Sunday, April 28, 2024
HomeScrollingদেশে সুস্থভাবে ফিরতে পেরে অনেক আনন্দিত: আটকাপড়া জাহাজের নাবিক

দেশে সুস্থভাবে ফিরতে পেরে অনেক আনন্দিত: আটকাপড়া জাহাজের নাবিক

অনলাইন ডেস্ক।।

বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজের মাস্টার জি এম নূর ই আলম বাকি নাবিক ও প্রকৌশলীদের নিয়ে দেশে ফিরতে পেরে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন; তবে এত দ্রুত সুস্থভাবে সবাই ফেরা সম্ভব হবে, সেটা তিনি ‘ভাবতেও পারেননি’।

দ্রুততম সময়ে সবাইকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করায় সরকার প্রধান থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সবাইকে তিনি ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

বুধবার দুপুর সোয়া ১২টায় টার্কিশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে রোমানিয়ার বুখারেস্ট থেকে ঢাকা পৌঁছান বাংলার সমৃদ্ধি ২৮ ক্রু।

তাদের জন্য বাইরে অপেক্ষায় ছিলেন পরিবারের সদস্য, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের কর্মকর্তা এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা। আরও ছিলেন কয়েকশ সংবাদকর্মী।

এ সময় নাবিকদের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের সামনে কথা বলেন জাহাজের মাস্টার নূর ই আলম।

তিনি বলেন, ‘দেশে সুস্থভাবে ফিরতে পেরে অনেক আনন্দিত। প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনায় সংশ্লিষ্ট সবার তৎপরতায় নিরাপদে এবং দ্রুততম সময়ে দেশে ফিরতে পেরেছি, আমাদের পরিবার অপেক্ষায় ছিলেন, সবার চেষ্টায় ফিরতে পেরেছি এত অল্প সময়ের মধ্যে।’

ইউক্রেনে গিয়ে যুদ্ধের মধ্যে আটকে পড়া জাহাজটি গত ২ মার্চ রকেট হামলার শিকার হয়। তাতে মারা যান থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমান। জাহাজের ব্রিজও দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

পরদিন বিকালে জাহাজ পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয় এবং বাকি ২৮ জনকে সরিয়ে নেওয়া হয় সেখান থেকে। মলদোভা হয়ে তারা রবিবার পৌঁছান রোমানিয়া, সেখান থেকে ফিরলেন দেশে।

নূর ই আলম বলেন, ‘আমরা আতঙ্কিত ছিলাম। আমাদের সরকার যথেষ্ট পদক্ষেপ নিয়েছে। আমরা এখানে সুস্থভাবে আসতে পেরেছি, এটাই বড় কথা। তবে আমরা জার্নি করায় খুব ক্লান্ত।’

জাহাজ আক্রান্ত হওয়ার পর বিএসসি, নৌ মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সব সময় যোগাযোগ রাখা হয়েছিল জানিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন নূর ই আলম। তাদের বের করে আনার জন্য পোল্যান্ড, অস্ট্রিয়া এবং রোমানিয়ায় বাংলাদেশের দূতাবাস কর্মীরা যে পরিশ্রম করেছেন, সেজন্য ধন্যবাদ জানান।

সাধারণত আমার সঙ্গে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কারও কথা হয় না, কিন্তু হামলার পর বিভিন্ন সময়ে আমাদের সার্বিক অবস্থা জানতে, আমরা কে কেমন আছি এসব জানতে… আমার সঙ্গে সরকারের কর্মকর্তারা কথা বলেছেন, সাহস দিয়েছেন।

‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় সব কাজ হয়েছে, সবার প্রতি আমি আসলেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি, এভাবে ফিরতে পারব ভাবি নাই।’

এখনো ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরের চ্যানেলে আটকে থাকা বাংলার সমৃদ্ধির মাস্টারের ভাষায়, এটা (ফিরে আসা) ছিল অকল্পনীয়। কারণ অনেক বড় বড় দেশ আছে যাদের নাগরিক এখনো দেশে ফিরতে পারেনি। আমাদের ছোট দেশ, কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও ডিপ্লোম্যাটদের সহযোগিতায় এটি সম্ভব হয়েছে।

নিজেরা ফিরতে পারলেও সহকর্মী হাদিসুর রহমানের লাশ ইউক্রেনেই রেখে আসতে হয়েছে নূর ই আলমদের। সে জন্য কষ্ট প্রকাশ পেল তার কণ্ঠে।

তিনি বললেন, আমি গভীরভাবে মর্মাহত, নিহত হাদিসুরের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। সরকার ও করপোরেশনকে অনুরোধ করব, তার পরিবারকে যেন উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়।

সেদিন আসলে কী ঘটেছিল, সে বিষয়ে কিছু বলতে বারবার অনুরোধ করছিলেন সাংবাদিকরা। জবাবে জাহাজের মাস্টার বলেন, সেদিন আমাদের রুটিন ব্রিফিং ছিল। বিকেল বেলায় হামলা (অ্যাটাক) হয়। তখন আমাদের ব্রিজে আগুন লেগে গেছিল। আগুন নেভানোর জন্য আমরা ব্যস্ত ছিলাম। আগুন নেভানো হয়। এরপর টেলিভিশনে আপনারা বাকিটা দেখেছেন। এটাই বলতে চাই দেশবাসী আমাদের জন্য দোয়া করেছেন। বিশেষ করে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী আমার সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছেন তিনি খোঁজখবর নিয়েছেন। এ ছাড়া পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আমার সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা আমাদের নিরাপদে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।

নূর ই আলম বলেন, আমাদের নিরাপদে রাখার জন্য তারা সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন। আমি দেখেছি, রিফিউজিরা ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত হেঁটেছেন। কিন্তু আমাদের হাঁটতে হয়নি।

যুদ্ধ পরিস্থিতি আঁচ করে ইউক্রেন থেকে আগেই জাহাজ ফিরিয়ে আনা সম্ভব ছিল কী না- এ প্রশ্নে তিনি বলেন, যুদ্ধ শুরুর পর বন্দরের ১৯টি চ্যানেল বন্ধ হয়ে যায়, কোনো চ্যানেল ব্যবহার করে দেশে ফেরার সুযোগ ছিল না।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পূর্ব ইউরোপ উইংয়ের মহাপরিচালক সিকদার বদিরুজ্জ্মান বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের ২৮ জন যে ক্রু মেম্বার, তাদের আমরা আমাদের বুকে নিতে পেরেছি। এটা আমাদের কাছে সবচেয়ে আনন্দের বিষয়। তারা তাদের পরিবারের কাছে যাবে, তারা এখন সেইফ। বাকি একজন হাদিসুর রহমান, তার পরিবারের সদস্যদের প্রতি আমরা আবারও সহমর্মিতা জানাচ্ছি। এবং তার দেহাবশেষ আমরা অতিসত্বর দেশে আনতে পারব।

তবে সেটা কবে সম্ভব হবে, সে বিষয়ে কোনো ধারণা দিতে পারেননি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, এটা টাইম ফিক্সড করা দুরূহ একটা ব্যাপার। আপনারা সেটা ভিজুয়ালাইজ করতে পারছেন। একটা যুদ্ধ, সেখানে মানুষ ঢুকতে পারছে না, আসতে পারছে না।

হাদিসুরের পরিবারের ক্ষতিপূরণের বিষয়ে তিনি বলেন, আপাতত তাদের ফিরিয়ে আনা, তারপর তাদের পরিবারের জন্য যা কিছু করণীয়, সেটি আমরা অবশ্যই করব।

RELATED ARTICLES
Continue to the category

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments