Sunday, April 28, 2024
HomeScrollingচরম পরীক্ষার মুখোমুখি তালেবান

চরম পরীক্ষার মুখোমুখি তালেবান

অনলাইন ডেস্ক।।

পুরো আফগানিস্তানে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পর তালেবানরা এখন নিজেদের মধ্যে শান্তি বজায় রাখা এবং ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে যাওয়া একটি দেশক চালানোর মতো গুরুতর কাজের মুখোমুখি হয়েছে।

বহিরাগত শত্রুর বিরুদ্ধে তারা সব মতাদর্শগত এবং কৌশলগত বিষয়ে একমত এবং ঐক্যবদ্ধ হতে পেরেছিল। কিন্তু অন্য যে কোনো বৃহৎ রাজনৈতিক সংগঠনের মতোই কয়েক দশকের পুরনো এই ইসলামী গোষ্ঠীর নিজেদের মধ্যেও রয়েছে বিভক্তি, প্রতিদ্বন্দ্বিতা, আনুগত্য এবং দলাদলি।

মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিদেশী সৈন্যদের পরাজিত করার ২০ বছরের প্রচেষ্টার সময় এবং কাবুল সরকারকে ব্যাপকভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত বলে অভিহিত করার সময় নিজেদের মধ্যকার এই ফাটলগুলি মূলত নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছিল।

সেই সাধারণ শত্রু পরাজিত হওয়ার পর, মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই তালেবানদের নিজেদের বিরোধগুলো তীব্র হয়ে উঠেছে।

গত সোমবার প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে তালেবানের দুই গ্রুপের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে দলটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং নতুন সরকারের উপ-প্রধানমন্ত্রী মোল্লা আব্দুল গনি বারাদারের নিহত হওয়ার গুজব ছড়িয়েছিল। পরে অডিও এবং ভিডিও বার্তা প্রকাশ করে মোল্লা বারাদার জানিয়েছেন, তিনি এখনও বেঁচে আছেন।

এর আগে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নামকরণ নিয়েও তালেবানের মধ্যকার রাজনৈতিক মতবিরোধ প্রকাশিত হয়ে পড়েছিল এবং সম্ভবত ভবিষ্যত সমস্যার বীজ বপন করেছে। এমনটাই মনে করছেন অস্ট্রেলিয়ার লা ট্রোব বিশ্ববিদ্যালয়ের আফগানিস্তান বিশেষজ্ঞ নেয়ামতউল্লাহ ইব্রাহিমি।

তালেবানের পুরোনো বড় নেতাদের মধ্যেই তাদের নতুন সরকারের বড় পদ্গুলি ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। তবে তালেবানের এই পুরোনো নেতৃত্ব আবার দুই ভাগে বিভক্ত। এক ভাগ তালেবানের আধ্যাত্মিক জন্মস্থান কান্দাহার ভিত্তিক, যার মধ্যে রয়েছেন তালেবানের সর্বোচ্চ নেতা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদ, প্রধানমন্ত্রী হাসান আখুন্দ এবং বারাদারের মতো নেতারা। আরেক ভাগে রয়েছে পাকিস্তান সীমান্ত লাগোয়া হাক্কানি নেটওয়ার্ক। হাক্কানিরা আফগনিস্তান ও পাকিস্তান সীমান্তের দুই পাশেই সক্রিয়। পাকিস্তানের উত্তর ওয়াজিরিস্তান আর আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলজূড়ে হাক্কানি নেটওয়ার্কের অবস্থান। আল-কায়েদা এবং পাকিস্তানের শক্তিশালী ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গেও সম্পর্ক রয়েছে হাক্কানিদের।

নব্বইয়ের দশকে তালেবানের প্রথম মেয়াদের শাসনে কান্দাহার গোষ্ঠী প্রভাবশালী ছিল- কিন্তু তালেবানের সাম্প্রতিক সামরিক সাফল্যের অনেকগুলোই হাক্কানিদের হাতে চলে গেছে।

ইব্রাহিমি বলেন, ‘হাক্কানিদের ক্ষমতাকে অবমূল্যায়ন করা উচিত হবে না। হাক্কানিরা সামরিকভাবে তালেবান আন্দোলনের আরও শক্তিশালী অংশ। তারা আল-কায়েদা এবং পাকিস্তানের আইএসআই-এর সঙ্গেও গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছে। আফগানিস্তানেও তাদের নিজস্ব শক্তিশালী ঘাঁটি রয়েছে’।

এই হাক্কানি নেটওয়ার্কের বর্তমান প্রধান সিরাজউদ্দিন হাক্কানি আফগানিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে, যাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখনো সন্ত্রাসী হিসেবে তালিকাভুক্ত করে রেখেছে এবং তাকে ধরার জন্য ১০ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছে।

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের একজন সিনিয়র কনসালটেন্ট গ্রায়েম স্মিথের মতে, ‘এই ভূমিকার জন্য তাকে বেছে নেওয়াটাই স্বাভাবিক ছিল। কারণ তিনি তালেবানদের সবচেয়ে অভিজাত যোদ্ধাদের কিছু ইউনিট সংগঠিত করেছিলেন’।

কিন্তু হাক্কানিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগের ফলে তালেবানের জন্য পশ্চিমা দেশগুলোর স্বীকৃতি আদায় এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আটকে থাকা আফগান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ উদ্ধার করাও কঠিন হয়ে পড়েছে।

এই ব্যর্থতা বারাদারের জন্য একটি বড় আঘাত হয়ে উঠতে পারে, যিনি আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারে বিষয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনায় প্রধান ভুমিকা পালন করেছিলেন।

জাতিসংঘ বলছে, বিদেশী স্বীকৃতি ছাড়া, ‘অর্থনৈতিক সংকট’ এবং ‘মানবিক বিপর্যয়’ মোকাবিলা করতে হিমশিম খাবে তালেবান। আবার, আফগানিস্তানের সমস্যা জাতিসংঘও সমাধান করতে পারবে না বলে মনে করেন সংস্থাটির মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস।

তিনি মনে করেন, আফগানিস্তানে একটি অংশগ্রহণমূলক সরকার প্রতিষ্ঠায় মধ্যস্থতা করার সুযোগও সীমিত। তবু আফগান জনগণের জন্য তিনি তালেবানদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

আফগানিস্তানে পশ্চিমা সমর্থিত সরকারকে উচ্ছেদ করে তালেবানের ক্ষমতা দখলের এক মাস পূর্ণ হওয়ার প্রেক্ষিতে রয়টার্সকে এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন গুতেরেস।

বিশেষজ্ঞদের মতে, নানা দল-উপদলের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা আফগানিস্তানের প্রতিবেশীদের সঙ্গেও সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

তালেবানের বাইরের বিভিন্ন দল এবং পশ্চিম আফগানিস্তানের তালেবান গোষ্ঠী এবং যাদের সঙ্গে ইরানের বিপ্লবী গার্ড কোরের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে তাদেরকেও নতুন সরকারের বাইরে রাখা হয়েছে।

স্মিথ বলেন, ‘তালেবানরা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিশিষ্ট আফগান রাজনীতিবিদ এবং আঞ্চলিক রাজ্যগুলির অনুরোধকে উপেক্ষা করেছে তারা। তালেবানের বাইরের কাউকে সরকারে রাখেনি’।

‘এটি তালেবানের মধ্যে সংহতির জন্য ভাল এবং তালেবান সমর্থকদের কাছে এটা গ্রহণযোগ্য হয়েছে। কিন্তু এর ফলে অন্যান্য আফগান এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে তালেবান সরকারের বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে’।

ইব্রাহিমি বলেছেন, ভারত, ইরান বা রাশিয়ার মতো আঞ্চলিক শক্তি আফগানিস্তানে তাদের স্বার্থের সুরক্ষার জন্য নিজেদের পছন্দের গোষ্ঠীগুলোকে নতুন করে অর্থায়ন করা শুরু করতে পারে। এবং আফগানিস্তানে নতুন করে দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও সহিংসতা শুরু হতে পারে।

RELATED ARTICLES
Continue to the category

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments