Friday, May 3, 2024
HomeScrollingকর্মকর্তার যোগসাজশে ডিবিবিএল বুথ থেকে আড়াই কোটি টাকা লোপাট

কর্মকর্তার যোগসাজশে ডিবিবিএল বুথ থেকে আড়াই কোটি টাকা লোপাট

অনলাইন ডেস্ক |

ডাচ বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের (ডিবিবিএল) বিভিন্ন এটিএম বুথ থেকে অভিনব কায়দায় দুই কোটি সাতান্ন লাখ টাকা লোপাট করেছে একটি চক্র। এ চক্রের হোতা ডিবিবিএল এর এডিসি ডিভিশনের (ঢাকা) সিনিয়র অফিসার মীর মো. শাহারুজ্জামান ওরফে রনি। তার প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় তিন বছর ধরে ৬৩৭ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে এটিএম বুথে  ১৩৬৩ লেনদেনের মাধ্যমে এ টাকা তুলে নেয় চক্রটি।

পুলিশ ও ব্যাংক কৃর্তৃপক্ষ জানায়, টাকা তোলার আগ মুহুর্তে এটিএম বুথ কর্তৃক অ্যাকাউন্টের বিপরীতে যে জার্নাল সৃষ্টি হয় তা ডাচ বাংলা ব্যাংকের জার্নাল সংরক্ষণ সার্ভারে যাওয়ার আগে ব্যাংকটির অফিসার শাহারুজ্জামান পরিবর্তন করে নিত। এ ছাড়া জার্নালের বিভিন্ন পরিবর্তন করে সাকসেসফুল ম্যাসেজকে আনসাকসেসফুল ম্যাসেজে পরিণত করে দিতেন তিনি।

পলিশ জানায়, চক্রটি প্রথম প্রতারণা করে ২০১৮ সালে। পরে ২০১৯ ও ২০ সালে প্রতারণার মাধ্যমে এ টাকা আত্মসাৎ করে। অভ্যন্তরীণ অডিটে বিষয়টি ধরা পড়ায় গত ৮ এপ্রিল রাজধানীর মতিঝিল থানায় ছয়জনকে আসামি করে মামলা করেন ডিবিবিএল এর ভাইস প্রেসিডেন্ট ও বিভাগীয় প্রধান (এডিসি ডিভিশন) মো. মশিউর রহমান।

এ বিষয়ে মশিউর রহমান বলেন, ‘চক্রটি প্রথম ২০১৮ সাালে দুটি এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলে নেয়। পরে ২০১৯ ও ২০ সালে মূলত তারা এ টাকা আত্মসাৎ করে। বিষয়টি আমাদের ব্যাংকের ইনর্টার্নাল অডিটে ধরা পড়লে আত্মগোপনে চলে যায় মূল অভিযুক্ত শাহারুজ্জামান ওরফে রনি। এরপর আমরা মামলা করি।’

তিনি বলেন, শাহারুজ্জামান ওরফে রনি ২০১০ সালের ৩ ফ্রেব্রুয়ারি ডিবিবিএল এর এডিসি ডিভিশনে যোগদান করেন । ৮ নভেম্বর ২০২০ পর্যন্ত তিনি এটিএম মনিটরিং রোস্টার টিমে কর্মরত ছিলেন। ২০২১ সালের ৩১ জানুয়ারি থেকে তিনি পলাতক আছেন।’

ব্যাংকের নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি ছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি ছিল না। আমাদের অডিটে তো ধরা পড়েছে তার সংশ্লিষ্টতা।’

এদিকে মতিঝিল থানায় করা মামলার প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার দুপুর থেকে ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে এ চক্রের চারজনকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ।

গ্রেপ্তাররা হলেন, মূল অভিযুক্ত শাহারুজ্জামানের স্ত্রী মিসেস সায়মা আক্তার, আল-আমিন বাবু, মেহেদী হাসান ওরফে মামুন ও আসাদুজ্জামান আসাদ। তবে মূল আসামি শাহারুজ্জামান ওরফে রনি পলাতক রয়েছে।

