

জামাল উদ্দীন, কক্সবাজার।।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্ণামেন্টের ফাইনাল নিয়ে চরম উত্তোলনার উচ্ছৃঙ্খল দর্শকের হামলায় সদর ইউএনও, পুলিশ, সাংবাদিক সহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছে। হামলাকারীরা কক্সবাজার স্টেডিয়াম ভবনে ব্যাপক ভাংচুর চালিয়েছে। শুক্রবার অনুষ্ঠিত ফাইনাল ম্যাচ দর্শকের তাণ্ডবে পণ্ড হয়ে গেছে। এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে সর্বস্থরের ক্রীড়ামুদিরা। তাদের দাবী দর্শকের আগ্রহের খবর আগে থেকে জানার পরও প্রশাসনের সঠিক দায়িত্ববোধ, স্টেডিয়ামের ধারন ক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত টিকিট বিক্রি, টিকিট কালোবাজারী সহ সব শেষে আইনশৃংখলা বাহিনীর চরম ব্যার্থতার কারনে রাষ্ট্রিয় সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া দর্শক হিসাবে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা এসেছে বলে ও জানান সচেতন মহল। দ্রুত ভিডিও ফুটেজ দেখে প্রতিটি ঘটনার তদন্তপূর্বক এবং টিকিট বাণিজ্য সহ সমস্ত কিছুর
ফাইনাল ম্যাচ যে সব অসঙ্গতি
প্রশাসনের চরম গাফেলতি ইজারাদারদের লোভে ধারণ ক্ষমতার ৩ গুণ টিকিট বিক্রি
৫০ টাকার টিকিট ৫০০ টাকায় বিক্রি
টিকিট কালোবাজারী করেছে তারাও ইজারাদারের ঘনিষ্ঠজন
জন্য দায়ি ব্যক্তিদের শাস্তি দাবী করেন ক্রীড়ামুদিরা। কক্সবাজার বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ রুহুল আমিন স্টেডিয়ামে গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু
হওয়া এই টুর্ণামেন্টের ফাইনাল খেলার ছিল শুক্রবার। রামু ও টেকনাফ উপজেলার মধ্যে বেলা ৩ টায় ফাইনাল ম্যাচটি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সকাল ৮ থেকে স্টেডিয়ামে গিয়ে টিকেট সংগ্রহ শুরু করেছে দর্শকরা। এই টিকেটের মূল্য ৫০ টাকা নির্ধারিত থাকলেও দর্শকের উপস্থিত দেখে ক্রমাগত বাড়তে থাকে ইজারাদাররা। এক পর্যায়ে ৫০ টাকার টিকিট ১০০ থেকে ৫০০ টাকাও বিক্রি করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। রামুর মেরুংলোয়া থেকে খেলা দেখতে আসা দর্শক, আবদুল হালিম, হামিদুর রহমান, সুজন বড়ুয়া জানান, ৫০ টাকার টিকিট ২০০ টাকা থেকে শুরু করে ৭০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে এক একটি টিকেট। স্টেডিয়ামটির ধারণ ক্ষমতা ৫ হাজার হলেও অন্তত ১৫ হাজার টিকেট বিক্রি করেছে আয়োজন কমিটি। এতে অতিরিক্ত দর্শক
গ্যালোরিতে বসার স্থান না পেয়ে গেইট ভেঙে আড়াইটার দিকে দর্শক পুরো মাঠ দখল করে নেয়।
পরে সেনাবাহিনীসহ বিপুল পরিমান আইনশৃংখলা বাহিনী দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। কিন্তু দফায় দফায় চেষ্টা করেও তা সম্ভব হয়নি। এর মধ্যে স্টেডিয়ামে প্রবেশে ব্যর্থ দর্শকরা স্টেডিয়ামের বাইর থেকে ভবনে ভাংচুর শুরু করেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এরপর মাঠে খেলা পরিচালনার প্রস্তুতি নিলেও গ্যালোরিতে দর্শক ও বাইরের দর্শকরা একযোগে হামলা করে গ্যালারি, মাঠ, প্রেস বক্সসহ সবকিছু ভাংচুর ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করেন। এতে কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিলুফা ইয়াসমিন, পুলিশ, সাংবাদিক অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছে।
যার মধ্যে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে ১৫ জনকে চিকিৎসা প্রদানের তথ্য নিশ্চিত করেছেন জরুরি বিভাগে দায়িত্বশীল চিকিৎসক।
টেকনাফ থেকে খেলা দেখতে আসা দর্শক, মিনহাজ, নজরুল, আশিক, মুজিব সহ অনেকে বলেন, আমরা শুক্রবার সকাল ১০ টায় স্টেডিয়ামে এসেছি। তখন থেকেই দেখছি দর্শকের ভীড়, টিকিট না পেয়ে মাঠের বাইরে থেকে টিকিট সংগ্রহ করেছি প্রতি টিকিট ২০০ টাকা দিয়ে। তবে চরম বিশৃংখলার কারনে খেলা দেখতে পারিনি। তারা বলেন, আমাদের মনে হয়েছে মাঠের ধারন ক্ষমতার চেয়ে ৩ গুণ বেশি টিকিট বিক্রি করা হয়েছে। যারা টাকা দিয়ে টিকিট নিয়েছে স্বাভাবিক তারা খেলা দেখতে চাইবে, তারা গ্যালারীতে জায়গা না পেয়ে মাঠে ঢুকে পড়েছে। টেকনাফের দর্শকরা দাবী করেন, মনে হচ্ছে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা এসেছে তারাই মুলত ভাংচুর বেশি করেছে।
এ ব্যপারে কক্সবাজারের বেশ কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান খেলোয়াড় দাবী করেন, কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানা যাচ্ছে ফাইনাল খেলায় প্রচুর দর্শক হবে। তাহলে কেন প্রশাসন সেটার জন্য প্রস্তুতি নেয়নি এটা প্রশাসনের চরম ব্যর্থতা। আর ইজারাদারদের লোভের কারনে এতবড় ঘটনা হয়েছে তারা ৫ হাজার ধারন ক্ষমতার স্টেডিয়ামে অন্তত ১৫ হাজার টিকিট বিক্রি করেছে। তাও ৩ গুণ ৪ গুণ দাম বাড়িয়ে। আর যারা ফাইনাল ম্যাচসহ গত কয়েক ম্যাচে টিকিট কালোবাজারী করেছে তারাও ইজারাদারের ঘনিষ্ঠজন। আমাদের কাছে ছবি এবং ভিডিও আছে। তারাই কালোবাজারী করে আবার তারাই ধরার নাটক করেছে। আর সর্বশেষ আইনশৃংখলা বাহিনী চাইলে কিছুটা শক্তহাতে দমন করলে স্টেডিয়াম ভাংচুর থেকে রক্ষা করতে পারতো। কিন্তু তা করেনি ফলে স্টেডিয়ামের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমরা প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক বিচার দাবী করছি।