আল্লাহ তাআলার বিশেষ বান্দারা ছাড়া কেউই গুনাহের ঊর্ধ্বে নয়। শয়তানের প্ররোচনায় যেকোনো বান্দা গুনাহ করে ফেলতে পারেন। শরিয়াহবিরোধী কাজে লিপ্ত হয়ে যখন কেউ আক্ষেপ ও আফসোসে ভোগেন, এই বৈশিষ্ট্যটি মূলত তার মুমিন হওয়ারই প্রমাণ। এই অনুশোচনা তার ঈমানের গভীরতাকেই নির্দেশ করে।
গুনাহের পর কষ্ট: মুমিনের ঈমানি বৈশিষ্ট্য
হজরত আবু উমামা (রা.) বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (স.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ঈমান কী, হে আল্লাহর রাসুল! (অর্থাৎ আমি কীভাবে বুঝব যে, আমার মাঝে ঈমান আছে?)’ তখন রাসুলুল্লাহ (স.) বললেন, ‘যখন তোমার নেক আমল তোমাকে আনন্দিত করবে এবং তোমার গুনাহ তোমাকে কষ্টে নিপতিত করবে (গুনাহের কারণে তুমি কষ্ট পেতে থাকবে), তাহলে (বুঝবে) তুমি মুমিন।’ (মুসনাদে আহমদ: ২২১৬৬; মুসতাদরাকে হাকেম: ৩৩)
এই হাদিসটি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয় যে, গুনাহ করার পর আত্মগ্লানি, কষ্ট ও অনুশোচনা অনুভব করা একজন মুমিনের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। এটি হৃদয়ে আল্লাহভীতি এবং তাঁর আদেশ-নিষেধের প্রতি শ্রদ্ধার ইঙ্গিত বহন করে।
ক্ষমার দুয়ার: অশ্রুসিক্ত তওবা ও নামাজ
‘কেন গুনাহে জড়ালাম, কীভাবে পরিত্রাণ পাবো’— এই কষ্ট থেকে মুমিন একপর্যায়ে পবিত্র হয়ে আল্লাহর কাছে সেজদায় লুটিয়ে পড়েন। ক্ষমা পাওয়ার ব্যাকুলতায় ইস্তেগফারে অশ্রুসিক্ত হন। আর তখনই গাফুরুর রাহিমের (অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু) ক্ষমার সাগরে ঢেউ খেলে যায় এবং বান্দার সকল গুনাহ ধুয়ে মুছে সাফ করে দেন।
আবু বকর সিদ্দিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘মুসলিম যখন কোনো গুনাহ করে ফেলে, অতঃপর অজু করে দুই রাকাত নামাজ আদায় করে এবং উক্ত পাপের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়, তখন আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন।’
এরপর নবীজি (স.) এই প্রসঙ্গে দুটি আয়াত তেলাওয়াত করেন-
১. ‘যে ব্যক্তি কোনো মন্দ কাজ করে ফেলে বা নিজের প্রতি জুলুম করে বসে, তারপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়, সে অবশ্যই আল্লাহকে অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালুই পাবে।’ (সুরা নিসা: ১১০)
২. ‘এবং তারা সেই সকল লোক, যারা কখনও কোনো অশ্লীল কাজ করে ফেললে বা (অন্য কোনোভাবে) নিজেদের প্রতি জুলুম করলে, সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং তার ফলশ্রুতিতে নিজেদের গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে…’ (সুরা আলে ইমরান: ১৩৫)
(সূত্র: মুসনাদে আহমদ: ৪৭; সহিহ ইবনে হিব্বান: ৬২৩; মুসনাদে আবু ইয়ালা: ১৩)
এই হাদিস এবং কোরআনের আয়াতগুলো অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে নির্দেশ করে যে, গুনাহ করার পর অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর দিকে ফিরে আসা এবং ক্ষমা চাওয়া বান্দার জন্য ক্ষমার দুয়ার খুলে দেয়। আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের তওবা কবুল করার জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকেন।
অতএব, যখন কোনো মুমিন গুনাহ করে ফেলে এবং তার জন্য হৃদয়ে কষ্ট অনুভব করে, তখন তা দুর্বলতা নয়, বরং ঈমানের দৃঢ়তার প্রমাণ। এই অনুশোচনা তাকে আল্লাহর কাছে আরও বেশি অনুগত হতে এবং ক্ষমা চাইতে উদ্বুদ্ধ করে। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে তাকওয়া দান করুন এবং গুনাহ থেকে ক্ষমা পেতে একনিষ্ঠভাবে অশ্রুসিক্ত হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।