বেশ কিছু বড় তারকার জন্য এবারের ইউরো কাপটা হতাশার। নানা কারণে এবারের আসরে অংশ নেওয়া হচ্ছে না তাদের। স্বাভাবিকভাবেই যাদের অনুপস্থিতি হাহাকার জাগাবে ভক্তদের।
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক কিছু বড় নাম, যারা ইউরোতে খেলতে পারছেন না-
সার্জিও রামোস (স্পেন)
অবশ্যই এবারের আসরে অনুপস্থিত থাকা সবচেয়ে বড় নাম হচ্ছে সার্জিও রামোস। ২০০৬ সালের পর টানা নয়টি বড় টুর্নামেন্ট খেলার পর এবারই প্রথম স্প্যানিশ এই অধিনায়ক আন্তর্জাতিক কোন আসরে খেলতে পারছেন না। ২০০৮ এবং ২০১২ ইউরো, ২০১০ বিশ্বকাপজয়ী স্পেন দলকে রক্ষণে ভরসা জোগানো এই রিয়াল মাদ্রিদ তারকাকে ছাড়া কেমন খেলে স্পেন, সেদিকেই তাকিয়ে ভক্তরা। চলতি বছরের শুরু থেকে চোটের কারণে ভুগতে থাকা রামোস মৌসুম শেষে ক্লাব ফুটবলেও নিয়মিত ছিলেন না। তাই পুরো ফিট না থাকা তারকা ডিফেন্ডারকে স্কোয়াডে রেখে ঝুঁকি নিতে চাননি স্পেনের কোচ লুইস এনরিকে। যদিও এনরিকে জানিয়েছেন ১৮০টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা ৩৫ বছরের অভিজ্ঞ এই ডিফেন্ডারকে দল থেকে বাদ দেয়া মোটেই সহজ ছিল না।
ভার্জিল ফন ডাইক (নেদারল্যান্ডস)
গত গ্রীষ্মে ইউরো বাতিল হয়ে যাওয়ায় সম্ভবত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নেদারল্যান্ডস। কারণ সেই সুযোগে আগস্টে নেদারল্যান্ডসের বদলে যাওয়ার মূল নায়ক কোচ রোনাল্ড কোম্যান জাতীয় দল ছেড়ে বার্সেলোনায় যোগ দিয়েছিলেন। এরপর অধিনায়ক ও দলের নির্ভরযোগ্য সেন্টার-ব্যাক ভার্জিল ফন ডাইক অক্টোবরে গুরুতর লিগামেন্ট ইনজুরিতে পড়ে লিভারপুলের হয়ে বাকি মৌসুমটা আর মাঠে নামতেই পারেননি। মে মাসে পুনর্বাসনের শেষ পর্যায়টি ভালোভাবে সম্পন্ন করতে না পারায় ইউরো থেকে নিজেই নাম প্রত্যাহার করে নেন। এই সিদ্ধান্তে হতাশা প্রকাশ করলেও এটাই সঠিক ছিল বলে ডাইক স্বীকার করেছেন।
জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ (সুইডেন)
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আবারো নিজেকে প্রমাণের প্রায় দ্বারপ্রান্তে চলে এসেছিলেন এসি মিলান তারকা জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ। কিন্তু সিরি আ মৌসুমের শেষভাগে এসে গুরুতর হাঁটুর ইনজুরি তার সেই স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছে। ৩৯ বছর বয়সী এই সুইডিশ তারকা পাঁচ বছরের আন্তর্জাতিক অবসর ভেঙে মার্চে পুনরায় দলে ফিরেছিলেন। এসি মিলানের হয়ে ১৬ গোল ও ২৬ এসিস্টই তাকে জাতীয় দলে ফিরিয়ে এনেছিল। সুবাদে গত আট মৌসুম পরে এবারই প্রথম চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ফিরেছে এসি মিলান। মার্চে সুইডিশ দলে ফিরেই তিনি বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে দুই ম্যাচে দুটি এসিস্ট করেছেন। ইউরোর গ্রুপ পর্ব থেকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য ড্রেসিং রুমে তার অভিজ্ঞতা ও উপস্থিতি খুব বেশি প্রয়োজন ছিল।
আর্লিং হালান্ড (নরওয়ে)
এই তরুণের মধ্যে অনেকেই ইব্রাহিমোভিচের নতুন সংস্করণ দেখতে পান। পাওয়ার প্যাক পারফরম্যান্সের পাশাপাশি দুর্দান্ত ফিটনেস ও গোল করার দক্ষতা সবকিছুতেই তার সাথে ইব্রার মিল খুঁজে পাওয়া যায়। আগামী দুই দশকে ইউরোপিয়ান ফুটবলে বিশ্বের সব শীর্ষ ক্লাবগুলোকে তিনি প্রতিনিধিত্ব করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। মাত্র ২০ বছর বয়সেই হালান্ড তার প্রমাণ দিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক আসরে বড় টুর্নামেন্টে খেলার অভিজ্ঞতা হালান্ডের আরো বিলম্বিত হলো। কারণ তার দেশ নরওয়ে ইউরোর মূলপর্বে যোগ্যতা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। সর্বশেষ নরওয়ে যখন বড় কোন টুর্নামেন্টে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছিল, তখন হালান্ডের জন্মই হয়নি। আর এখন ২০ বছর বয়সী এই তারকা দলের মূল নায়কে পরিণত হয়েছেন। বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের এই স্ট্রাইকার চ্যাম্পিয়নস লিগে সর্বোচ্চ ১০ গোল করার পাশাপাশি বুন্দেসলিগায় করেছেন ২৭ গোল।
আনসু ফাতি (স্পেন)
এবারের ইউরোতে আরো একজন তরুণের খেলা দেখা থেকে ফুটবল বিশ্ব বঞ্চিত হবে। তিনি- স্পেনের আনসু ফাতি। ১৮ বছর বয়সেই তিনি স্পেনের সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে গোল করার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। গত বছর হাঁটুর ইনজুরিতে পড়ায় তার ইউরোতে খেলা হচ্ছে না। শুধুমাত্র জাতীয় দলের জার্সি গায়ে নয়, নিজ ক্লাব বার্সেলোনার হয়েও তিনি বেশ কিছু রেকর্ড করে ফেলেছেন। এবারের ইউরোয় স্পেন দলের এক্স-ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারতেন ফাতি।
টের স্টেগেন (জার্মানি)
ক্লাবের হয়ে মৌসুমের শেষদিকে এসে চোটের কারণে ইউরো খেলা হচ্ছে না তার। তিনি জার্মানির গোলরক্ষক মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগেন। মে মাসে সেল্তা ভিগোর বিপক্ষে ম্যাচের পর হাঁটুর চোটে কাবু বার্সেলোনা গোলরক্ষক অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন। একই সঙ্গে ইউরো থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার কথা ঘোষণা করেন।
জ্যান ওবলাক (স্লোভেনিয়া)
এই মুহূর্তে বিশ্বের অন্যতম সেরা গোলরক্ষক জ্যান ওবলাককেও ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে দেখা যাবে না। তবে চোটের কারণে নয়। আতলেতিকো মাদ্রিদের হয়ে সদ্য শেষ হওয়া মৌসুমে লা লিগাজয়ী গোলরক্ষকের দেশ স্লোভেনিয়া ইউরোয় যোগ্যতা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে।