Friday, April 18, 2025
HomeScrollingপাকিস্তানি প্রেমিকার জন্য ভারতে প্রবেশ, আটক বাংলাদেশি

পাকিস্তানি প্রেমিকার জন্য ভারতে প্রবেশ, আটক বাংলাদেশি

পাকিস্তানি প্রেমিকার সাথে দেখা করতে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন নয়ন মিঁয়া ওরফে আবদুল্লা (২৬) নামে বাংলাদেশি এক যুবক। কিন্তু প্রেমিকার কাছে পৌঁছানোর আগেই ভারত-পাকিস্তান আন্তর্জাতিক সীমান্তের কাছে আত্তারিতে বিএসএফ’র কাছে আটক হন তিনি।

জানা যায়, করোনাভাইরাস ও লকডাউনের বাধা তুচ্ছ করেই কলকাতা থেকে প্রায় ২ হাজার কিলোমিটার দূরে পাঞ্জাবের অমৃতসর পর্যন্ত পৌঁছে যান ঢাকার বাসিন্দা আবদুল্লা। কিন্তু ফেসবুকে আলাপ হওয়া করাচির সেই প্রেমিকার কাছে পৌঁছনোর আগেই কারাগারের চার দেয়ালে কাটাতে হচ্ছে তাকে।

বিএসএফ’র এক সিনিয়র কর্মকর্তা জানান, পাকিস্তান সীমান্তের কাছে উদ্দেশ্যহীনভাবে বিভ্রান্তের মতো আবদুল্লাকে ঘুরতে দেখে বিএসএফ সদস্যদের সন্দেহ হয়। এরপরই তাকে আটক করা হয় এবং শুরু হয় জিজ্ঞাসাবাদ। তার কাছে বাংলাদেশি সিমসহ একটি মোবাইল ফোন এবং কিছু বাংলাদেশি টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।

বিএসএফ’র জিজ্ঞাসাবাদে আবদুল্লা জানায়, তিনি বাংলাদেশের শরিয়তপুরের বাসিন্দা। করাচির বাসিন্দা ওই প্রেমিকা তার আত্মীয় এবং তাকে বিয়ে করার জন্যই সেই সব বাধা অতিক্রম করেই পাসপোর্ট ও ভিসা ছাড়াই তিনি পাকিস্তান সীমান্তের কাছে পৌঁছে যায়।

জিজ্ঞাসাবাদে আবদুল্লা আরও জানান, একটা সময় দুই পরিবারই একে অপরকে জানতো। তাদের পরিবারের সাথে এক সময় সুসম্পর্ক ছিল ওই পাকিস্তানি তরুণীর পরিবারের। কিন্তু ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর আবদুল্লার গোটা পরিবার বাংলাদেশ চলে আসার পর থেকে দুই পরিবারের সম্পর্কে ছেদ ঘটে। পরবর্তীতে সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে ওই পাকিস্তানি তরুণীর সাথে নতুন করে পরিচয় শুরু হয় আবদুল্লার। কার্যত সেই সময় থেকে একে অপরের প্রতি ভালোবাসা জন্মায় তাদের। ভিডিও কলেই আবদুল্লা ওই পাক তরুণীকে বিয়ের প্রস্তাব দেন, তরুণীও সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেন।

জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে প্রথমে সীমান্ত অতিক্রম করে কলকাতায় আসেন আবদুল্লা। সেখান থেকে আগ্রা, দিল্লি ঘুরে আসেন ভারতের পাঞ্জাবে।

বিএসএফ’এর কাছে আবদুল্লা দাবি করেন- করাচি নিবাসী ওই তরুণী তার ভাতিজা এবং সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তাদের যোগাযোগ হয়। ভিডিও কলের মাধ্যমে তারা নিয়মিত কথাও বলতেন। কিন্তু শেষ ১০-১৫ ধরে দিন কোনও যোগাযোগ না হওয়ায় তাকে হারানোর ভয় পান আবদুল্লা। তার মনে হয় ওই তরুণীর পরিবার বোধ হয় অন্য জায়গায় তার বিয়ে দিতে পারে। আর এই আশঙ্কা থেকেই কোনও কিছুর তোয়াক্কা না করে পাকিস্তান সীমান্ত অতিক্রম করার ভাবনা আসে আবদুল্লার।

বিএসএফ’এর এক কর্মকর্তা জানান, গত ৩১ মে আত্তারি-ওয়াঘা সীমান্ত বরাবর ওই যুবককে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়। কাঁটাতারের বেড়া থাকায় যেহেতু তিনি সীমান্ত অতিক্রম করতে পারেননি, তাই সুযোগ খুঁজছিলেন। ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্ত বরাবর নদী পার হয়ে তিনি ভারতে প্রবেশ করেন। কলকাতায় পৌঁছোনোর পর কিছুটা পায়ে হেঁটে কিছুটা গাড়ি করে তিনি দিল্লি পৌঁছান। ঠিক সেভাবেই পাঞ্জাবের লুধিয়ানা, অমৃতসর আসেন।

যেভাবেই হোক আবদুল্লা জানতে পারেন যে, লকডাউনে অমৃতসরে আটকে পড়া বহু পাকিস্তানি নাগরিকদের তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। আর সেই ওই সুযোগ নিতে চেয়েছিলেন তিনি। সেই অনুযায়ী পায়ে হেঁটেই অমৃতসর থেকে আত্তারি সীমান্তে পৌঁছে যান ওই বাংলাদেশি যুবক। হাঁটতে হাঁটতে পথেই ঘুমাতেন এবং রাস্তার ধারে অস্থায়ী ত্রাণ শিবির থেকেই খাবারও খেতেন তিনি।

কিন্তু সীমান্তের কাছে পৌঁছানোর পরই তিনি জানতে পারেন যে, ওই সীমান্ত দিয়ে কোনও আটকে পড়া পাকিস্তানিকেই তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে না। এরপরই ফিল্মি কায়দায় সীমান্ত পেরোনোর চিন্তা করেন ওই বাংলাদেশি যুবক। কারণ সেসময় তার মাথায় ঘুরতে থাকে বলিউড অভিনেতা সানি দেওলের ‘গদর’ (এক প্রেম কাহিনী) ছবির কথা। তদন্তকারী পুলিশকেও তিনি জানান তার পরিকল্পনা ছিল কাঁটাতারের বেড়ার নিচে হামাগুড়ি দিয়ে বা নদী সাঁতরে কিংবা কোনও দালালের হাত ধরে পাকিস্তানে পৌঁছে যাবেন আবদুল্লা। কিন্তু তার আগেই তার স্বপ্ন ভঙ্গ হয়।

ওই যুবককে আটক করে পরবর্তী জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ইতোমধ্যেই ঘারিন্দা থানার পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। থানার কর্মকর্তা গগনদীপ সিং জানান, ওই বাংলাদেশি যুবকের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ফরেনারর্স আইন ও পাসপোর্ট আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আমরা বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে এনেছি এবং বাংলাদেশে ওই যুবকের পরিবারের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করছি।

RELATED ARTICLES
Continue to the category

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments