

মো. সাইদুল ইসলাম(মৌলভীবাজার)।।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই)সহ তৃণমূল পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত স্বাস্থ্য সহকারী, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্য পরিদর্শকরা তাদের ছয় দফা দাবি বাস্তবায়নের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি শুরু করেছেন।
রবিবার (৫ অক্টোবর) সকাল ৮টা থেকে কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে এই কর্মসূচি পালন করা হয়। এতে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে আসা স্বাস্থ্যকর্মী অংশ নেন। হাতে ব্যানার,ফেস্টুন নিয়ে তারা সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে স্লোগান দেন“দাবি মেনে নাও, জনস্বাস্থ্য বাঁচাও”, “স্বাস্থ্য সহকারীদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করো।”
বক্তারা বলেন, তারা দীর্ঘদিন ধরে একই গ্রেডে থেকে কাজ করছেন, অথচ পদোন্নতি, ইন-সার্ভিস ট্রেনিং বা আপগ্রেডেশনের মতো মৌলিক সুযোগগুলো পাচ্ছেন না। সরকারের নজর কাড়তেই বাধ্য হয়ে তারা কর্মবিরতিতে গেছেন।
বাংলাদেশ হেলথ এসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশন কমলগঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি শ্যাম কান্ত সিংহ বলেন, “দীর্ঘ তিন দশক ধরে আমরা মাঠপর্যায়ে মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে টিকাদান কার্যক্রম সফল করেছি। বাংলাদেশের ইপিআই কর্মসূচি আজ বিশ্বস্বীকৃত, কিন্তু সেই সাফল্যের নেপথ্যের কর্মীরা আজও বঞ্চিত। আমরা সরকারের বিরুদ্ধে নই, কিন্তু অবহেলার শিকার হতে চাই না। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।”
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. মোস্তাকিম আহমেদ বলেন, “মাঠে কাজ করা স্বাস্থ্যকর্মীরাই জনগণের সবচেয়ে কাছের মানুষ। টিকা, পরিবার পরিকল্পনা, প্রাথমিক চিকিৎসা সবখানেই আমাদের অবদান। কিন্তু আমাদের পদোন্নতি নেই, প্রশিক্ষণের সুযোগ নেই। দাবি পূরণ হলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে দায়িত্বে ফিরে যাব।”
সাংগঠনিক সম্পাদক সুবল কুমার সিংহ বলেন, “আমাদের দাবি অবহেলা করা মানে জনগণের স্বাস্থ্য অধিকারকে অবহেলা করা। আমরা চাই সরকার দ্রুত ইতিবাচক সাড়া দিক।”
সহ-সভাপতি মো. ময়নুদ্দীন খান বলেন, “আমাদের কাজের পরিধি বাড়ছে, কিন্তু সুবিধা আগের জায়গায়ই রয়ে গেছে। প্রতিদিন গ্রামের পর গ্রাম ঘুরে কাজ করি, তবুও স্বীকৃতি মেলে না। সরকার যদি দ্রুত সমাধান না দেয়, তাহলে আমরা আন্দোলন আরও বিস্তৃত করবো।”
উপদেষ্টা আনজুমান আরা রুবি বলেন, “আমরা নারী স্বাস্থ্য সহকারীরা গ্রামাঞ্চলে গিয়ে মানুষকে টিকাদান ও স্বাস্থ্য সচেতনতায় যুক্ত করছি। ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে কাজ করি, কিন্তু কাজের মূল্যায়ন হয় না। সরকারের কাছে অনুরোধ আমাদের ন্যায্য দাবি দ্রুত বাস্তবায়ন করে এই অচলাবস্থা দূর করুন।”
এসময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের কোষাধ্যক্ষ মো. শাকিল আহমদ, উপদেষ্টা সৈয়দ মিজানুর রহমান, ও অনিরুদ্ধ রায় প্রসাদ চৌধুরী প্রমুখ।
অন্যদিকে, আন্দোলনকারীরা জানান, সরকার ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যদি দ্রুত তাদের দাবি মেনে নেয়, তবে তারা পুনরায় দায়িত্বে ফিরে গিয়ে ইপিআই কার্যক্রম স্বাভাবিক করবেন।
এদিকে কর্মবিরতির কারণে কমলগঞ্জ উপজেলায় টিকাদান কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, ইউনিয়ন পর্যায়ের টিকাদান সেশনগুলো আপাতত বন্ধ রয়েছে, ফলে শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্যসেবায় বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
আন্দোলনকারীরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, সরকার যদি শিগগিরই তাদের দাবি মেনে না নেয়, তবে আন্দোলন সারাদেশে আরও জোরালোভাবে ছড়িয়ে পড়বে। তারা আশা প্রকাশ করেন, সরকার ন্যায্য দাবি বিবেচনা করে দ্রুত ইতিবাচক পদক্ষেপ নেবে যাতে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।