নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সময় ভবনটির চারতলার কলাপসিবল গেট বন্ধ রাখায় শ্রমিকেরা বের হতে পারেননি বলে অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৫৩ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।
শ্রমিক ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভবনের নিচ তলার একটি ফ্লোরের কার্টন থেকে হঠাৎ আগুনের সূত্রপাত ঘটে। একপর্যায়ে আগুন পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় কালো ধোয়ায় কারখানাটি অন্ধকার হয়ে যায়। এ সময় শ্রমিকরা প্রাণ বাঁচাতে ছোটাছুটি করতে শুরু করে। কেউ কেউ ভবনের ছাদে অবস্থান নেন। আবার কেউ কেউ ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়েন।
তারা আরও জানান, অগ্নিকাণ্ডের সময় ৬ তলা ভবনটির মধ্যে ৪ তলা থেকে কেউই বের হতে পারেননি। সিকিউরিটি ইনচার্জ এই ফ্লোরের কলাপসিবল গেটটি বন্ধ করে রাখায় কোনো শ্রমিকই বের হতে পারেনি। চতুর্থ তলার শ্রমিকদের ইনচার্জ মাহবুব, সুফিয়া, তাকিয়া, আমেনা, রাহিমা, রিপন, কল্পনা রানী, নাজমুল, মাহমুদ, ওমরিতা, তাছলিমাসহ প্রায় শতাধিক শ্রমিকের খবর পাওয়া যাচ্ছে না।
এই চার দলার ফ্লোর থেকেই শুক্রবার ৪৯টি লাশ উদ্ধার করেছে ফায়ার ব্রিগেডের কর্মীরা। ফায়ার সার্ভিস হেড কোয়ার্টারের উপপরিচালক অপারেশন অ্যান্ড মেইনট্যানেন্স দেবাশীষ বর্মণ এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সেখানে লাচ্ছি ও লিচু সেকশন ছিল।
দেবাশীষ বর্মণ বলেন, উদ্ধার করা লাশগুলো এমন ভাবে পুড়ে গেছে যে তাদের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। আমরা পর্যায়ক্রমে ৫ম ও ৬ষ্ঠ তলা তল্লাশি করে দেখব আর কোন লাশ আছে কিনা। এখন কিছুই বলা যাচ্ছে না।
শুক্রবার উদ্ধার করা ৪৯টি মরদেহ ফায়ার সার্ভিসের তিনটি অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকা মেডিকেলের মর্গে নিয়ে আসা হয়েছে। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে ৩জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সর্বশেষ ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে আরও একজন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৩ জনে।
জেলা ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক আব্দুল আল আরিফিন লাশ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে তিনি জানান।
এদিকে, শুক্রবার বেলা ১১টায় নিখোঁজ শ্রমিকদের দ্রুত সন্ধান চেয়ে ওই কারখানায় হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছেন নিখোঁজদের স্বজনরা। এ সময় আটটি মোটরসাইকেল ও ১৫/২০ যানবাহন ভাঙচুর করা হয়েছে। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা হাসেম ফুড লিমিটেডের আনসার ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে সংরক্ষণাগার থেকে তিনটি শটগান লুট করে নিয়ে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করেছে পুলিশ।
এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কর্ণগোপ এলাকায় হাশেম ফুডস অ্যান্ড বেভারেজ কারখানায় এ আগুন লাগে।
কাঞ্চন ফায়ার সার্ভিসের ইনচার্জ শাহ-আলম বলেন, মধ্যরাতে আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসলেও সকাল ৬টার দিকে কারখানার চারতলায় আবারও আগুন বাড়তে থাকে। আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিট।
ইতিমধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান, জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ, পুলিশ সুপার জায়েদুল আলমসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডে বিপুল হতাহতের ঘটনায় রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্থানীয় এমপি ও বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেছেন।