চট্টগ্রামের বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করতে ডিএনএ পরীক্ষা করার জন্য নমুনা সংগ্রহ শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
আজ সোমবার সকাল ৮টায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ইমারজেন্সি কেয়ারের সামনে নমুনা সংগ্রহ শুরু করা হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন। ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ কেন্দ্রে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ২৩ জনের লাশ শনাক্ত হয়েছে। বাকি ১৮ জনের আত্মীয়-স্বজনের নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। একমাসের মধ্যে ডিএনএ বিশ্লেষণ করে নমুনার ফলাফল দেওয়া হবে। চট্টগ্রাম মেডিকেলে ৪১ জনের লাশ এসেছিল বলে জানান তিনি।
তবে সেক্ষেত্রে বাকি পাঁচটি মরদেহের বিষয়টি এখনও পরিষ্কার হওয়া যায়নি।
নিহতদের বাবা-মা, ভাই-বোন বা ছেলে-মেয়ের যেকোনো দুই জনের নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। মরদেহের সঙ্গে ডিএনএ বিশ্লেষণ করে পরিচয় শনাক্ত করা হবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তালশহর থেকে ভাই বাবুল মিয়ার খোঁজে এসেছিলেন সিরাজুল ইসলাম। রোববার সারাদিন ভাইকে না পেয়ে ও ভাইয়ের লাশ না পেয়ে আজ ডিএনএ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ভাই গাড়িচালক ছিলেন। গতকাল থেকে খুঁজছি, ভাইয়ের কোনো সন্ধান পায়নি, লাশও পায়নি। ভাইকে জীবিত না পেলে মৃতও যেন পাই সেজন্য ডিএনএ নমুনা দিলাম।
মোহাম্মদ রাসেল নামের একজনের সন্ধানে কুমিল্লা থেকে ডিএনএ নমুনা দিতে এসেছেন বাবা মো. শাহ আলম। তিনি বলেন, ছেলে ডিপোতে কাজ করতো। গতকাল সন্ধ্যায় সর্বশেষ কথা হয়েছিল। এরপর থেকে মোবাইল বন্ধ। পরে আগুনের সংবাদ শুনে হাসপাতালে খুঁজে কোথাও পায়নি। এখন নমুনা দিতে এলাম। যাতে ডিএনএ-এর মাধ্যমে ছেলের লাশটাও যেন পাই।
শনিবার রাত ৯টার দিকে চট্টগ্রাম শহর থেকে ৩০ কিলোমিটারের মতো দূরে সীতাকুণ্ডের কদমরসুল এলাকায় বিএম কন্টেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। আগুন লাগার ঘণ্টাখানেকের মধ্যে ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণ ঘটে। এতে কনটেইনারগুলো দুমড়ে-মুচড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে। পরপর বেশ কটি বিস্ফোরণ হয়।
সোমবার সকালে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আগুন নিয়ন্ত্রণে থাকলেও পুরোপুরি নেভানো যায়নি। টানা ৩৬ ঘণ্টা ধরে আগুন নেভানোর নিরলস চেষ্টা করে যাচ্ছেন ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। ঘটনাস্থলে কাজ করছে সেনাবাহিনী সদস্যরাও।
সোমবার (৬ জুন) সকাল ৯ টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক আনিসুর রহমান বলেন, আমরা এখনো আগুন নেভানোর কাজ করছি। আগুন পুরোপুরি নেভাতে সময় লাগবে।
তিনি বলেন, বিভিন্ন কনটেইনারে এখনো আগুন জ্বলছে, ধোয়া বের হচ্ছে। আমরা সাবধানতার সঙ্গে সেগুলোতে পানি দিচ্ছি। আর যেসব কনটেইনার আগুনেেকোনো ক্ষতি হয়নি সেগুলো নিরাপদে সরিয়ে দিচ্ছি। আমাদের ৯টি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজ করছে।
আগুন ও বিস্ফোরণে ৪৬ জনের নিহত হওয়ার খবর এখনও পর্যন্ত পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন ২০০ জনের বেশি। দমকল বিভাগ জানিয়েছে, আগুন নেভাতে গিয়ে তাদের ৯ জন সদস্য নিহত হয়েছে। এর আগে চট্টগ্রামের স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই সংখ্যা ৪৯ বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। পরে এর সংশোধনী দেওয়া হয়।
মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এই কনটেইনার ডিপোতে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড রাসায়নিক থাকার কারণে সেখানে এতো বড় বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
ডিপোটি তৈরি করা হয় পোশাক ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যসহ বিভিন্ন আমদানি ও রপ্তানির কনটেইনার খালাস ও পরিবহনের জন্য। এমন একটি ডিপোতে রাসায়নিক মজুদ বা সংরক্ষণ করা হবে কেন তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।