Tuesday, July 1, 2025
HomeScrollingতিন দিনের বেশি অভিমান

তিন দিনের বেশি অভিমান

আত্মীয়-স্বজন, মুসলিম ভাই-বন্ধুর সঙ্গে স্থায়ী সম্পর্কচ্ছেদ ইসলামে জায়েজ নেই। এমনকি অভিমানেরও সীমারেখা রয়েছে। কেননা এই মান-অভিমান বেশিদিন স্থায়ী হলে সম্পর্ক নষ্ট হতে পারে।  রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘কোনো মুসলমানের জন্য বৈধ নয় যে সে তার ভাইয়ের সঙ্গে তিন দিনের বেশি সময় সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে থাকবে।’ (সহিহ বুখারি: ৬০৭৬)

মান-অভিমান সাময়িকভাবে জায়েজ হলেও সবসময় সতর্কতার মধ্যে থাকতে হয়, যেন অভিমান বা রাগ সীমারেখা অতিক্রম করতে না পারে। সীমারেখা অতিক্রম করে বিদ্বেষে পরিণত হলে হাদিসের ঘোষণা অনুযায়ী সেই বান্দা মহান আল্লাহর অপছন্দের তালিকায় চলে যাবে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার আল্লাহর দরবারে বান্দার আমল পেশ করা হয়। আল্লাহ সব মুসলিমকে ক্ষমা করে দেন। কিন্তু যে ব্যক্তির সঙ্গে তার ভাইয়ের মধ্যে বিদ্বেষ ছিল, তাদের ছেড়ে দাও যতক্ষণ না তারা মিলিত হয়।’ (সহিহ মুসলিম: ২৫৬৫)

হাদিস-বিশারদরা বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) মুসলমানের সঙ্গে কথা বন্ধ রাখার ব্যাপারে তিন দিনের অবকাশ দিয়েছেন, যেন রাগ, ক্ষোভ ও আবেগ নিয়ন্ত্রণের সুযোগ পাওয়া যায়। হাদিসের শিক্ষা হলো—মানুষের আবেগকে মূল্যায়ন করতে হবে। তবে তা যদি ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে সংকট তৈরি করে, তাহলে বর্জন করতে হবে।

প্রিয়জনের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ ইসলামে বড় ক্ষতিকর বিষয়। অনেক সময় তা হত্যার মতো অপরাধধে পরিণত হয়। রাসুলুল্লাহ (স.) এজন্য দীর্ঘ বিচ্ছেদের ব্যাপারে সতর্ক করে বলেন, ‘যে তার ভাইয়ের সঙ্গে এক বছর সম্পর্ক ছিন্ন করে রাখল সে যেন তাকে হত্যা করল।’ (সুনানে আবি দাউদ: ৪৯১৫)

মান-অভিমান চলাকালীন সময়ে কষ্টকে আড়াল করে হাসিমুখে কথা বলা ইসলামের নির্দেশনা। হাসিমুখে কথা বলার ফজিলত অনেক বড়। হাদিসে এসেছে, ‘প্রতিটি ভালো কাজই সদকাস্বরূপ। তোমার ভাইয়ের সঙ্গে সহাস্য দেখা-সাক্ষাৎ করা এবং তোমার বালতির পানি দিয়ে তোমার ভাইয়ের পাত্র ভর্তি করে দেওয়াও ভালো কাজের অন্তর্ভুক্ত।’ (সুনানে তিরমিজি: ১৯৭০)

যে অভিমান ভাঙতে প্রথম এগিয়ে আসে সে আল্লাহ তাআলার কাছে উত্তম হিসেবে বিবেচিত হবে। নবীজি (স.) বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তির জন্য বৈধ নয় যে সে তার ভাইয়ের সঙ্গে তিন দিনের বেশি এমনভাবে সম্পর্ক ছিন্ন রাখবে যে দুজনের দেখা হলেও দুজন দুদিকে মুখ ফিরিয়ে রাখবে। তাদের মধ্যে যে আগে সালাম দেবে সে-ই উত্তম ব্যক্তি।’ (সহিহ বুখারি: ৬০৭৭)

তবে, ইসলাম প্রশ্নে ক্ষেত্রবিশেষে কথা বন্ধ রাখা জায়েজ। আল্লামা ইবনুল আরাবি মালেকি (রহ.) বলেন, ‘দ্বীনের ব্যাপারে কাউকে সতর্ক করতে অথবা অন্যকে পাপী ব্যক্তির পাপ সম্পর্কে সতর্ক করতে কথা বন্ধ রাখা বৈধ। যেমন কেউ কোনো পাপকাজ করল অথবা বিদআতে লিপ্ত হলো। কেননা রাসুলুল্লাহ (স.) তাবুক যুদ্ধ থেকে পিছিয়ে পড়া তিন সাহাবির সঙ্গে ৫০ দিন কথা বন্ধ রাখার অনুমতি দেন। অতঃপর আল্লাহ তাদের তওবা কবুল করেন এবং সাহাবিরা তাদের সঙ্গে আগের মতোই সদ্ব্যবহার করেন।’ (আরিদাতুল আহওয়াজি: ৮/৯১)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মান-অভিমান কিংবা রাগারাগির সীমা অতিক্রম না করার ধৈর্য্য দান করুন। ইসলামের প্রত্যেক বিধান যথাযথ পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

RELATED ARTICLES
Continue to the category

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments