সেলিনা হায়াত আইভী নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি। তার বাবা আলী আহাম্মদ চুনকা নারায়ণগঞ্জ জেলা ও শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। স্বাধীনতার পর তিনি দুই মেয়াদে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৮৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি তিনি মারা যান।
আলী আহাম্মদ চুনকার পাঁচ সন্তানের মধ্যে সবার বড় হলেন ডা. সেলিনা হায়াত আইভী। আইভী ১৯৭৯ সালে ট্যালেন্টপুলে জুনিয়র স্কলারশিপ পান এবং ১৯৮২ সালে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় স্টারমার্কসহ উত্তীর্ণ হন। এরপর তিনি ১৯৮৫ সালে রাশিয়ান সরকারের স্কলারশিপ নিয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানে শিক্ষাগ্রহণের জন্য ওডেসা পিরাগোব মেডিক্যাল ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন এবং ১৯৯২ সালে কৃতিত্বের সঙ্গে ডক্টর অব মেডিসিন ডিগ্রি লাভ করেন।
১৯৮৬ সালে আইভী বৃত্তি নিয়ে পড়তে যান তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের ওদেসা নগরের পিরাগভ মেডিকেল ইনস্টিটিউটে। পরবর্তীতে ১৯৯২-৯৩ সালে ঢাকা মিডফোর্ট হাসপাতালে ইন্টার্নি সম্পন্ন করেন। ডা. আইভী তার সুদীর্ঘ শিক্ষা জীবনের পর ১৯৯৩-৯৪ সালে মিডফোর্ট হাসপাতালে এবং ১৯৯৪-৯৫ সালে নারায়ণগঞ্জ ২০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে অনারারি চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেন।
১৯৯৩ সালে তিনি নারায়ণগঞ্জ শহর আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০০৩ সালে অনুষ্ঠিত বিলুপ্ত নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
নির্বাচনের মাত্র ১৭ দিন আগে নিউজিল্যান্ড থেকে তাকে উড়িয়ে দেশে আনা হয়। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দিয়ে তার পক্ষে নারায়ণগঞ্জে জোর প্রচারণা চালান দলের কেন্দ্রীয় অনেক নেতা। তখন বিএনপি সরকার ক্ষমতায় থাকার পরও বিপুল ভোটে জয়ী হন তিনি। ওই বছরের ২ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণ করে ২০১১ সালের ২৫ জুন পর্যন্ত একটানা পৌর চেয়ারম্যান পদে ছিলেন। ২০১১ সালে ৫ মে নারায়ণগঞ্জের তিনটি পৌরসভা যথাক্রমে নারায়ণগঞ্জ, সিদ্ধিরগঞ্জ ও কদমরসুলকে একীভুত করে স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) প্রতিষ্ঠা বিধিমালা ২০১০ এর বিধি ৬-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার প্রায় ৭২.৪৩ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠা করে।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২০১১ সালের ৩০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত প্রথম সিটি নির্বাচনে ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী মেয়র নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে এক লাখের বেশি ভোটের ব্যবধানে সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী।
২০২১ সালের ৩০ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষনা করে নির্বাচন কমিশন। বিএনপি দলীয়ভাবে এ নির্বাচন বয়কট করলেও দলের কেন্দ্রীয় নেতা তৈমূর আলম খন্দকার স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী হিসেবে হাতি প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেন। নির্বাচনে অংশ নেয়ায় তাকে প্রথমে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এবং পরে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
তারপরও স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মী ও নগরীর বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সমর্থনে ভোটযুদ্ধে নামেন তৈমূর।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে ভোটগ্রহণ পর্যন্ত বড় ধরনের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে তৃতীয়বারের মতো নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ৬৯ হাজার ভোটের ব্যবধানে মেয়র নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী সেলিনা হায়াত আইভী।