সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার জামতৈল ইউনিয়নের জামতৈল কলেজপাড়া এলাকায় শুক্রবার বিকেলে অজ্ঞাত এক যুবক (২৫) এলাকায় সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করছিল। এ সময় ওই এলাকার রুহুল আমিন মাস্টারের ছেলে মাছের হ্যাচারি ব্যবসায়ী ফরহাদুল হক হ্যাপী (৫৫) ও তার ছেলে মো. শান্ত (২৮) তাকে ধাওয়া দেন। পরে ধরে এনে রশি দিয়ে গাছের সঙ্গে পিঠমোড়া করে হাত-পা বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় অমানবিক ভাবে নির্যাতন করেন তারা।
এ নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ভাইরাল হয়। এ ঘটনায় শনিবার দুপুরে কামারখন্দ থানা পুলিশ হ্যাচারি ব্যবসায়ী ফরহাদুল হক হ্যাপীকে আটক করে। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানায় পুলিশ।
ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওতে দেখা যায়, হ্যাচারি ব্যবসায়ী হ্যাপী (৫৫) গাছে বাঁধা অজ্ঞাত যুবকটির হাতের নখগুলো একটি প্লায়ার্স দিয়ে উপড়ে ফেলছেন। এ সময় হ্যাপী বলেন, ‘ওর আঙুল দুইটা ভাঙছি। ও অন্য চোরদের নাম না বলা পর্যন্ত ওর আঙুল সবগুলা ভাঙমু। তার আগে ওকে ছাড়মু না। আমি ওকে মেরে ফেলমু না। ওর হাত-পা ভাংমু। তারপর ছাড়মু’।
এ সময় ওই যুবকের আর্তচিৎকারে এলাকার লোকজন এগিয়ে এসে ওই যুবককে এভাবে না মেরে পুলিশে দেওয়ার জন্য বলেন। কিন্তু হ্যাপী এতে রাজি না হয়ে তাকে নির্যাতন করতেই থাকেন।
এ বিষয়ে এলাকাবাসী জানান, তাকে বারবার এ অমানবিক নির্যাতন করতে নিষেধ করা হলেও বাপ-ছেলে কেউ এ নিষেধ শোনেনি। তারা বৃষ্টির মধ্যে কাঁদা-পানিতে বসিয়ে গাছের সঙ্গে পিঠমোড়া করে হাত-পা বেঁধে প্রায় দুই ঘণ্টা নির্যাতন চালায়। এতে ওই যুবক বারবার সংজ্ঞাহীন হয়ে চরম অসুস্থ হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে সে পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়ানোর শক্তি হারিয়ে ফেলে। এ সময় অবস্থা বেগতিক দেখে হ্যাপীর ছেলে শান্ত তাকে ছেড়ে দেয়। কিন্তু সে উঠে দাঁড়াতে পারছিল না। ফলে শান্ত নিজেই তার জামার কলার ধরে টেনেহিঁচড়ে তুলে এলাকা থেকে তাড়িয়ে দেয়।
এ বিষয়ে আটকের আগে শনিবার সকালে হ্যাচারি ব্যবসায়ী ফরহাদুল হক হ্যাপী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কিছুদিন আগে আমার একটি ছাগল হারিয়ে গেছে। আমার ধারণা ও-ই ছাগলটি সে চুরি করেছে। এ দিন সে আবার আরেকটি ছাগল চুরি করতে আসে। এ সময় আমাকে দেখে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে। আমি তাকে তাড়া করে ধরে ফেলি। তার সঙ্গে আর কারা জড়িত আছে তাদের নাম সে বলেনি। তাই তাকে ২/১টা চড় থাপ্পড় দিয়ে ছেড়ে দিয়েছি। এটা কোনো দোষের কিছু না। এ ব্যাপারে কামারখন্দ থানা থেকে পুলিশ এসেছিল। আমি বাড়িতে ছিলাম না। এ বিষয়ে পুলিশের সঙ্গে আমার ফোনে কথা হয়েছে। তারা বিষয়টি বুঝতে পেরেছে’।
এ বিষয়ে কামারখন্দ থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন,’খবর পেয়ে ওই দিনই ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু নির্যাতিত যুবক ও নির্যাতনকারী কাউকে সেখানে পাওয়া না যাওয়ায় তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া যায়নি। তবে শনিবার দুপুরে অভিযান চালিয়ে নির্যাতনকারী হ্যাচারি ব্যবসায়ী ফরহাদুল হক হ্যাপীকে আটক করা হয়েছে। এ ছাড়া এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে’।
তবে ওই যুবকের নাম বা তার সর্বশেষ অবস্থান বিষয়ে পুলিশ কোনো তথ্য দিতে পারেনি। অনুসন্ধানেও তার বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
সম্পাদক ও প্রকাশক- মেহেদী হাসান
Copyright © 2024 Livenews24. All rights reserved.