Friday, April 26, 2024
HomeScrolling‘বর্তমান বিভীষিকাময় অর্থনৈতিক নৈরাজ্য ও অস্থিতিশীলতার জন্য বর্তমান জবাবদিহিহীন এই অবৈধ সরকারই...

‘বর্তমান বিভীষিকাময় অর্থনৈতিক নৈরাজ্য ও অস্থিতিশীলতার জন্য বর্তমান জবাবদিহিহীন এই অবৈধ সরকারই দায়ী:মির্জা ফখরুল

অনলাইন ডেস্ক।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘রিজার্ভ নিয়ে সরকারের পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকও জাতির সামনে অসত্য পরিসংখ্যান তুলে ধরছে। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে বর্তমানে সবচেয়ে চাপে রয়েছে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি। দেশে যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রয়েছে তা দিয়ে আগামী সাড়ে তিন মাস আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। এ অবস্থায় দেশের অর্থনীতিতে অশনি সংকেত দেখছি আমরা।’

বুধবার গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

গত সোমবার অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, স্থায়ী কমিটির সভায় দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। আলোচনায় উঠে আসে বাংলাদেশের অর্থনীতির অস্থিতিশীলতা ও অনিশ্চয়তার বিষয়গুলো। বিশেষ করে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি, রপ্তানি এবং রেমিট্যান্স আয়ে ঘাটতির কারণে বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যে বড় ধরনের সমস্যা হচ্ছে। টাকার বিপরীতে মার্কিন ডলারের দাম বৃদ্ধিসহ নানা কারণে অসহনীয় হয়ে উঠছে জিনিসপত্রের দাম। মনে হচ্ছে, আগামী দিনে পরিস্থিতি আরও বেসামাল হয়ে উঠবে।’

তিনি বলেন, ‘রিজার্ভ নিয়ে আত্মতুষ্টির কিছু নেই। এটি দ্রুত কমে আসছে। গত ৮ মাসে রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার থেকে ৪২ বিলিয়ন ডলারে নেমে গেছে। পরের ২ মাসে এটা আরও ৪ বিলিয়ন ডলার কমে যাবে। এভাবে যদি রপ্তানির তুলনায় আমদানি বাড়তে থাকে এবং সেটা যদি রেমিট্যান্স দিয়ে পূরণ করা না যায় তাহলে অতি দ্রুত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ শেষ হয়ে যাবে। রিজার্ভ শেষের কি ভয়াবহ পরিণতি শ্রীলঙ্কার চলমান পরিস্থিতি তার নিকৃষ্টতম উদাহরণ।’

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘আমদানি ব্যয় বেড়েছে প্রায় ৪৪ শতাংশ। আমদানি যে হারে বেড়েছে, রপ্তানি সে হারে বাড়েনি। আবার প্রবাসী আয়ও কমে গেছে। ফলে প্রতি মাসে ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। এ বছরই আমদানি প্রায় ৮২-৮৫ বিলিয়ন ডলারে চলে যাবে, কিন্তু রপ্তানি প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলার। এই ৩২-৩৫ বিলিয়ন ডলারের যে বাণিজ্য ঘাটতি সেটা রেমিট্যান্স দিয়ে পূরণ করা সম্ভব হবে না। কাজেই এ বছরই ১০ বিলিয়ন ডলারের একটা ঘাটতি সৃষ্টি হচ্ছে।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘মূল্যস্ফীতির বিষয়ে সরকার যে তথ্য দিচ্ছে তা সরকারের টিসিবির দেওয়া তথ্যের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। শুধু তাই নয়, দেশের অর্থনীতিবিদরা বলছে বর্তমানে মূল্যস্ফীতির হার ১২ শতাংশ।’

তিনি বলেন, ‘সরকার ব্যক্তিগত অর্থের ঝোলা বাড়াতে অনেকগুলো অপ্রয়োজনীয় মেগা প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। ইতিমধ্যেই দেশের প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদরা এসব প্রকল্পকে জনগণের জন্য ঋণের বোঝা ভারী করার শ্বেত-হস্তী প্রকল্প হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। শ্বেত-হস্তী প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর ও পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প, চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী হয়ে কক্সবাজার ও ঘুমধুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ভারতে গ্রেপ্তার পি কে হালদার সরকারের শীর্ষ মহলের প্রত্যক্ষ মদদ, প্রশ্রয়, আশ্রয় ও অংশীদারত্বে অর্থ আত্মসাৎকারীর সৃষ্টি হয়েছে। আর কত অর্থ আত্মসাৎকারী ও অর্থ পাচারকারী পিকে হালদার রা রয়েছে যারা এখনো ধরা পড়েনি, জনগণ তা জানতে চায়। পি কে হালদার যে দুই প্রতিষ্ঠানে এমডির দায়িত্ব পালন করেছেন তার মালিকানার সঙ্গে বাংলাদেশের ‘আঙুল ফুলে কলা গাছ হওয়া’ শিল্প গ্রুপগুলো জড়িত।’

তিনি বলেন, ‘কেবলমাত্র ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল ও গ্লামারস উন্নয়নের ডামাডোল বাজাতেই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর মতো অপরিণামদর্শী প্রকল্প গ্রহণ করে দেশকে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন করা হয়েছে। স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণের চার বছর পূর্তিতে এসে পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে “চার বছরের মধ্যে প্রথম তিন বছরে আমরা নানা কারণে কোনো আয় করতে পারিনি। তা ছাড়া স্যাটেলাইট পরিচালনার ক্ষেত্রে অভিজ্ঞদের নিয়োগ না দিয়ে দলবাজ কিংবা সরকারের শীর্ষ নেতৃত্বের স্বজন তোষণের ফলে সরকার আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় ফেল করেছে যা দেশকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এ বিষয়ে তদন্ত হওয়া দরকার।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বর্তমান বিভীষিকাময় অর্থনৈতিক নৈরাজ্য ও অস্থিতিশীলতার জন্য বর্তমান জবাবদিহিহীন এই অবৈধ সরকারই দায়ী। ভবিষ্যতে তাদের জনগণের নিকট জবাবদিহি করতে হবে। এই মুহূর্তে সর্বজনীন ঐক্যের মাধ্যমে রাজপথে দুর্বার গণ-আন্দোলন গড়ে তুলে অনতিবিলম্বে এ সরকারকে হটানোর কোনো বিকল্প নেই।’

এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।

RELATED ARTICLES
Continue to the category

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments