দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটের দিনক্ষণ কবে তা জানা যাবে চলতি বছরের অক্টোবরে। ভোটের তফসিলকে কেন্দ্র করে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয় ব্যস্ত সময় পার করছে। ইতিমধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সব ধরনের কেনাকাটার টেন্ডার সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। এসব কেনাকাটার ব্যয় নির্বাহ হবে আগামী বাজেটে বরাদ্দ থেকে। এবার ব্যালট বাক্সের সরঞ্জাম আনা হবে বিদেশ থেকে আর আসনওয়ারি ব্যালট পেপার ছাপার কাজ করছে বিজি প্রেস।
জানতে চাইলে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ দেশ রূপান্তরকে বলেন, নির্বাচন কবে হবে সেই দিনক্ষণ এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এ বিষয়ে এখনো কোনো বৈঠকও হয়নি। আগামী অক্টোবরে নির্বাচনী তফসিলের সিদ্ধান্ত নিয়ে বসার সিদ্ধান্ত রয়েছে। ওই বৈঠকে ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা করা হবে। তবে নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে যত ধরনের প্রস্তুতি প্রয়োজন, বিশেষ করে কেনাকাটা দরকার সেটি সম্পন্ন করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে টেন্ডার হয়েছে। আশা করি, যথাসময়ে এসব সরঞ্জাম ইসিতে এসে পৌঁছাবে। তিনি আরও জানান, সংসদ ও উপজেলা নির্বাচনে ব্যবহৃত মালামাল কেনায় ই-জিপি পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে। এর আগে কখনো এ পদ্ধতি অনুসরণ হয়নি। গত ২৭ এপ্রিল দরপত্র উন্মুক্ত করা হয়েছে। এবার ১০ ধরনের সামগ্রী কেনা হচ্ছে। এই কেনাকাটার ব্যয় আগামী বাজেটে বরাদ্দ থেকে নির্বাহ হবে বলে জানান তিনি।
তবে একটি সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছরের ডিসেম্বরের শেষ দিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার লক্ষ্যে কাজ করছে নির্বাচন কমিশন। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগও ডিসেম্বরের শেষ দিকে অথবা আগামী বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলে যাচ্ছে। সেই লক্ষ্যে নির্বাচনী প্রস্তুতি হিসেবে তারা সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। সারা দেশে বিভিন্ন মাধ্যমে জনসংযোগসহ মতবিনিময়ের কাজ করছে। সংসদ সদস্যরা নিয়মিত নিজ নিজ এলাকায় যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাও গণভবনে তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে বসে ধারাবাহিকভাবে মতবিনিময় করছেন। অবশ্য মাঠে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা বলছে। তারা এ সরকার ও ইসির অধীনে কোনো নির্বাচনেই যাবে বলে ঘোষণা দিয়েছে।
জানা গেছে, দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সমঝোতা হোক বা না হোক সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি এগিয়ে রাখছে ইসি। কেননা, এখন থেকে প্রস্তুতি না নিলে এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন হলে অল্প সময়ের মধ্যে ইসি গুছিয়ে উঠতে পারবে না।
সংবিধান অনুযায়ী, সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়েছিল। সেই হিসাবে ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে ভোট করতে হবে। ইসি সাধারণত মনোনয়নপত্র জমা ও বাছাই, প্রত্যাহারের শেষ সময় এবং ভোটের প্রচারের জন্য সর্বোচ্চ তিন সপ্তাহ সময় বিবেচনা করে ভোটের তারিখ নির্ধারণ করে। তফসিল ঘোষণা থেকে ভোট পর্যন্ত ৪০-৪৫ দিন সময় দেওয়া হয়ে থাকে। সে হিসাবে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে বা জানুয়ারির প্রথমার্ধে ভোটের তারিখ নির্ধারিত হতে পারে।
ইসি সূত্র বলছে, এবার সরঞ্জাম কেনায় পনেরো দিন কমিয়ে ৬০ দিন করা হয়েছে। আগে ৭৫ দিনের মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে। এবার ব্যালট বাক্স স্বচ্ছ নয়, বরং অর্ধ-স্বচ্ছ কেনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগের বাক্সে ভোটার ভোট দিলে কোন প্রতীকে ভোট পড়েছে তা বাইরে থেকে দেখে বোঝা যেত। ভোটারের গোপনীয়তা রক্ষা না হওয়ায় সেগুলো নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। দেশীয় দুটি কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা শেষে তাদের কাছে নমুনাও সরবরাহ করেছে ইসি। এগুলো ইউরোপের দেশ থেকে আমদানি করা হবে বলে জানা গেছে। এবার প্রায় পৌনে দুই লাখ বাক্স কেনা হচ্ছে।
জানা গেছে, এবার কাগজে মুদ্রিত ব্যালট পেপারে ছাপানোর কাজ করছে সরকারি প্রতিষ্ঠান বিজি প্রেস। ব্যালট পেপার ছাপার জন্য বিজি প্রেসকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তারা নিজস্ব পদ্ধতিতে কাগজ সংগ্রহ করে ইসির চাহিদা অনুযায়ী ব্যালট পেপার সরবরাহ করবে।
ইসির সংশ্লিষ্ট শাখা তথ্য মতে, প্রতিটি ব্যালট বাক্সের জন্য পাঁচটি করে ১৫ লাখ ব্যালট বাক্সের লক, ২০ হাজার কেজি গালা, ৫০ হাজারের মতো চটের বস্তা, ৪০ হাজারের মতো ঘানি ব্যাগ, এক লাখের মতো ব্রাশ সিল, সমপরিমাণ অফিশিয়াল সিল, ৪ লাখ স্ট্যাম্প প্যাড, ৮ লাখের মতো অমোচনীয় কালির কলম, ৭ লাখের মতো মার্কিন সিল কেনার ই-টেন্ডার করা হয়েছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ৬ মাসের মধ্যেই উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আলাদা দরপত্রের ঝামেলা এড়াতে বড় পরিসরে কেনাকাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি।
Leave a Reply