জাতীয় সংসদের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশে ঝরে পড়া শিশুর হার কমানোর পাশাপাশি শিশু পুষ্টি নিশ্চিত করে দারিদ্র্য দূরীকরণে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন ইউনিসেফের দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক সঞ্জয় উইজেসেকেরা।
রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে এই আগ্রহের কথা জানান তিনি।
স্পিকারের সংসদ ভবনস্থ কার্যালয়ে ওই বৈঠকে তারা জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে শিশুদের ওপর প্রভাব, শিশু পুষ্টি, শিশু শিক্ষা, শিশু শ্রম ও শিশু সহিংসতা প্রতিরোধ ছাড়াও তথ্য-প্রযুক্তি খাতে শিশুদের দক্ষতা বৃদ্ধির মতো নানা বিষয়ে আলোচনা করে
সৌজন্য সাক্ষাতে স্পিকার বলেন, শিশুদের সার্বিক কল্যাণে ১৯৭২ সাল থেকে ইউনিসেফ বাংলাদেশে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছে। জন্মের পর থেকে শিশুদের পর্যাপ্ত পুষ্টি নিশ্চিতকরণে এবং এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করে যাচ্ছে সংস্থাটি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারও শিশুদের উন্নয়নে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় মায়েদের জন্য ল্যাকটেটিং ভাতা, শিক্ষার্থীদের মায়েদের মোবাইলের মাধ্যমে উপবৃত্তি প্রদান ইত্যাদি সহায়তামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি দারিদ্র্য দূরীকরণে সরকার কাজ করছে। সেই সঙ্গে শিশুশ্রম হ্রাসে সরকার যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
এ সময় জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা এবং শিশুদের জন্য নির্মল সবুজ টেকসই পরিবেশ নিশ্চিতে প্রচুর বনায়ন কার্যক্রম প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করেন স্পিকার।
জবাবে বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব অগ্রগতির প্রশংসা করে ইউনিসেফের দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক বলেন, শিশু অধিকার সুরক্ষা, মাতৃস্বাস্থ্য উন্নয়ন, নারী সহিংসতা প্রতিরোধ, নারীর ক্ষমতায়নসহ নানা ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা দৃশ্যমান। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে শিশু সুরক্ষাসহ বাংলাদেশের শিশুদের মূল ধারায় সম্পৃক্ত রাখতে ইউনিসেফ কাজ করতে আগ্রহী। ঝরে পড়া শিশুর হার কমাতে ও শিশু পুষ্টি নিশ্চিত করে দারিদ্র্য দূরীকরণে ইউনিসেফ বাংলাদেশে কাজ করতে পারে। এ সকল বিষয়ে জাতীয় সংসদের সঙ্গে অংশীদারি প্রকল্প নিতে সঞ্জয় উইজেসেকেরা স্পিকারের সহযোগিতা কামনা করলে স্পিকার ইউনিসেফকে এ বিষয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, শিশুদের প্রতি সহিংসতা রোধে প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষক ও অভিভাবকদের সম্পৃক্ত করে ইউনিসেফ ওয়ার্কশপ আয়োজন করতে পারে। পাশাপাশি ভলিবল, বাস্কেটবল, ফুটবল, শরীর চর্চা ও অন্যান্য খেলাধুলায় শিশুদের উৎসাহিত করতে হবে। বিদ্যালয়গুলোতে কম্পিউটার ল্যাব স্থাপনের মাধ্যমে শিশুদের তথ্য-প্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষা নিশ্চিত করা হয়েছে। ‘মাই কনস্টিটিউয়েন্সি’ অ্যাপের মাধ্যমে নিজ এলাকার সকল তথ্য-উপাত্ত সংসদ সদস্যরা জানতে পারছেন। এছাড়াও পীরগঞ্জ উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে মেয়েদের মাঝে ১০০টি করে ১৫টি ইউনিয়নে মোট ১ হাজার ৫০০ বাইসাইকেল বিতরণ করা হয়েছে।
এ সময় শিশু শ্রম রোধ ছাড়াও শিশু পুষ্টি, জলবায়ু পরিবর্তন, তথ্য-প্রযুক্তি খাতে দক্ষতা বৃদ্ধি ইত্যাদি ক্ষেত্রে ইউনিসেফকে কাজ করার আহ্বান জানান স্পিকার।
সৌজন্য সাক্ষাৎকালে অন্যদের মধ্যে ইউনিসেফ বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট ও সংসদ সচিবালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।