আমার বাপটারে কেউ আইনা দেও, আমি তারে দেখমু। হে তো আর আমারে মা মা কইরা ডাকবো না, মা টেহা পাঠাইছি, এই কথাও তো আর কেউ কইতো না।
বিলাপ করতে করতে এসব কথা বলছিলেন সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া গাড়িচালক মাসুদ মিয়ার (৩৫) মা জমিলা বেগম।
মাসুদের বাড়ি জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার ভাটারা ইউনিয়নের বয়সিং গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের খলিলুর রহমানের ছেলে। মঙ্গলবার রাতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। সন্তানকে হারিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন মা জমিলা। এ ঘটনায় এলাকায় শোকের মাতম চলছে।
কৃষক দম্পতি খলিলুর রহমান ও জমেলা বেগমের তিন ছেলের মধ্যে সবার বড় ছিলেন মাসুদ মিয়া। অভাব অনটনের সংসারে বেড়ে ওঠা তার। পরিবারে স্বচ্ছতা আনতে পড়াশোনায় মাধ্যমিকের গন্ডি পার হওয়ার আগেই তার পাড়ি জমাতে হয় সৌদি আরবে। ৫ বছর প্রবাস জীবন কাটিয়ে দেশে আসেন। এরপর ২০১৫ সালের দিকে নতুন কর্মসংস্থানের জন্য ছুটে যান বন্দরনগরী চট্টগ্রামে। সেখানে সীতাকুণ্ডের কনটেইনার ডিপোর একটি কোম্পানিতে গাড়িচালকের চাকরি নেন। সেখানে তিনি এক সপ্তাহ দিনে এবং পরের সপ্তাহ রাতে ডিউটি করতেন।
গত শনিবার রাতে সংঘটিত বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণে তিনি গুরুতর দগ্ধ হন। এরপর তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার রাতে তিনি মারা যান।
জানা গেছে, মাসুদ ১০ বছর আগে বিয়ে করেন। তার ৭ বছর বয়সী মেয়ে ও ২ বছর বয়সী একটা ছেলে রয়েছে। স্ত্রী সুমি আক্তার ও দুই সন্তান নিয়ে তিনি সীতাকুণ্ডে ভাড়া বাসায় থাকতেন। দুই অবুঝ শিশুর লালন পালনসহ সামনের দিনগুলো কীভাবে কাটাবেন, সেই চিন্তায় দু’চোখে অন্ধকার দেখছেন মাসুমের স্ত্রী সুমি।
নিহতের চাচা মোজাম্মেল হোসেন জানান, বিস্ফোরণের রাতেই নাকি মাসুদের নাইট ডিউটির সাপ্তাহিক শেষ দিন ছিল। কে জানতো ওই রাতটাই তার জীবনের শেষ ডিউটি! মাসুদ পরিবারের বড় ও একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হওয়ার তার মৃত্যুতে পরিবারটি নিঃস্ব হয়ে গেল।
তিনি আরও জানান, নিহতের লাশ আনার জন্য তার স্ত্রী ও ভাই চট্টগ্রাম আছেন। লাশ পৌঁছার পর বৃহস্পতিবার সকালে জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উপমা ফারিসা বলেন, সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহত মাসুদ মিয়ার মরদেহ চট্টগ্রাম থেকে এলাকায় পৌঁছানোর পর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে।