Monday, May 6, 2024
HomeScrollingসৌদির জেলে শারীরিক সম্পর্কে বাধ্য করা হয় নারী অধিকারকর্মীকে

সৌদির জেলে শারীরিক সম্পর্কে বাধ্য করা হয় নারী অধিকারকর্মীকে

লুইজান আল হাথলাউল। সৌদি আরবের অতি পরিচিত নারী সমাজসেবী ও অধিকারকর্মী। সমাজে নারীদের অধিকার রক্ষায় সব সময়েই প্রতিবাদ আন্দোলনের সামনের সারিতে থাকেন তিনি।

আন্দোলন চালিয়ে একাধিকবার গ্রেফতার হয়েছেন লুইজান। জেলে নির্মম মানসিক এবং শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তিনি। তা সত্ত্বেও নারীদের অধিকার রক্ষার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন আজও।

সৌদি আরবের জেদ্দায় জন্ম তার। ব্রিটিশ কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন তিনি। ২০১৯ এবং ২০২০ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য তার নাম মনোনীত হয়েছিল। ২০২০ সালে বাকলাভ হেভেন হিউম্যান রাইটস সম্মানের জন্যও তার নাম মনোনীত হয়েছে, যা ২০২১ সালের ১৬ এপ্রিল বিজেতার নাম ঘোষিত হবে। সৌদিতে নারীদের গাড়ি চালানোর অধিকার এনে দেওয়া এবং পুরুষ অভিভাবকত্ব থেকে নারীদের বের করে আনার অন্যতম কৃতিত্ব তারই। এমন একজন বহুল জনপ্রিয় সমাজকর্মীর ওপর নির্মম নির্যাতন চালানো হয়েছে সৌদির জেলে, যা নিয়ে সরব হয়েছে সারা বিশ্বই।

সম্প্রতি ২০২১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি তিনি সৌদির জেল থেকে মুক্তি পেয়েছেন। সময়ের আগেই তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও সংবাদমাধ্যম তোলপাড়। কারণ এক সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলে তার ওপর অমানবিক নির্যাতন চালিয়েছিলেন কারাকর্তা এবং অন্যান্য রক্ষীরা।

অভিযোগ, তাকে ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হয়, কারাকর্তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে বাধ্য করা হয়, জেলের রক্ষীদের সঙ্গে বসিয়ে পর্নোগ্রাফিও দেখানো হয়। এছাড়া সিলিং থেকে ঝুলিয়ে মারধর, বিদ্যুতের শকের মতো নির্যাতন তো হয়েছেই।

২০১৪ সালের ১ ডিসেম্বর প্রথম গ্রেফতার হন তিনি। নারীদের গাড়ি চালানোয় নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদ করতে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে সৌদি আরব যান গাড়ি চালিয়ে। তার কাছে লাইসেন্স থাকা সত্ত্বেও গ্রেফতার করে সৌদি পুলিশ। ৭৩ দিন জেলে ছিলেন তিনি। ২০১৬ সালে পুরুষ অভিভাবকত্বের বিরুদ্ধে ১৪ হাজার নারী সই সংগ্রহ করে দেশটির বাদশাহ সালমানের কাছে পাঠান। ফের তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

গ্রেফতারের কোনও স্পষ্ট কারণ জানাতে পারেনি পুলিশ। তবে নারী এবং সমাজকর্মী হওয়ার জন্যই তাকে গ্রেফতার হতে হয়েছিল বলে মনে করা হয়। ২০১৮ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে অপহরণ করা হয় তাকে। সেখান থেকে সৌদিতে নিয়ে গিয়ে গ্রেফতার করা হয় লুইজানকে। তখন থেকেই জেলেই ছিলেন তিনি।

এসব অবশ্য দমাতে পারেনি তাকে। তাকে যতবার গ্রেফতার করা হয়েছে, তত সামাজিক বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন তিনি। আর যত সোচ্চার হয়েছেন তার মুখ বন্ধ করার প্রক্রিয়াও তত নির্মম হয়েছে। তার একটি আন্দোলন বড় সাফল্য পায়। ২০১৮ সালের জুনে নারীদের গাড়ি চালানো থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় সৌদি প্রশাসন। জয় হয় নারীদের। লুইজান তখনও জেলবন্দি।

জেলে থাকার সময় তাকে পরিবারের সঙ্গেও দেখা কিংবা কথা বলতে দেওয়া হত না। লুইজানের সঙ্গে আরও কয়েক জন নারী সমাজকর্মী গ্রেফতার হয়েছিলেন। তাদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দেওয়া হয়। এটা জানতে পেরে জেলেই অনশনে বসেন লুইজান। ৬ দিন অনশনের পর তিনিও পরিবারের সঙ্গে কথা বলার অধিকার ছিনিয়ে নেন। ভিডিও কলে পরিবারের সকলের সঙ্গে কথাও বলেন।

অবশেষে টানা ১০০১ দিন জেলে কাটানোর পর মুক্তি পেয়েছেন লুইজান। তার মুক্তিতে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও। সূত্র: আনন্দবাজার

RELATED ARTICLES
Continue to the category

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments