ঈদে ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তি দূর করতে ও যানবাহন পারাপার স্বাভাবিক রাখতে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে চলবে ২১টি ফেরি ও লঞ্চ। এ ছাড়া ঈদের তিন দিন আগে ও তিন দিন পরে ট্রাক পারাপার বন্ধ থাকবে দৌলতদিয়া পাটুরিয়া রুটে। তবে শুধু কাঁচামালভর্তি ট্রাক পার হবে। যাত্রীদের নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে দৌলতদিয়া ঘাটে।
সোমবার (১৮ এপ্রিল) বেলা ১১টার দিকে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে ঈদ উপলক্ষে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার নির্বিঘ্ন করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্টদের সমন্বয় সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
এদিকে, বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হওয়ায় ঈদে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটের অতিরিক্ত যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বাড়বে বলে ধারণা করছে প্রশাসনসহ ঘাট সংশ্লিষ্টরা। ফলে যাত্রী হয়রানি ও দুর্ভোগ কমাতে বিআইডব্লিউটিসি, বিআইডব্লিউটিএসহ স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আন্তরিক হওয়ার পরামর্শ দেন স্থানীয় সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলীসহ প্রশাসনের কর্তারা।
জেলা প্রশাসক আবু কায়সার খানের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন- রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সালাউদ্দিন, গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আজিজুল হক খান, গোয়ালন্দ পৌরসভার মেয়র মো. নজরুল ইসলাম, এনএসআই রাজবাড়ী অফিসের উপপরিচালক শরিফুল ইসলাম, বিআইডাব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট শাখার ব্যবস্থাপক প্রফুল্ল চৌহান, বিআইডাব্লিউটিএ এর পোর্ট অফিসার শাহ আলম মিঞা, রাজবাড়ী বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুরাদ হাসানসহ অনেকে।
রাজবাড়ী জেলা বাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মো. মুরাদ হাসান বলেন, সারা বছরই দুর্ভোগ থাকে দৌলতদিয়া ঘাটে। কয়েকদিন পরেই ঈদ। তখন যানবাহন ও যাত্রীর চাপ আরও বাড়বে। কিন্তু আমরা পরিবহনের চালক ও যাত্রীদের কাছ থেকে একটা অভিযোগ পেয়ে থাকি যে, ফেরির ধীরগতি। আসন্ন ঈদে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার নির্বিঘ্ন রাখতে ফেরির ট্রিপ সংখ্যা বাড়ানোর দাবি জানান তিনি।
এ ছাড়া ঈদে যাত্রীরা যাতে বাড়তি ভাড়ার জন্য হয়রানির শিকার না হয় সে জন্য বাসভাড়া সমন্বয় করে নেওয়া হবে এবং ঈদের আগেই নতুন ভাড়ার চার্ট টাঙানো হবে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া ঘাট ব্যাবস্থাপক প্রফুল্ল চৌহান বলেন, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে বর্তমানে ১৯টি ফেরি চলাচল করছে। ঈদের আগে আরও দুটি ফেরি যুক্ত হবে। মোট ২১টি ফেরি চলবে ঈদের সময়। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ভোগান্তি থাকবে না
দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট সুপারভাইজার মো. আলী বলেন, বর্তমানে ১৭টি লঞ্চ চলাচল করছে। ঈদের আগে ও পরে ২১টি লঞ্চ চলবে এবং সব লঞ্চের ফিটনেস আছে।
বিআইডব্লিউটিএ আরিচা বন্দরের পোর্ট অফিসার শাহ আলম মিয়া বলেন, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ও আরিচা-কাজীরহাট নৌরুটে নাব্যতা সংকট নেই। ঈদে এসব রুটে ৩৩টি লঞ্চ ও প্রায় ৭০টি স্পিড বোট চলাচল করবে এবং দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ার উভয় প্রান্তে পাঁচটি করে ফেরিঘাট সচল থাকবে। বর্তমানে দৌলতদিয়ায় চারটি ঘাটের সঙ্গে আরও একটি ঘাট প্রস্তুত করা হয়েছে। সবমিলিয়ে পাঁচটি ঘাট সচল থাকবে। নতুন করে ২ নম্বর ঘাট প্রস্তুত করা হয়েছে। বিআইডব্লিউটিসি ইচ্ছা করলে ঘাটটি ব্যবহার করতে পারবে।
সভায় রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. সালাহউদ্দিন বলেন, ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন রাখতে ঘাট এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে। এ ছাড়া ঈদে মহাসড়কে চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মলমপার্টির দৌরাত্ম কমাতে মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশ থাকবে এবং ২৪ ঘণ্টায় হাইওয়ে পুলিশ কাজ করবে। ফেরি সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে যাত্রীরা স্বস্তিতেই তাদের প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ করতে পারবে।
রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক আবু কায়সার খান বলেন, সম্মিলিতভাবে কাজ করলে এবার ভোগান্তি ছাড়াই মানুষ তাদের পরিবার-পরিজনদের সঙ্গে ঈদ করতে পারবে। সবাইকে তার নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে হবে। আশা করছি প্রতিবারের ন্যায় এবারও ঈদ যাত্রায় কোনো ভোগান্তি হবে না।
রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী বলেন, ঈদ যাত্রায় সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কমাতে পুলিশ, বিআইডব্লিউটিএ, বিআইডব্লিউটিসিসহ সকলকেই তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে হবে।