

ইসলামে গায়েবি সাহায্য বা অদৃশ্য সহায়তা আল্লাহর পক্ষ থেকে মুমিনদের জন্য এক বিশেষ নেয়ামত। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে এমন বহু দোয়া বর্ণিত হয়েছে, যা বিপদ, দুশ্চিন্তা বা যেকোনো কঠিন পরিস্থিতিতে আল্লাহর সাহায্য লাভে অত্যন্ত কার্যকর। আমাদের প্রিয়নবী (স.) নিজেও এসব দোয়া করতেন এবং সাহাবিদেরকে তা শিখিয়েছেন।
নিম্নে হাদিসের আলোকে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ দোয়া তুলে ধরা হলো, যার মাধ্যমে আল্লাহর গায়েবি সাহায্য লাভ করা যায়।
১. দোয়া ইউনুস
কঠিন বিপদে পড়ে যখন কোনো উপায় খুঁজে পাওয়া যায় না, তখন এই দোয়া পাঠ করা অত্যন্ত ফলপ্রসূ। মাছের পেটে হজরত ইউনুস (আ.) এই দোয়াটি পাঠ করে মুক্তি পেয়েছিলেন।
لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ
উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুন্তু মিনাজ-জালিমীন।
অর্থ: আপনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। আপনি পবিত্র। নিঃসন্দেহে আমি জুলুমকারীদের একজন।
রাসুল (স.) বলেছেন, ‘যে মুসলিম এই দোয়া বিপদে পড়ে পাঠ করবে, আল্লাহ তার কষ্ট দূর করবেন।’ (তিরমিজি: ৩৫০৫)
২. কঠিন বিষয় সহজ হওয়ার দোয়া
কোনো কাজ যদি অসম্ভব মনে হয় বা কোনো বাধা অতিক্রম করা কঠিন হয়, তখন এই দোয়াটি আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়ার জন্য খুবই উপকারী।
اللَّهُمَّ لا سَهْلَ إِلَّا مَا جَعَلْتَهُ سَهْلًا، وَأَنْتَ تَجْعَلُ الْحَزْنَ إِذَا شِئْتَ سَهْلًا
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লা সাহলা ইল্লা মা জা‘আলতাহু সাহলান, ওয়া আনতা তাজ‘আলুল হাজনা ইজা শি‘তা সাহলান।
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি যা সহজ করে দেন, তা ছাড়া কোনো কিছুই সহজ নয়। আপনি চাইলে কঠিনকেও সহজ করে দেন। (ইবনে হিব্বান: ৯৭৪)
৩. আল্লাহর ওয়াদার উল্লেখ করে দোয়া
যখন বিজয়, সাহায্য বা রিজিক লাভের জন্য আল্লাহর প্রতি সম্পূর্ণ ভরসা করে দোয়া করতে হয়, তখন এই দোয়াটি পাঠ করা হয়। বদর যুদ্ধের সময় নবীজি (স.) এই দোয়া করেছিলেন।
اللَّهُمَّ أَنْجِزْ لِي مَا وَعَدْتَنِي اللَّهُمَّ آتِ مَا وَعَدْتَنِي
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আনজিজ লি মা ওয়াআদতানি, আল্লাহুম্মা আতি মা ওয়াআদতানি।
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি আমার সঙ্গে যা ওয়াদা করেছেন, তা পূর্ণ করুন। হে আল্লাহ! আপনি আমার সঙ্গে যা ওয়াদা করেছেন, তা দান করুন। (সহিহ মুসলিম: ৪৪৮০)
৪. সর্বোত্তম ভরসার দোয়া
জীবনের যেকোনো কঠিন পরিস্থিতি, ভয় বা বিপদ থেকে বাঁচতে আল্লাহর ওপর পরিপূর্ণ ভরসা ও তাওয়াক্কুলের বহিঃপ্রকাশ এই দোয়া। হজরত ইবরাহিম (আ.) এবং মুহাম্মদ (স.) উভয়ই বিপদে এই দোয়া করেছিলেন।
حَسْبُنَا اللَّهُ وَنِعْمَ الْوَكِيلُ
উচ্চারণ: হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি’মাল ওয়াকীল।
অর্থ: আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট, তিনিই উত্তম অভিভাবক। (বুখারি: ৪৫৬৩; আলে ইমরান: ১৭৩)
৫. যাবতীয় দুশ্চিন্তা থেকে পরিত্রাণের দোয়া
এই দোয়াটি শুধু আল্লাহর গায়েবি সাহায্যের জন্যই নয়, বরং জীবনের সকল প্রকার দুশ্চিন্তা, দুঃখ, অলসতা এবং ঋণ থেকে মুক্তি পেতেও অত্যন্ত কার্যকর।
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الهَمِّ وَالحَزَنِ، وَالعَجزِ وَالكَسَلِ، وَالبُخلِ وَالجُبنِ، وَضَلَعِ الدَّينِ وَقَهْرِ الرِّجَالِ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়াল আজঝি ওয়াল কাসালি, ওয়াল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া দ্বালা’য়িদ্দাইনি ওয়া কাহরির রিজাল।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই দুশ্চিন্তা ও দুঃখ, অপারগতা ও অলসতা, কৃপণতা ও ভীরুতা এবং ঋণের ভার ও মানুষের দমন-পীড়ন থেকে। (সহিহ বুখারি: ২৮৯৩)
গায়েবি সাহায্য লাভের কিছু শর্ত
শুধু দোয়া করলেই হবে না, আল্লাহর সাহায্য পেতে হলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ শর্ত মেনে চলা আবশ্যক:
ঈমান ও তাকওয়া: ‘যারা আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তাদের জন্য পথ তৈরি করে দেন।’ (সুরা তালাক: ২)
ধৈর্য ও সালাত: ‘সাহায্য চাও ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে।’ (সুরা বাকারা: ১৫৩)
একনিষ্ঠভাবে দোয়ার উপর স্থির থাকা: রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘তোমরা দোয়া করো, আল্লাহ অবশ্যই কবুল করবেন।’
গায়েবি সাহায্য হলো মুমিনের এক বিশেষ শক্তি, যা আল্লাহর প্রতি তাওয়াক্কুল, আন্তরিক দোয়া ও সঠিক আমলের মাধ্যমে অর্জন করা যায়। উপরোক্ত দোয়াগুলো জীবনের প্রতিটি সংকটে আমল করলে আল্লাহর বিশেষ সাহায্যের আশা করা যায়। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে দোয়ার প্রতি আগ্রহী করে তুলুন এবং আমাদের দুঃসময়ে গায়েবি সাহায্য দ্বারা সহায়তা করুন। আমিন।