

নুর মোহাম্মদ, সুনামগঞ্জ।।
পিআর পদ্ধতিতে জুলাই সনদের ভিত্তিতে ন্যায্য নির্বাচন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতকরণ, গণহত্যার বিচার ও জুলাই সনদের বাস্তবায়নসহ পাঁচ দফা দাবিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সুনামগঞ্জ জেলা শাখার উদ্যোগে এক বিশাল জনসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার দুপুরে সুনামগঞ্জ শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে এ গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সকাল থেকেই জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে দলে দলে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ সমাবেশস্থলে জড়ো হতে থাকেন। দোয়ারাবাজার, ছাতক, দিরাই, শাল্লা, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, শান্তিগঞ্জসহ প্রায় সব উপজেলার হাজারো নেতাকর্মী নিজ নিজ প্রার্থীর নেতৃত্বে শত শত মোটরসাইকেল ও গাড়ির বহর নিয়ে সুনামগঞ্জ শহরে প্রবেশ করে।
প্রত্যেক দল নিজেদের ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে “জুলাই সনদের বাস্তবায়ন চাই”, “লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড চাই”, “গণহত্যার বিচার করো”, “ফ্যাসিবাদ বন্ধ করো”—এমন সব স্লোগানে মুখরিত করে তোলে পুরো শহর। ফলে সুনামগঞ্জ শহরজুড়ে তৈরি হয় উৎসবমুখর জনস্রোতের এক বিরল দৃশ্য।
দুপুরের দিকে পুরো বাসস্ট্যান্ড এলাকা পরিণত হয় জনসমুদ্রে। মাঠের ভেতর থেকে শুরু করে আশপাশের সড়ক পর্যন্ত ছিল মানুষের ঢল। এতে যোগ দেয় ইসলামী আন্দোলনের বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাও।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি ও সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী মুফতি শহীদুল ইসলাম পলাশী।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম (পীর সাহেব চরমোনাই)।
পীর সাহেব চরমোনাইয়ের জোরালো আহ্বান
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পীর সাহেব চরমোনাই বলেন,
দেশে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হলে জুলাই সনদের ভিত্তিতে নির্বাচন আয়োজন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। এই সনদ শুধু ইসলামী আন্দোলনের নয়, এটি ন্যায়ের ও গণমানুষের অধিকার পুনরুদ্ধারের সনদ।”
তিনি আরও বলেন,“দেশে একের পর এক অন্যায় ও দুর্নীতির শাসন চলছে। জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের লক্ষ্য হলো ইসলামভিত্তিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে জনগণের মর্যাদা ফিরিয়ে আনা।”
বিচার ও দায়মুক্ত রাজনীতি নিয়ে কড়া সমালোচনা করে সমাবেশে বক্তারা বলেন, দেশে বর্তমানে গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারের ঘাটতি প্রকট আকার ধারণ করেছে। জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের বিচার কার্যক্রম চলাকালীন তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করার দাবি জানান বক্তারা। তারা বলেন, অপরাধ ও দোষের বিচার না করে এসব দলের নেতাদের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকার সুযোগ দেওয়া জাতির সঙ্গে প্রতারণা।
বক্তারা আরও বলেন, দেশের রাজনীতি এখন গভীর ভারতীয় প্রভাবের শিকার। “ভারতীয় প্রভাব ও ফ্যাসিবাদের দোসরদের বিচারের” জোরালো দাবি তোলেন তারা। বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের সঙ্গে আপস করা যাবে না, যারা দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে যুক্ত, তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
বিশেষ অতিথিদের বক্তব্য
সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি উপাধ্যক্ষ মাওলানা তুফায়েল আহমেদ খান,ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা ইমতিয়াজ আলম,কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট বিভাগ ইসলামী আন্দোলন ) হাফিজ মাওলানা মাহমুদুল হাসান এল এল বি, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট বিভাগ ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন )মুহাম্মদ আব্দুল মুছাব্বির রুনু।
তারা বলেন “জুলাই সনদ শুধু একটি রাজনৈতিক দলিল নয়, এটি বাংলাদেশের ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থার পুনর্গঠনের রূপরেখা।”
এছাড়া বক্তব্য দেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থীরা—
মুফতি ফখরুদ্দিন (সুনামগঞ্জ-১)মাওলানা সুহেল আহমদ (সুনামগঞ্জ-৩)মুফতি আলী আকবর সিদ্দিকী (সুনামগঞ্জ-৫)
তারা সবাই একে একে বলেন, “দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, গণমানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনা এবং দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনে ইসলামী আন্দোলনই জনগণের প্রকৃত আশার প্রতীক।”
সমাবেশে ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের বিপুলসংখ্যক তরুণ অংশ নেয়। তরুণদের হাতে জাতীয় পতাকা, ইসলামী আন্দোলনের ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড ছিল। তারা সংগীত ও শ্লোগানের মাধ্যমে সমাবেশস্থলকে প্রাণবন্ত করে তোলে।
ছাত্র আন্দোলনের নেতা রায়হান মুজাহিদ, মাওলানা কুতুবউদ্দিন সিয়াম (শান্তিগঞ্জ), মাওলানা আল আমিন খান (বিশ্বম্ভরপুর), মাওলানা ইলিয়াস হুসাইন (শান্তিগঞ্জ), মাওলানা মনির হুসাইন (দোয়ারাবাজার), ছাত্রনেতা মারুফ হাসান, জুলাই যোদ্ধা জহুর আলী, হাফেজ কামাল উদ্দিন (জামালগঞ্জ), মাওলানা সালমান আহমদ সুজন (তাহিরপুর) ও মাওলানা আবু হুরায়রা (বিশ্বম্ভরপুর) প্রমুখ বক্তৃতা দেন।
বক্তারা বলেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কোনো দলীয় স্বার্থে নয়, জনগণের স্বার্থে রাজনীতি করে। তাদের পাঁচ দফা দাবিই জাতির কল্যাণের প্রতীক।
“আমরা এমন একটি বাংলাদেশ চাই যেখানে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হবে, দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গড়ে উঠবে এবং ইসলামি মূল্যবোধে পরিচালিত রাষ্ট্রব্যবস্থা হবে।”
বক্তারা আশা প্রকাশ করেন, ইসলামী আন্দোলনের এই গণজোয়ারই আগামী নির্বাচনে একটি নতুন রাজনৈতিক পরিবর্তনের সূচনা ঘটাবে।