Friday, March 29, 2024
HomeScrollingম্যাক্রোঁ-বাইডেন ফোনালাপ

ম্যাক্রোঁ-বাইডেন ফোনালাপ

অনলাইন ডেস্ক।।

গত সপ্তাহে স্বাক্ষরিত অকাস সামরিক চুক্তি ঘিরে তিক্ততা অবসানে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্র। বুধবার ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইম্মানুয়েল ম্যাক্রোঁ এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আধা ঘণ্টার বেশি টেলিফোনে কথা বলেছেন, এবং আসছে অক্টোবর মাসের শেষে ইউরোপে বৈঠক করবেন এই দুই নেতা।

গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে অকাস সামরিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ওই চুক্তির কারণে ফ্রান্সের সাথে করা অস্ট্রেলিয়ার চার হাজার কোটি ডলারের ১২টি সাবমেরিন নির্মাণের চুক্তিটি বাতিল করা হয়।

টেলিফোনে কথা বলার পর ইস্যু করা এক যৌথ বিবৃতিতে দুই প্রেসিডেন্ট বলেছেন, মিত্র দেশগুলোর মধ্যে খোলামেলা আলোচনার মাধ্যমেই পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটবে।

প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছেন, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ফ্রান্স ও ইউরোপের সংযুক্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

যৌথ বিবৃতিতে আরো বলা হয়, নেটোকে শক্তিশালী করার জন্য শক্তিশালী ইউরোপের প্রয়োজনীয়তাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে যুক্তরাষ্ট্র।

এর আগে অকাস চুক্তির কারণে ফরাসী প্রেসিডেন্ট ক্ষিপ্ত হয়ে ওয়াশিংটন এবং ক্যানবেরা থেকে ফরাসী রাষ্ট্রদূতদের দেশে ফিরিয়ে আনেন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূতদের দেশে ফিরিয়ে আনার ঘটনা ১৭৮৯ সালে ফরাসী বিপ্লবের পর আর ঘটেনি। এই প্রথম এত বড় ঝুঁকি নিয়েছিল ফ্রান্স।

ফ্রান্সের এত ক্ষিপ্ত হবার কারণ ছিল প্রধানত তিনটি- একটা কারণ, অকাস চুক্তি করার আগে অস্ট্রেলিয়া ফ্রান্সের সাথে করা ডিজেলচালিত ১২টি সাবমেরিন নির্মাণের চুক্তিটি বাতিল করে, যা ছিল ৪ হাজার কোটি ডলারের এক বিশাল চুক্তি, এবং এটি বাতিল হওয়ায় ফ্রান্সের ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে।

তা ছাড়া ফ্রান্সের ভাষ্য অনুযায়ী তাদের কিচ্ছু না জানিয়ে অত্যন্ত গোপনে করা এই চুক্তি করে ফ্রান্সকে অপমান করা হয়েছে, এবং নেটো মিত্রদের মধ্যকার বিশ্বাস ও আস্থা এতে ভেঙে গেছে।

তা ছাড়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় ফ্রান্সের নিজস্ব স্বার্থ আছে। সেখানে নিউ ক্যালেডোনিয়ার মত দ্বীপগুলোতে বহু ফরাসী নাগরিক বাস করেন, এবং কয়েক হাজার ফরাসী সৈন্যও মোতায়েন আছে। তাই অস্ট্রেলিয়ার সাথে সাবমেরিন চুক্তি বাতিল হওয়ায় ফ্রান্স ওই অঞ্চলে তাদের প্রভাব বৃদ্ধির একটি সুযোগ হারালো।

ম্যাক্রোঁ মনে করেন, এই সাবমেরিন-কাণ্ডে এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে নেটো জোট এখন পারস্পরিক বিশ্বাসের অভাবে পঙ্গু এবং অকার্যকর হয়ে পড়েছে। যে জিনিসটা আঠার মত সবাইকে একসাথে রেখেছিল, তা অদৃশ্য হয়ে গেছে। ফরাসীরা মনে করছে সাবমেরিন চুক্তি যেভাবে করা হয়েছে তাতে কোন স্বচ্ছতা ছিল না এবং এটা না থাকলে জোট কথাটার কোন অর্থ নেই।

তবে বুধবার বাইডেনের সঙ্গে ম্যাক্রোঁর ফোনালাপের পর এখন ওয়াশিংটনে ফরাসী রাষ্ট্রদূতকে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফ্রান্স। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরায়ও ফরাসি রাষ্ট্রদূতকে ফেরত পাঠানো হবে কিনা তা বলা হয়নি।

বিবিসির ওয়াশিংটন সংবাদদাতা নোমিয়া ইকবাল বলছেন, এটি আমেরিকানদের ‘ক্ষমা ভিক্ষা না করে ক্ষমা চাওয়া’র একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

মানে হচ্ছে যে প্রক্রিয়ায় চুক্তি হয়েছে অর্থাৎ তেমন আলাপ-আলোচনা ছাড়াই, সেজন্য ক্ষমা চাওয়া, কিন্তু যে চুক্তি করা হয়েছে তার জন্য নয়।

বিবিসি এমন একটি ছবি পেয়েছে যেখানে দেখা যাচ্ছে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর সাথে বলা সময় প্রেসিডেন্ট বাইডেন হাসছেন, যাতে সব কিছু ঠিকঠাক আছে এমন একটি বার্তা দেওয়া হচ্ছে।

যৌথ বিবৃতির বক্তব্য খুব সাদামাটা হলেও একে অর্থপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। সাধারণ এ ধরণের টেলিফোন আলাপের পর প্রত্যেক দেশ পৃথক বিবৃতি ইস্যু করে।

কিন্তু যৌথ বিবৃতি প্রকাশের মাধ্যমে দুই দেশের প্রেসিডেন্ট তিক্ততা ভুলে ঐক্যবদ্ধ হবার বার্তা দিতে চেয়েছেন।

গত সপ্তাহে স্বাক্ষরিত অকাস সামরিক চুক্তিকে মূলত দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের প্রভাব মোকাবেলার সবচাইতে তাৎপর্যপূর্ণ চেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এত গুরুত্বপূর্ণ আর কোন নিরাপত্তা চুক্তি স্বাক্ষর হয়নি।

এদিকে, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং অস্ট্রেলিয়ার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে আগামী সপ্তাহে অনুষ্ঠেয় একটি বৈঠক বাতিল করা হয়েছে।

অকাস চুক্তি স্বাক্ষরের পর ইইউ-অস্ট্রেলিয়া, এবং ইইউ-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এটি তৃতীয় আনুষ্ঠানিক বৈঠক যা স্থগিত করা হলো।

RELATED ARTICLES
Continue to the category

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments