Saturday, July 5, 2025
HomeScrollingপ্রায় অর্ধেক বাল্যবিয়ের কারণ ‘নিরাপত্তাহীনতা’: গবেষণা

প্রায় অর্ধেক বাল্যবিয়ের কারণ ‘নিরাপত্তাহীনতা’: গবেষণা

বাল্যবিয়ের প্রধান কারণগুলোর মধ্যে অভিভাবকদের মধ্যে ‘নিরাপত্তাহীনতা’ একটি বড় কারণ। এটি প্রায় অর্ধেক বাল্যবিয়ের কারণ বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে।

কোস্ট ফাউন্ডেশন আয়োজিত এক ওয়েবিনারে এক গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করতে গিয়ে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।

এতে বলা হয়, সরকারের নানা উদ্যোগের ফলে জাতীয় পর্যায়ে বাল্যবিয়ের হার কমলেও ভোলা জেলায় এখনো বাল্যবিয়ের হার উদ্বেগজনক।

গবেষণায় দাবি করা হয়, ১৫ বছরের কম বয়সীদের বিয়ের হার ১৫.৫ শতাংশ হলেও ভোলায় এই হার কিছুটা বেশি, প্রায় ১৯ শতাংশ। অন্যদিকে ১৮ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে বিয়ের জাতীয় হার ৫১.৪ শতাংশ হলেও, ভোলায় এই হার অনেক বেশি, ৬০.৩%।

কোস্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত ‘শিশু বিয়ের কারণ, প্রভাব ও প্রতিরোধের উপায়’ শীর্ষক এই ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি।

সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের শিশু সুরক্ষা প্রকল্পের পরিচালক এস এম লতিফ, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, নারীপক্ষের সদস্য শিরীন হক, ইউনিসেফ বাংলাদেশের শিশু সুরক্ষা প্রধান নাতালি ম্যাককাউলি, শিশু সুরক্ষা বিশেষজ্ঞ মুনিরা হাসান, ইউনিসেফ বরিশাল বিভাগের ফিল্ড প্রধান এ এইচ তৌফিক আহমেদ।

ভোলা জেলার চারটি উপজেলায় পরিচালিত গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন কোস্ট ফাউন্ডেশনের যুগ্ম পরিচালক ইকবাল উদ্দিন।

এতে বলা হয়, বাল্যবিয়ের প্রধান কারণগুলোর মধ্যে অভিভাবকদের মধ্যে  ‘নিরাপত্তাহীনতা’ একটি বড় কারণ। গবেষণায় অংশ নেওয়া ৪১.৬ শতাংশই নিরাপত্তাহীনতাকেই বাল্যবিয়ের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেন।

এছাড়াও অন্য কারণগুলো হলো- পারিবারিক সম্মান রক্ষা (৪১ শতাংশ), ভালোপাত্র পেলে বিয়ে দিয়ে দেওয়া (৪৭ শতাংশ), সচেতনতার অভাব (৪৪.৯ শতাংশ), দারিদ্র্য (৫০.৯ শতাংশ)। গবেষণায় দেখা গেছে ৮ম শ্রেণী পাস করার ৬৭.৩ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়ে যায়।

মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, সরকারের অনেক উদ্যোগের পরেও সমাজে মেয়েদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিজনিত সমস্যা রয়ে গেছে। এই সমস্যা সমাধানে মেয়েদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করে তুলতে হবে, তাদের শিক্ষিত করে তুলতে হবে। বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে স্থানীয় ইউপি মেম্বার-চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে।

শিরিন হক বলেন, শুধু শাস্তি নয়, বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে প্রয়োজন সাংস্কৃতিক পরিবর্তন, প্রয়োজন সামাজিক আন্দোলন। সমন্বিত যৌন শিক্ষা বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

শাহীন আনাম বলেন, বাল্যবিয়ে এবং এর নেতিবাচক প্রভাব রোধ করতে ঝরে পড়া মেয়েদের স্কুলে ফেরত নেওয়া খুব প্রয়োজন। যাদের বিয়ে হয়েই গেছে, তাদের জন্য প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে। উপজেলাভিত্তিক বাল্যবিয়ে নিরোধ কমিটিসহ সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসতে হবে।

এসএম লতিফ বলেন, একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, ৩৩ শতাংশ অভিভাবক বাল্যবিয়েকে গ্রহণযোগ্য মনে করেন। এ অবস্থা বদলাতে হবে। বাল্যবিয়ের কারণ অঞ্চলভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়। তাই এ জন্য অঞ্চলভিত্তিক কর্মসূচি প্রয়োজন।

নাতালি ম্যাককাউলি বলেন, সামাজিক স্বেচ্ছাসেবকদের বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে সক্রিয় করতে হবে। মানুষের আচরণগত পরিবর্তনে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

এ এইচ তৌফিক আহমেদ বলেন, স্কুল পর্যায়ে মেয়ে শিশুদের শিক্ষার ওপর একটা বিশেষ নজরদারি প্রয়োজন। অষ্টম শ্রেণীর পর যারা ঝরে পড়ে, কেন ঝরে পড়ে, কোথায় যায়- এই বিষয়টা নজরদারি করতে পারলে, বাল্যবিয়ে কমিয়ে আনতে পারে।

রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, বাল্যবিয়ে বন্ধে জরুরি ভিত্তিতে যেসব উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন সেগুলো হলো- স্থানীয় প্রশাসন ও ইউনিয়ন পরিষদকে সক্রিয় করা, গ্রামে গ্রামে কমিটি গঠন, নিরাপত্তা বৃদ্ধি, উপবৃত্তির আওতা ও টাকার পরিমাণ বৃদ্ধি, ভুয়া জন্ম নিবন্ধন বন্ধ করা, রেজিস্টার্ড কাজী ছাড়া বিয়ে পড়ানো বেআইনি মর্মে প্রচারণা চালানো ইত্যাদি।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- মনপুরা ইউপি সদস্য সুলতানা রাজিয়া, লালমোহনের ইউপি সদস্য মো. কামাল উদ্দিন মিঝি, চরফ্যাশনের ভাইস চেয়ারম্যান আকলিমা বেগম, ইউনিসেফের শিশু সুরক্ষা বিশেষজ্ঞ মনিরা হাসান, ইউনিসেফের জামিল হাসান, এফএনবি’র মো. রফিকুল ইসলাম, এডাব’র এ কে এম জসিম উদ্দিন, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের কাশফিয়া ফিরোজ।

RELATED ARTICLES
Continue to the category

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments