Friday, April 26, 2024
HomeScrolling‘ওরে আমার কী সর্বনাশ হইয়া গেল রে

‘ওরে আমার কী সর্বনাশ হইয়া গেল রে

অনলাইন ডেস্ক |

‘ওরে আমার কী সর্বনাশ হইয়া গেল রে। ১০ বছর আগে বিধবা হইছি। এবার ছেলেকেও হারালাম। কামরুলের দুইডা শিশু এতিম হইয়া গেল। ওদের কে দেখবে, ওদের কি হবে।’

এভাবেই বিলাপ করছিলেন ফরিদপুরের ভাঙ্গায় স্থানীয় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত কামরুলের মা নিলুফা বেগম (৭০)।

গতকাল বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) রাত সোয়া ১০টার দিকে ভাঙ্গার জান্দী গ্রামের ফলজা মাতুব্বর ও জাহাঙ্গীর মাতুববরের বাড়ির মাঝামাঝিতে ভাঙ্গার নওপাড়া থেকে তুজারপুরের উত্তর বাজারগামী আঞ্চলিক সড়কে মোটরসাইকেল রোধ করে দুজনকে হত্যা করা হয়। এলাকায় অধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে জানিয়েছে এলাকাবাসী ও পুলিশ।

এক মোটরসাইকেলে তিনজন বাড়ি ফেরার পথে প্রতিপক্ষের ধারালো অস্ত্রের এলোপাতাড়ি কোপে নিহত ওই দুই ব্যক্তি হলেন- জান্দী গ্রামের মৃত কামাল মাতুব্বরের ছেলে কামরুল মাতুব্বর (৩২) ও জান্দী গ্রামের মৃত গোপাল শরিফের ছেলে সলেমান শরিফ (৩৫)। কামরুল বিবাহিত। তার পাঁচ ও দশ বছর বয়সী দুটি কন্যা সন্তান আছে। সলেমানও বিবাহিত। তার ১৮ বছর বয়সী একটি ছেলে রয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের নওপাড়া বাসস্ট্যান্ডে নেমে নওপাড়া তুজারপুর উত্তর বাজারগামী পথ ধরে দুই কিলোমিটার এগুলেই কামরুলের বাড়ি। তার বাবা মৃত কালাম মাতুব্বর এলাকার মাতব্বর ছিলেন। ১০ বছর আগে তিনি মারা যান। কামরুল এলাকাবাসীর ‘সমাজের মাতব্বর’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। পাঁচ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে কামরুল দ্বিতীয়।

কামরুলের স্ত্রী নিপা বেগম (২৮) ঘটনার পর থেকে নির্বাক হয়ে আছেন। কোনো কথা বলছেন না। খাওয়া-দাওয়া করছেন না। কামরুলের দুই মেয়ে কেয়া (১০) ও আলবিল (৫)। অঝোরে কেঁদে যাচ্ছে।

কামরুলের বাড়ির পাশেই অপর নিহত সলেমানের বাড়ি। এলাকাবাসীর মতে- সলেমান কামরুলের প্রজা। এ সুবাদে কামরুলের সঙ্গেই সবসময় থাকতেন সলেমান। অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের সন্তান তিনি।

পরিবারটির বসতভিটা বলতে মাটির ভিত করা টিনের একটি দোচালা ঘর মাত্র আড়াই শতাংশ জমির ওপর। মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন সলেমান। যেদিন মাছ ভালো ধরা পড়ে সেদিন খাবার জোটে। একমাত্র ছেলে অনিক শরিফের বয়স ১৮ বছর। পড়াশোনা বেশি করতে পারেননি অনিক। অভাবের কারণে কাঠমিস্ত্রির কাজ করেন।

সলেমানের মায়ের নাম মজিরন নেসা (৭৫)। তিনি বিধবা। স্ত্রীর নাম আমিরুন নেসা (৩০)। সলেমানকে হারিয়ে অঝোরে কেদে যাচ্ছেন মজিরন নেসা ও আমিরুন নেসা।

কাঁদতে কাঁদতে মা মজিরন নেসা বলেন, আমাদের সংসার এখন কীভাবে চলবে। কীভাবে বেঁচে থাকব। আমার নাতি কাঠমিস্ত্রির কাজ করে যা আয় করে তাতে কীভাবে সংসার চলবে ভেবে পাইতেছি না। আমাদের পরিবারের মূল ইনকামের লোক ছিল আমার ছেলে সলেমান। সে তো চইলা গেল।

এদিকে এ ঘটনার পর ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান শুক্রবার (৮ এপ্রিল) বেলা ১১টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ভাঙ্গা সার্কেল) ফাহিমা কাদের চৌধুরী বলেন, মরদেহ দুটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পরিস্থিতি শান্ত রাখতে ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

RELATED ARTICLES
Continue to the category

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments