মাসের ২৮ ও ২৯ তারিখের অগ্রিম উপস্থিতি দেখানো হয়েছে হাজিরা খাতায়।

জানতে চাইলে শিক্ষক মনিফা আক্তার বলেন, কিভাবে অগ্রিম উপস্থিতি দেখানো হয়েছে আমার জানা নেই।
আবারো মোবাইলে কথা হয় জেন্ডার প্রমোটর মার্জিফা আক্তারের সাথে। তিনি বলেন, কোন শিক্ষার্থী হয়তো হাজিরা খাতা বাড়ী নিয়ে গিয়ে এমনটা করেছে। শিক্ষার্থীরা বলেন কয়েকদিন আগে হাজিরা খাতা মার্জিফা ম্যাডাম নিয়ে গিয়েছিল গতকাল তিনি ফেরত দিয়ে গেছেন। নাস্তার বিষয়ে জানতে চাইলে জেন্ডার প্রমোটর মার্জিফা আক্তার বলেন, আমরা ৩০ টাকার নাস্তাই দিচ্ছি। অথচ শিক্ষক মনিফা আক্তার ও শিক্ষার্থীরা বলেন, কোনদিনও ৩০ টাকার নাস্তা দেয়া হয়নি।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি ক্লাবেই বরাদ্দের অর্ধেক টাকার নাস্তা দেয়া হচ্ছে। শিক্ষার্থী যে কয়জনই উপস্থিত থাক না কেন উপস্থিতি ৩০ জনকেই দেখানো হচ্ছে। এভাবে কয়েক বছরে কয়েক লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা শাহনাজ আক্তারের বিরুদ্ধে। কোন কোন ক্লাবে শিক্ষার্থী উপস্থিত না থাকলেও সেই বরাদ্দের টাকা নয়-ছয় করে সরকারের এমন উন্নয়ন ভাবনা ম্লান করতে এই কর্মকর্তাকেই দুষছেন অনেকে।

এ বিষয়ে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা শাজনাজ আক্তারের সাথে কথা বলতে চাইলে, তিনি এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সাথে কোন কথা বলবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন এমনকি কোন তথ্যও দিতে রাজী নন তিনি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুল হাসান জানান, বরাদ্দের কম টাকার নাস্তা দেয়ার কোন নিয়ম নেই। তাছাড়া কেউ হাজিরা খাতায় অগ্রিম উপস্থিতি দেখাতে পারেন না। বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন তিনি।

গাইবান্ধা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নার্গিস জাহান বলেন, কেন কম টাকার নাস্তা দেয়া হচ্ছে আমার জানা নেই। তিনিও বলেন অগ্রিম উপস্থিতি দেখানোর কোন নিয়ম নেই।#

LN24BD

RELATED ARTICLES
Continue to the category

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments