
ইসলামের বর্ণনায় কেয়ামতের আগে সংঘটিত হবে—এমন কিছু বড় আলামতের কথা রাসুলুল্লাহ (স.) বহু হাদিসে উল্লেখ করেছেন। তার মধ্যে অন্যতম হলো সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদয় হওয়া। এটি এমন এক অলৌকিক ঘটনা, যা ঘটার পর আর কোনো তাওবা বা ঈমান গ্রহণ গ্রহণযোগ্য হবে না।
সহিহ হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত কেয়ামত অনুষ্ঠিত হবে না। লোকেরা যখন তা দেখবে, তখন পৃথিবীর সকলে ঈমান আনবে এবং সেটি হচ্ছে এমন সময় পূর্বে ঈমান আনেনি এমন ব্যক্তির ঈমান তার কাজে আসবে না।’ (সহিহ বুখারি: ৪৬৩৫)
রাসুলুল্লাহ (স.) আরও বলেছেন, ‘আল্লাহ রাতের বেলা তাঁর হাত প্রসারিত রাখেন, যাতে দিনের পাপি তাওবা করতে পারে; আর দিনের বেলা হাত প্রসারিত রাখেন, যাতে রাতের পাপি তাওবা করতে পারে; এভাবে চলতে থাকবে যতক্ষণ না সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদিত হয়।’ (মুসলিম, মেশকাত: ২৩২৯)
এই হাদিস দুটি ইসলামের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য হাদিসগ্রন্থে বর্ণিত, যা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে সূর্যের দিক পরিবর্তন কেয়ামতের বড় আলামতগুলোর একটি।
কোরআনের ইঙ্গিত ও তাফসির
সুরা আনআমের ১৫৮-এ আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন- ‘যেদিন তোমার রবের নিদর্শনসমূহের কিছু প্রকাশ পাবে, সেদিন কোনো ব্যক্তিরই ঈমান উপকারে আসবে না, যে পূর্বে ঈমান আনেনি, কিংবা সে তার ঈমানে কোন কল্যাণ অর্জন করেনি।’
তাফসিরে এসেছে, এই নিদর্শন বলতে সূর্য পশ্চিম থেকে উদয় হওয়াকেই বোঝানো হয়েছে। (ইবনে কাসির) সুদ্দি (রহ) বলেন, এই আয়াতটি তাদের প্রতি প্রযোজ্য যারা ঈমান আনার পর কোনো সৎকর্ম করেনি। পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয় দেখে তারা যখন সৎকর্মে আত্মনিয়োগ করবে, তখন তাদের আমল গ্রহণযোগ্য হবে না (তাবারি)। ইমাম কুরতুবি (রহ) বলেন, আলেমগণ বলেছেন, ‘পশ্চিম আকাশে সূর্য উদিত হওয়ার সময় ঈমান আনলে কারো ঈমান উপকারে আসবে না। কেননা তখন তাদের অন্তরে এমন ভয় ঢুকে যাবে যে, নফসের চাহিদা পূরণ করার ইচ্ছা একদম নিঃশেষ হয়ে যাবে এবং শরীরের শক্তি একদম শেষ হয়ে যাবে।’ (তাফসিরে কুরতুবি)
শিক্ষা ও বার্তা
১. তাওবার সময় এখনই: সূর্য পশ্চিম থেকে উদয় হওয়ার আগে পর্যন্ত আল্লাহ তাওবা কবুল করেন। তাই দেরি না করে এখনই আল্লাহর দিকে ফিরে আসা উচিত।
২. ঈমান ও সৎকর্মে অবিচল থাকা: কেয়ামতের এই নিদর্শনগুলো আমাদের স্মরণ করায়, অদেখায় ঈমান আনা ও নিয়মিত সৎকর্মই হলো প্রকৃত সফলতার পথ।
৩. চিন্তা ও আত্মসমালোচনা: এই হাদিস আত্মসমালোচনার আহ্বান যে- ঈমান ও আমলকে শক্তিশালী করা ছাড়া মুক্তি নেই।
সংক্ষিপ্ত সতর্কবার্তা
- এটি কেয়ামতের অত্যন্ত নিকটবর্তী একটি আলামত। এর আগে আরও বহু ছোট-বড় নিদর্শন প্রকাশ পাবে।
- এই অলৌকিক ঘটনা কখন ঘটবে, তা একমাত্র আল্লাহর ইলমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
- কোরআন ও সহিহ হাদিস দ্বারা এটি প্রমাণিত হওয়ায় মুমিনদের জন্য এটি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করা আবশ্যক।
সূর্যের পশ্চিম দিক থেকে উদয় হওয়া কেবল একটি মহাজাগতিক বিস্ময় নয়; বরং এটি মানবজাতির জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে চূড়ান্ত সতর্কবার্তা। একজন মুসলমান হিসেবে আমাদের কর্তব্য হলো- আজই তাওবা করা, ঈমানকে নবায়ন করা এবং সৎকর্মে অবিচল থাকা।