পুলিশ জানায়, তিনি দেশের বাইরে আত্মগোপনে রয়েছে।

এ বিষয়ে বুধবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানান ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।

তিনি বলেন, গ্রেপ্তার আসাদুজ্জামান আসাদ বিসমিল্লাহ বিডি এন্টারপ্রাইজ নামে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এজেন্টশিপ নেয়। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জের বহুল শ্রমিক সম্বলিত প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের স্যালারি অ্যাকাউন্ট করার কথা বলে তাদের বিভিন্ন ডকুমেন্ট সংগ্রহ করে। ডিবিবিএল এজেন্ট কর্তৃক আবেদনকৃত অ্যাকাউন্ট ও এটিএম কার্ড তৈরি হওয়ার পর গ্রাহকের কাছে পাঠানোর উদ্দেশ্যে স্ব-স্ব এজেন্টের কাছে হস্তান্তর করে। কিন্তু গ্রেপ্তার আসাদ কার্ডগুলো তাদের অজান্তে অপর গ্রেপ্তার আল আমিন বাবুর কাছে টাকার বিনিময়ে হস্তান্তর করে। আল আমিন বাবু সংগৃহীত কার্ডগুলোতে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা করে ক্রেডিট করে।

তিনি বলেন, আল আমিন বাবু এই টাকা এটিএম থেকে ডেবিট করার সময় ডিবিবিএল এর আইটি অফিসার তথা চক্রের হোতা মীর মো. শাহারুজ্জামান ওরফে রনির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। টাকা তোলার সময় এটিএম বুথ কর্তৃক একাউন্টের বিপরীতে যে জার্নাল সৃষ্টি হয় তা সংরক্ষণ সার্ভারে যাওয়ার আগে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের আইটি অফিসার সেটি পরিবর্তন করে দেন। ডিবিবিএল এর কর্মকর্তা শাহারুজ্জামান টাকা তোলার আগ মুহূর্তে জার্নাল সংরক্ষণ সার্ভারের সঙ্গে ইএসকিউ এটিএম মনিটরিং সফটওয়্যারের মাধ্যমে যে এটিএম বুথগুলো পরিচালিত হয় সেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। সফটওয়্যারের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে এটিএম বুথের টাকা তোলার সময় যে জার্নাল সৃষ্টি হয় তা সার্ভারে জমা হয় না। এরই ধারাবাহিকতায় শাহারুজ্জামান ‘সাকসেসফুল’ মেসেজকে ‘আনসাকসেসফুল’ মেসেজে রূপান্তরিত করার ফলে উক্ত মেসেজ পরবর্তীতে জার্নাল সার্ভারে গেলেও তা আর সাকসেসফুল মেসেজ হিসেবে গণ্য হয় না। অর্থাৎ বুথ থেকে টাকা উত্তোলিত হওয়ার পরও মেসেজ আনসাকসেসফুল দেখায়।

তিনি বলেন, গ্রেপ্তার আল আমিন বাবু পূর্বের পরিকল্পনা অনুযায়ী ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের হটলাইনে ফোন করে অভিযোগ করে যে, সে এটিএম বুথ থেকে টাকা তোলার সময় তার ব্যালেন্স কেটে নিয়েছে কিন্তু টাকা হাতে পায় নাই। এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের দায়িত্বরত অফিসার অভিযোগের সত্যতা যাচাই করেন। ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের অফিসার যখন দেখেন যে, টাকা তোলার জন্য কার্ডটি এটিএম বুথে প্রবেশ করানো হয়েছিল কিন্তু জার্নালটি ‘আনসাকসেসফুল’ তখন ওই অফিসার অভিযোগের প্রেক্ষিতে উক্ত অ্যাকাউন্টে ব্যালেন্স সমন্বয় করে দেন।

RELATED ARTICLES
Continue to the category

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments