মসজিদ পৃথিবীর সবচেয়ে পবিত্রতম স্থান। সাধারণত নামাজ ও জিকিরের স্থান এটি। এরপরও মসজিদে প্রসঙ্গক্রমে দুনিয়াবি বৈধ কথাবার্তা বলা জায়েজ। এর বৈধতা রাসুলুল্লাহ (স.) এবং সাহাবায়ে কেরামের আমল দ্বারা প্রমাণিত। (দ্রষ্টব্য সহিহ বুখারি: ১/৬৩, ৬৪, ৬৫; রদ্দুল মুহতার (শামী): ১/৬৬২; আললু’লুউল মারসু: ৭৮, সহিহ মুসলিম: ২৮৫)
মসজিদে কথা বলা নিয়ে কিছু জাল বর্ণনা প্রচলিত রয়েছে সমাজে। যেমন এক বর্ণনামতে, ‘মসজিদে কেউ কথা বললে ফেরেশতারা বলে হে আল্লাহর ওলি! চুপ কর। যদি এরপরও কথা বলে তখন ফেরেশতারা বলে, হে আল্লাহর দুশমন! চুপ কর। তারপরও যদি সে ক্ষান্ত না হয় তাহলে বলে, তোমার ওপর আল্লাহর লানত, চুপ কর।’
এটি লোকমুখে হাদিস হিসেবে প্রসিদ্ধ হলেও বাস্তবে এটি কোনো হাদিস নয়, কোনো হাদিসের ভাষ্যও নয়। এর কোনো সনদই খুঁজে পাওয়া যায় না। শায়খ মুহাম্মাদ ইবনে আহমাদ আশশাকিরি (রহ) তাঁর কিতাব ‘আসসুনানু ওয়াল মুবতাদিআত’-এ বর্ণনাটি উল্লেখ করে বলেন- ‘এটি একটি মিথ্যা ও বানোয়াট বর্ণনা। (দ্র. আসসুনানু ওয়াল মুবতাদিআত, পৃ-৫৩)
এরকম আরেকটি জাল বর্ণনা হলো- ‘মসজিদে (দুনিয়াবি) কথাবার্তা নেকিকে এমনভাবে খতম করে, যেমন আগুন কাঠকে জ্বালিয়ে ভস্ম করে।’ একই অর্থবোধক আরেকটি বর্ণনা হলো- ‘মসজিদে কথাবার্তা নেক আমল খায়, যেরূপ পশু ঘাস-খড় খায়।’ এধরণের আরও বানোয়াট বর্ণনা সমাজে প্রচলিত রয়েছে। এসব বর্ণনা কোনো হাদিসের কিতাবে পাওয়া যায় না।
তবে হ্যাঁ, মসজিদকে দুনিয়াবি কথা ও অপ্রয়োজনীয় কথা বলার আসর বানানো জায়েজ নয়। মসজিদ ছাড়াও যেকোনো স্থানে অযথা কথা বলা মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়। রাসুল (স.) বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তির ইসলামের অন্যতম সৌন্দর্য হলো অর্থহীন কথা বা কাজ ত্যাগ করা।’ (তিরমিজি: ২৩১৮) পবিত্র কোরআনে প্রকৃত মুমিনদের পরিচয় বর্ণিত হয়েছে এভাবে— ‘তারা অনর্থক কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকে।’ (সুরা মুমিনুন: ৩)
অতএব মসজিদের আদব রক্ষা করার চেষ্টা করতে হবে। অযথা আলাপ ও উঁচু আওয়াজে কথা না বলা পরিহার করতে হবে। এমনকি মসজিদে কোরআন তেলাওয়াতও এমন উঁচু আওয়াজে করা যাবে না, যে কারণে অন্য মুসল্লির আমলে ব্যাঘাত ঘটে। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বর্ণনা বলেন-রাসুলুল্লাহ (স.) এক ইতেকাফের সময় সাহাবিদেরকে (নামাজে অথবা নামাজের বাইরে) উঁচু আওয়াজে তেলাওয়াত করতে শুনলেন। তখন পর্দা সরিয়ে বললেন, প্রত্যেকেই তার রবের সঙ্গে একান্তে কথা বলে; সুতরাং কেউ যেন কাউকে কষ্ট না দেয়- একে অপরের চেয়ে উঁচু আওয়াজে তেলাওয়াত না করে।’ (সুনানে আবু দাউদ: ১৩৩২)