সুষ্ঠু অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রধান বাধা বিএনপি, এটা আজকের সহিংসতাই প্রমাণ করে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, বিএনপি বলে তাদের উপর হামলা হয়েছে, তাদেরকে বাধা দেওয়া হয়েছে। অথচ তারা ঢাকা ঢুকার পথ বন্ধ করে দেবে। এটা কি তারেক রহমানের বাপ দাদার সম্পত্তি। লন্ডন থেকে নির্দেশ দিয়ে রাস্তা বন্ধ করে দেবে, এটা কোন ধরনের রাজনীতি।
শনিবার বিকালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর দক্ষিণ ও সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে জরুরি বৈঠকের শুরুতে এ কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, যে সকল বিদেশি বন্ধুরা আমাদের পরামর্শ দেন, তাদের বলছি- সুষ্ঠু নির্বাচন করতে আমরা ওয়াদাবদ্ধ। কিন্তু সুষ্ঠু অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রধান বাধা বিএনপি। যাদের কথা বিদেশি বন্ধুদের বলেছিলাম। বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রথম বাধা বিএনপি এটা আজকে আবার প্রমাণ হলো।
বিএনপির এক দফা অগ্নিসন্ত্রাস দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা যা আশঙ্কা করেছিলাম সেটাই এখন সত্যি হলো, আমরা বার বার বলেছি তাদের আন্দোলন- এক দফা অগ্নিসন্ত্রাস। তারা এটাই চেয়েছিলো, এটাই শুরু করতো গতকাল। আমাদের শক্ত অবস্থানের কারণে তারা কিছু করতে পারেনি।
তিনি বলেন, দেখুন তারা সমাবেশ থেকে ঢাকা সিটির প্রবেশ পথ বন্ধ করার ঘোষণা করেছে। এই রাজধানীর সব প্রবেশ পথ বন্ধ করে দেবে তারা এবং অবস্থান নিবে এটাই তাদের সিদ্ধান্ত। এর আগে তাদের নেতাকর্মীদের অতিরিক্ত জামাকাপড় নিয়ে ঢাকা আসতে বলেছেন এবং সঙ্গে চাদর নিয়েও আসতে বলেছেন। গণভবন থেকে শেখ হাসিনাকে না হটিয়ে তারা এ অবস্থান থেকে সরবে না, এটাই তাদের কথা।
ভিডিওতে বক্তব্য দিয়ে তারেক রহমান আদালত অবমাননা করছে দাবি করে কাদের বলেন, তারেক রহমান লন্ডনে বসে সারাক্ষণ ভিডিওতে এই নির্দেশ সেই নির্দেশ দিচ্ছে। আমি বুঝি না, প্রতিনিয়ত আদালতের নির্দেশ লঙ্ঘন করে যাচ্ছে। আদালতের আদেশ ছিল- কোনোভাবে কোনোক্রমেই কোনো ভাষণ, কোনো স্টেটমেন্ট প্রচার করা যাবে না। এরপরেও কেন বারে বারে এটা করা হচ্ছে। আদালত অবমাননা প্রতিনিয়ত হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্ট-হাইকোর্টকে লক্ষ্য করে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করছে এই তারেক।
তিনি আরও বলেন, লাশ ছাড়া সে (তারেক) কথা বলে না। সে বলে- আন্দোলন করো টাকার অভাব হবে না। কি ব্যবসা করে লন্ডনে, এত টাকা আসে কোথা থেকে। তার তো কোনো অভাব নেই তার বাবার মতো। তার বাবা বলতো মানি ইজ নো প্রবলেম, সেও বলছে টাকার সমস্যা নেই।
বিএনপির হামলার বর্ণনা দিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, আজকে তারা কি করেছে, আজকে তারা ঢাকার প্রবেশমুখগুলোতে অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করে দিয়েছে। আজকে মাতুয়াইলের দিকে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে চারটি বাসে আগুন দিয়েছে। রাস্তার পাশে থাকা অনেক গাড়িতে হামলা করেছে। সদরঘাটে ভিক্টর পরিবহনের একটি বাসে আগুন দিয়েছে। এছাড়া তুরাগ পরিবহনের একটি বাসসহ মোট সাতটি বাস ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। বিভিন্ন এলাকায় লাঠিসোঁটা নিয়ে পুলিশের উপর হামলা চালায়। তারা ককটেল ও হাতবোমাও নিক্ষেপ করেছে।
কাদের আরও উল্লেখ করেন, রাজধানীর ধোলাইখালে অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে একজন এসআইকে বেধড়ক পেটাতে দেখা যায়। নারায়ণগঞ্জে অবস্থান চলাকালে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি আহত হয়েছে। ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের মহিবুর রহমান নয়নের উপর বিএনপি জামাতের ক্যাডার বাহিনী হামলা করে এবং তার হাতের কব্জি কেটে নেয়, সে এখন হাসপাতালে ভর্তি আছে।
তিনি বলেন, পুলিশের উপর তারা হামলা চালিয়েছে। এমনকি কিছু কিছু জায়গায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপর হামলা হয় এবং ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে।
বিএনপির অগ্নিসন্ত্রাস আবার শুরু হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০১৩/১৪ সালের নির্মম নৃশংসতার পুনরাবৃত্তি শুরু হয়েছে। এ অবস্থায় বঙ্গবন্ধুর সৈনিক, শেখ হাসিনার সৈনিক, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত কর্মী বাহিনী চুপ করে বসে থাকতে পারে না। আমাদের দায়িত্ব আমরা পালন করবো।
জনগণের জানমাল রক্ষায় পবিত্র দায়িত্ব পালনে নির্বাচন পর্যন্ত সতর্ক পাহারায় থাকার নির্দেশ দিয়ে কাদের বলেন, এই সিটিতে এক কিলোমিটারের মধ্যে কয়েকটা সভা সমাবেশ হয়েছে। কিন্তু কোনো সমস্যা হয়নি। তার কারণ আমরা সংঘাত চাই না। সংঘাতের বিরুদ্ধে জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় আমরা পবিত্র দায়িত্ব পালনে সতর্ক অবস্থানে ছিলাম, আছি, আগামী নির্বাচন পর্যন্ত থাকব।
এর আগে বিকেল ৪টা ৫৫ মিনিটে এ জরুরি সভা শুরু হয়। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে জরুরি সভায় আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের শীর্ষ নেতারা অংশ নিয়েছেন।
জরুরি সভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, ড. আব্দুর রাজ্জাক, কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ ফারুক খান, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, মাহবুবউল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, এসএম কামাল হোসেন, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাশ, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ, শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক শামসুন নাহার চাপা, উপ প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল আউয়াল শামীম, উপ দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, কার্যনিবাহী সদস্য আনোয়ার হোসেন, সাহাবুদ্দিন ফরাজি, মারুফা আক্তার পপি, তারানা হালিম, অধ্যাপক মোহাম্মদ এ আরাফাত প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সদস্য হাবিবুর রহমান সিরাজ উপস্থিত ছিলেন।
জরুরি সভায় ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির, কৃষক লীগের সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দ, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামশ পরশ, সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু, সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু, মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকী, সাধারণ সম্পাদক শবনম জাহান শিলা, যুব মহিলা লীগের সভাপতি আলেয়া সরোয়ার ডেইজি, সাধারণ সম্পাদক শারমিন সুলতানা লিলি, ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।