সিরিজ শেষে অনুমেয় ফলাফলই এসেছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে স্পষ্ট ফেভারিট ছিল বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচ ৬ উইকেটে জয়ের পর মিরপুরে দ্বিতীয় ম্যাচ ৭ উইকেটে জেতে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। চট্টগ্রামে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচ ১২০ রানে জিতে ঘরের মঠে সফরকারীদের ৩-০ ব্যবধানে হারালো টাইগাররা। তিন ম্যাচের তিনটিতেই জিতে ওয়ানডে সুপার লিগের খাতায় ৩০ পয়েন্ট যোগ করল বাংলাদেশ।
শেষ ম্যাচে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে প্রতিপক্ষ বাংলাদেশকে আগে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানান সফরকারী দলের অধিনায়ক জেসন মোহাম্মদ। ব্যাটিংয়ে নেমে দলের চার সিনিয়র ক্রিকেটার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালের অর্ধশতকের ওপর ভর করে নির্ধারিত পঞ্চাশ ওভার শেষে ২৯৭ রানের পুঁজি পায় স্বাগতিকরা।
উইন্ডিজের সামনে লক্ষ্য ছিল পাহাড় টপকানোর। কারণ, আগের দুই ম্যাচে ব্যাটিংয়ে নেমে দলীয় ইনিংস কোনবারই দেড়শ ছাড়াতে পারেনি ক্যারিবীয়রা। এমনকি সাগরিকায় দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করে ২৯০ রান পার করতে পারেনি কোনো দল। সে হিসেবে বাংলাদেশের বিপক্ষে জিততে গেলে রেকর্ড গড়েই জিততে হতো সফরকারীদের। শেষপর্যন্ত আর সে পথে আগাতে পারেনি উইন্ডিজ, এ ম্যাচেও টাইগার বোলারদের কাছে নাস্তানুবাদ হয়ে ম্যাচ হারে ১২০ রানে।
ম্যাচের শুরতেই বিপাকে পড়ে উইন্ডিজ। দলীয় ৪৭ রান তুলতেই তিন উইকেট হারিয়ে বসে তারা। যার দুইটি মুস্তাফিজুর রহমানের, একটি মেহেদী হাসান মিরাজের। এরপর এনক্রুমাহ বোনার ও রভম্যান পাওয়েল চেষ্টা চালালেও ফায়দা করতে পারেননি, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের বলে ৩১ রান করে আউট হন তিনি। পাওয়েল অবশ্য একপ্রান্ত আগলে রেখেছিলেন, তবে তাকে যোগ্য সঙ্গ দিতে পারেননি কাইল মায়ার্স (১১), জেসন মোহাম্মদ (১৭) ও জামার হ্যামিলটন (৫)।
পাওয়েল ইনিংস সর্বোচ্চ ৪৭ রানে আউট হলে শেষদিকের ব্যাটসম্যানরা আর প্রতিরোধ গড়তে পারেননি। রায়মন রেইফারের ২৭ রান সফরকারীদের হারের ব্যবধান কমিয়েছে শুধু। তৃতীয় ম্যাচে ১৭৭ রানে অলআউট হয় ক্যারিবীয়রা। ফলে ১২০ রানে ম্যাচ জিতে পূর্ণ ৩০ পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়ে টাইগাররা। বাংলাদেশের হয়ে সাইফউদ্দিন ৩ ও মুস্তাফিন এবং ইরাজ নেন ২টি করে উইকেট।
এর আগে টস হেরে আগে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। অধিনায়ক তামিমের সঙ্গে ওপেন করতে নেমে সুবিধা করতে পারেননি লিটন দাস। ইনিংসের প্রথম ওভারেই ফিরেছেন শূন্য রানে। গোটা সিরিজ জুড়ে ব্যর্থ নাজমুল হোসেন শান্ত এদিন মোটে ২০ রান করেন। ৩৮ রানে ২ উইকেট হারানো বাংলাদেশ খেলায় ফেরে তামিম-সাকিব জুটিতে। তৃতীয় উইকেট পার্টিনারশিপে ১১৬ বলে ৯৩ রান যোগ করেন তারা। ওয়ানডেতে নিজের ৪৯তম অর্ধশতক তুলে নেন তামিম। ফেরেন ৬৪ রান করে। ৮০ বলের ইনিংসটি এই বাঁহাতি ওপেনার সাজিয়েছেন ৩টি চার ও ১টি ছয়ের মারে।
পরে ৮১ বলে ৫১ রানে আউট হওয়া সাকিব অর্ধশতক তুলে নেন ৭৮ বলে। দুই সেট ব্যাটসম্যানের আউটের পর মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে দলের রান বাড়ানোর কাজ করেন মুশফিক। ৪৭ বলে ফিফটি হাঁকিয়ে তামিমের সমান ৬৪ রান করে সাজঘরের পথ ধরেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। ৫৫ বলের ইনিংটিতে ৪টি চারের সঙ্গে ছক্কা হাঁকিয়েছেন দুইটি।
মুশফিকের ফেরার পর ইনিংসের শেষ দিকে দলীয় চতুর্থ অর্ধশতক তুলে নেন রিয়াদ। তার ফিফটি আসে মাত্র ৪০ বল থেকে। শেষ পর্যন্ত ৪৩ বলে রিয়াদের অপরাজিত ৬৪ রানের সুবাদে নির্ধারিত পঞ্চাশ ওভার শেষে ২৯৭ রানের পুঁজি পায় বাংলাদেশ। উইন্ডিজের হয়ে আলজারি জোসেফ ও রায়মন রেইফার ২টি করে উইকেট নেন।
বাংলাদেশ: ২৯৭/৬, ৫০ ওভার (রিয়াদ ৬৪*, মুশফিক ৬৪, তামিম ৬৪, সাকিব ৫১; জোসেফ ২/৪৮, রেইফার ২/৬১)
উইন্ডিজ: ১৭৭/১০, ৪৩.৩ ওভার (পাওয়েল ৪৭, বোনার ৩১, রেইফার ২৭; সাইফউদ্দিন ৩/৫১, মিরাজ ২/১৮, মুস্তাফিজ ২/২৪)
ফলাফল: বাংলাদেশ ১২০ রানে জয়ী।