সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় একের পর এক আহত, দগ্ধ ও নিহতের লাশ আনা হচ্ছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে।
হঠাৎ ধস্তাধস্তি করে হতাহতদের মধ্যে একজনকে নিয়ে হাসপাতালে ঢুকতেই চিৎকার শোনা গেল, ‘আমার ভাইয়ের শ্বাস এখনও আছে, একটু দেখেন না বাঁচানো যায় নাকি।’
পরে প্রতিবেদক ওই যুবকের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন একটু আগে হাসপাতালে আগুনে দগ্ধ যাকে আনা হয়েছে তিনি ওই ব্যক্তির ভাই। তার ভাই মো. আফজাল মিয়া (২৭) দুই বছর ধরে বিএম কন্টেইনার ডিপোর ভেতরে কাজ করছেন। তার বাড়ি সীতাকুণ্ডের ভূঁইয়া পাড়া এলাকায়।
আফজালের ভাই মো. সজল আরো জানান, রাতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনার সময় আমার ভাই সেখানে কাজ করছিল। বিস্ফোরণের আগে মাগরিবের সময়ও আবার ভাইয়ের সঙ্গে কথা হয়। কিন্তু ঘটনার পর থেকে তার মোবাইলে বার বার কল দিয়েও তার সংযোগ পাননি। ঘটনাস্থলে গিয়েও ভাইকে খুঁজে পাইনি। পরে রাতেই ভাইকে খুঁজতে চলে আসি চমেক হাসপাতালে। সেখানেও সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করে খোঁজ মেলেনি ভাইয়ের।
তিনি জানান, পরে রবিবারসাড়ে ১২টার দিকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের গেটে একটি অ্যাম্বুলেন্স আসতেই আত্মীয়স্বজনরা হুমড়ি খয়ে পড়েন নিখোঁজদের খুঁজতে। আর তখনই নিহত আফজালের ভাই ও বন্ধুরা যান সেখানে। তখনই ভাইকে দেখতে পেয়ে চিৎকার করে বলেন, ‘আমার ভাইয়ের শ্বাস এখনও আছে, একটু দেখেন না বাঁচানো যায় নাকি।’
তখন কান্নাজড়িত কণ্ঠে আফজালের মেজো ভাই সজল বলেন, ‘লাভ নেই, শেষ হই গেছে। আমার ভাই নেই। মাগরিবে শেষ কথা হইছে। আর ফিরে আসবে না। মারে বাসায় কি বুঝ দিব। সব তো আজ শেষ হই গেছে। ডাক্তাররে বললাম, দেখেন শ্বাস আছে; কিন্তু আমারে ঢুকতে দেয়নি। আমাকে বের করে দিছে, হায়রে আল্লাহ সব শেষরে!’
আফজালের বন্ধু সাগর বলেন, শনিবার রাত ১০টায় যখন হঠাৎ বিকট শব্দে সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোর আশেপাশে আগুন লাগে তখন আফজালের সঙ্গে আমার ভিডিও কলে কথা হচ্ছিল। তখন সে (আফজাল) কনটেইনার ডিপোতে দাঁড়িয়ে সেই আগুনের ভিডিও দেখাচ্ছিল আমাকে। ভিডিওতে সে আমাকে বলে, ‘দেখ বন্ধু আগুন লেগেছে।’ এ সময় আমিও তাকে সাবধানে থাকতে বলেছিলাম। কিন্তু এর কয়েক সেকেন্ড পরেই দাঁড়িয়ে থাকা কনটেইনারটি ভয়াবহ বিস্ফোরণে হারিয়ে যায় আমার বন্ধু আফজাল। এরপর আর কথা হয়নি; আমি অনবরত তাকে ফোন করেও পাইনি।
এদিকে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের সাত কর্মকর্তাসহ ৪৩ জনের নিহতের খবর পাওয়া গেছে। নিহতদের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের সাতজন এবং অন্যান্যদের মধ্যে ৩৬ জন।
এর মধ্যে কুমিল্লা জেলার লাঙ্গলকোট থানার সাতবাড়িয়া এলাকার শামসুল হকের ছেলে মনিরুজ্জামান (৩২), বাঁশখালীর ছনুয়া ইউনিয়নের মধুখালী গ্রামের ফরিদুল আলমের ছেলে মমিনুল হক (২৪), একই উপজেলার পূর্ব চারিয়ার নাপোড়া এলাকার মাহমুদুর রহমানের ছেলে মো. মহিউদ্দীন (২৪), চনপাড়ার এলাকার আব্দুল মজিদের ছেলে রবিউল আলম (১৯), ভোলা জেলার হাবিবুর রহমান (২৬), তোফায়েল আহমেদ (২২) ও মো. ইব্রাহিম হোসেনের (২৭) পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে।
উল্লেখ্য, শনিবার (৪ জুন) রাত ১০টার দিকে সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নে বিএম কনটেইনার ডিপোর লোডিং পয়েন্টের ভেতরে এ আগুনের ঘটনা ঘটে। ডিপোটির মালিক স্মার্ট গ্রুপের এমডি ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক মুজিবুর রহমান।