মেহেদী হাসান সোহাগ-মাদারীপর প্রতিনিধি।।
আজ ১০ ডিসেম্বর মাদারীপুর মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে সদর উপজেলার সমাদ্দার ব্রিজের কাছে একটানা ৩৬ ঘন্টা সম্মুখ যুদ্ধে পরাজিত হয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করলে মাদারীপুর পাক হানাদার মুক্ত হয়। এ সংবাদ মুক্তিকামী মানুষের কাছে পৌছালে বাঁধভাঙ্গা জোয়ারের মত জয়বাংলা শ্লোগান দিয়ে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে এসে আনন্দ উল্লাস করে। যুদ্ধে শহীদ হন মাদারীপুরের সর্ব কনিষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা সরোয়ার হোসেন বাচ্চু।
জানা যায়, ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে জেলার সবক‘টি থানা মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে চলে আসে। এ কারণেই পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা মাদারীপুর শহরের এ.আর হাওলাদার জুট মিলের অভ্যন্তরে ও নাজিমউদ্দিন কলেজে অবস্থান নেয়। মুক্তিযোদ্ধারা চারদিক থেকে তাদের ঘিরে রাখে। তবে গোপন সংবাদে জানা যায়, পাক বাহিনী মাদারীপুর থেকে ফরিদপুরের উদ্দেশ্যে পালিয়ে যাবে। এ সংবাদ পেয়ে বিভিন্ন অঞ্চলের ৩ শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা বর্তমান সদর উপজেলার ঘটকচর থেকে সমাদ্দার ব্রিজের পশ্চিম পাড় পর্যন্ত মহাসড়কের দু‘পাশে প্রায় ৪.কিমি ব্যাপী অবস্থান নেয়। ৯ ডিসেম্বর ভোর ৫ টায় হানাদার বাহিনী গোলবারুদ, অস্ত্র ও কনভয়সহ তাদের বাঙালি দোসর রাজাকার, আলবদর, আলসামস ও মুজাহিদ বাহিনী নিয়ে ফরিদপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। ভোর সাড়ে ৫ টার দিকে ঘটকচর ব্রিজ পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমন শুরু করে।
তুমুল যুদ্ধের এক পর্যায়ে হানাদার বাহিনীর গোলা-বারুদ স্তিমিত হয়ে আসলে ১০ ডিসেম্বর বিকেলে মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে হ্যান্ডমাইকযোগে পাক বাহিনীকে আত্মসর্পনের আহবান জানানো হয়। এতে সাড়া দিয়ে হানাদার বাহিনী মেজর আবদুল হামিদ খটক ও ক্যাপ্টেন সাঈদ, ৩৭ পাকিসেনা, ১৪ জন মুজাহিদ নিয়ে মোট ৫৩ জন মুক্তিযোদ্ধা খলিল বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পন করতে বাধ্য হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পাকি বাহিনীর আত্মসমর্পনের মধ্যদিয়ে মাদারীপুর শত্রুমুক্ত হয়। এই যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিল খলিল বাহিনী। যুদ্ধে শহীদ হন মাদারীপুরের সর্ব কনিষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা সরোয়ার হোসেন বাচ্চু। এ যুদ্ধে ২০ হানাদার সেনা নিহত হয়।
প্রতি বছর মাদারীপুর দিবস যথাযথভাবে উদযাপনের জন্য ব্যাপক কর্মসুচি গ্রহণ করা হয়। এবারও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে নানা কর্মসুচি হাতে নেওয়া হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধে তৎকালীন খলিল বাহিনীর প্রধান, বীর মুক্তিযোদ্ধা খলিলুর রহমান খান বলেন, এক সাগর রক্ত আর লক্ষাধিক মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে দেশ স্বাধীন হয়েছে। আমরা মুক্তিযোদ্ধারা ১০ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সাথে সম্মুখে যুদ্ধ করে মাদারীপুরকে হানাদার মুক্ত করি। মাদারীপুর মুক্ত দিবস উপলক্ষ্যে নান কর্মসুচী গ্রহণ করা হয়েছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক- মেহেদী হাসান
Copyright © 2025 Livenews24. All rights reserved.