লাইভ নিউজ ডেস্ক।।
বুধবার পিনাক-৬ দুর্ঘটনার সাত বছর। আজকের এ দিনে পদ্মায় স্মরণকালের ভয়াবহ নৌ দুর্ঘটনায় আড়াই শতাধিক যাত্রী নিয়ে ডুবে যায় পিনাক-৬ নামের লঞ্চটি।
সরকারি হিসেবে, এতে ৪৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। নিখোঁজ থাকে ৬৪ জন। উদ্ধার হওয়া লাশের মধ্যে ২১ জনকে মাদারীপুরের শিবচর পৌর কবরস্থানে অজ্ঞাতনামা হিসেবে দাফন করা হয়। সাত বছরেও তাদের কারো পরিচয় চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি।
জানা যায়, কাওড়াকান্দি-শিমুলিয়া নৌরুটে (বর্তমান বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুট) পদ্মা নদীতে ২০১৪ সালের ৪ আগস্ট এমভি পিনাক-৬ লঞ্চ ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে ঢাকা যাচ্ছিল। মাঝপথে সলিল সমাধি হয়েছিল দুশতাধিক তাজা প্রাণের।
শিবচরে পিনাক ৬ ডুবিতে স্বজন হারা কয়েকটি পরিবারের সঙ্গে আলাপ করলে তারা জানায়, এ দিনটিতে তারা হারানো স্বজনদের আত্মার শান্তি কামনায় দোয়া-মাহফিল করে থাকেন।
জানা যায়, পাঁচ্চর ইউনিয়নের লপ্তেরচর এলাকার নিহত মিজানুর রহমান, তার স্ত্রী ও দুই সন্তান লঞ্চডুবিতে মারা যান। এমনই আরেক পরিবার উপজেলার সন্যাসীচর ইউনিয়ের দৌলতপুর গ্রামের। ঢাকায় ফেরার পথে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে পিনাক-৬ ডুবিতে মারা যান ফরহাদ মাতুব্বর। স্ত্রী শিল্পী, এক বছর বয়সী সন্তান ফাহিম ও শ্যালক বিল্লালসহ সলিল সমাধী ঘটে তার। যাদের লাশও পাওয়া যায়নি।
শিবচরের কাদিরপুর এলাকার মেধাবী দুই বোন ও তাদের এক খালাতো বোনেরও মর্মান্তিক মৃত্যু হয় এ দুর্ঘটনায়। ঈদের ছুটি কাটিয়ে বাবার সঙ্গে ঢাকা ফিরছিল তারা। লঞ্চ ডুবে যাওয়ার পর পদ্মার প্রবল স্রোতে বাবা ভেসে উঠতে পারলেও সন্তানদের আর বাঁচাতে পারেননি।
নিহত হীরার বাবা আব্দুল জলিল মাতুব্বর জানান, মেয়ে হারানো বেদনা এখনো কাঁদায়। আমি চাই আমার মতো যেন কোনো বাবাকে এভাবে তার মেয়েকে হারাতে না হয়। তাছাড়া লঞ্চ মালিকদের অনুরোধ করব যাতে তারা ধারনক্ষমতার বেশি যাত্রী না তোলে এবং প্রশাসনের কঠোর নজরদারি যেন থাকে।
মাদারীপুর বাংলাবাজার ঘাটের বিআইডব্লিউটিএ, ট্রাফিক ইন্সেপেক্টর মো. আক্তার হোসেন জানান, পিনাক-৬ লঞ্চ ডুবির পর খুব সাবধানতার সঙ্গে লঞ্চ চলাচল করা হয়। যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ধারণক্ষমতার বাইরে যাত্রী ওঠানো হয় না। এ ছাড়া ফিটনেসবিহীন কোনো লঞ্চ চলাচল করতে দেওয়া হয় না।
শিবচর পৌর মেয়র আওলাদ হোসেন খান জানান, ‘পিনাক-৬ ডুবিতে উদ্ধার যেসব লাশ সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি তা পৌর কবরস্থানে পৌরসভার নিজস্ব অর্থায়নে দাফন করা হয়। তবে এ পর্যন্ত লাশের খোঁজে কেউ আসেনি।’
শিবচর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আসাদুজ্জামান জানান, ‘পিনাক-৬ ডুবিতে অনেকেই মারা গেছেন। লঞ্চ ডুবিতে নিঁখোজও হয়েছেন প্রায় অর্ধশত মানুষ। যে লাশগুলো শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি তাদের ডিএনএ নমুনা পাঠানো হয়। বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুটে লঞ্চ চলাচলে কঠোর রয়েছে প্রশাসন। আমরা সবসময় লঞ্চ মালিক ও শ্রমিকদের নির্দেশ দিয়েছি অতিরিক্ত যাত্রী পারাপার না করতে। নিয়মিত লঞ্চে জীবনরক্ষাকারী সরঞ্জামসহ লাইফ জ্যাকেট, বয়া লঞ্চে রয়েছে কিনা সে ব্যাপারে নিয়মিত মনিটরিং করছি।