মেহেদী হাসান সোহাগ, মাদারীপুর.
মাদারীপুরে করোনা ভাইরাসে মোট ২৭৩ জন কোয়ারেন্টিনে আছে। যার মধ্যে হোম কোয়ারেন্টিনে ২৭০ জন এবং হাসপাতালের কোয়ারেন্টিনে আছে ৩ জন। গত ২৪ ঘন্টায় নতুন করে হোম কোয়ারেন্টিনে আছে ২৯ জন। সদর হাসপাতালের আইসলেশনে আছে ৩ জন। এ পর্যন্ত হোম কোয়ারেন্টিন থেকে রিলিজ পেয়েছেন ২৩৬ জন। অতিরিক্ত দামে পন্য বিক্রি করায় মাদারীপুরের রাজৈরে ৬ ব্যবসায়ীকে ৭২ হাজার টাকা জরিমানা ও শিবচরে প্রশাসনের আদেশ অমান্য করে দোকান খোলা রাখার অপরাধে তিন দোকান মালিককে পাঁচ হাজার টাকা করে ১৫ হাজার টাকা জরিমান করা হয়।
জানা গেছে, শনিবার সকাল ১১ টা থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী মাজিস্ট্রেট মোঃ আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য দ্রব্যের বাজার দর নিয়ন্ত্রনে শিবচর বাজার সহ আশেপাশের কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখেন এবং দোকানে মুল্য তালিকা ঝুলিয়ে রাখার নির্দেশ দেন। এ সময় পৌরসভার শিবরায়ের কান্দি মোড় এলাকায় দোকান খোলা রাখার দায়ে তিন দোকান মালিককে পাঁচ হাজার টাকা করে জরিমান করা হয়।
অপরদিকে শনিবার সকাল ৭ টার দিকে রাজৈর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট সোহানা নাসরিন উপজেলার টেকেরহাট বন্দরের শিমুলতলা কাঁচামালের পাইকারী বাজারে অভিযান পরিচালনা করেন। এসময় মূল্য তালিকা দেখাতে না পারায় কাঁচাবাজার কমিটির সভাপতি আবুল হোসেন শেখকে ৩০ হাজার, ব্যবসায়ী খোকন খালাসী ও তারামিয়াকে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা করেন। অপরদিকে একইদিন বেলা ১১ টার দিকে ভোক্তা অধিকার সংগঠনের মাদারীপুর জেলার সহকারী পরিচালক জান্নাতুল ফেরদৌস এর নেতৃত্বে টেকেরেহাট চাউলের আড়তে অভিযান পরিচালনা করেন। এসময় ধার্য্যকৃত মূল্যের অধিক দামে চাল বিক্রি করায় ব্যবসায়ী হরিপদ সাহাকে ১০ হাজার , খায়রুল ইসলাম ও মোতালেব মাতুব্বরকে ৬ হাজার করে জরিমানা করেন।
এদিকে খুব বেশি ঝুঁকিতে থাকা শিবচরের ৪টি পয়েন্টে শনিবার সকাল থেকে অতিরিক্ত পুলিশ টহল দিচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকলকে সর্তক করা হচ্ছে যাতে প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য করে কেউ প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাহির না হয়। করোনার ঝুঁকি এড়াতে শিবচরে ঐ চার এলাকার সবধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও গণপরিবহন চলাচল বন্ধ রেখেছে প্রশাসন।
জানা যায়, সম্প্রতি জেলার শিবচর উপজেলায় সাড়ে ৬ শ প্রবাসী ইতালীসহ বিভিন্ন দেশ থেকে জেলায় সাড়ে ৩ হাজার প্রবাসী প্রবেশ করে। ঢাকার হাসপাতালসহ অন্যত্র আইসোলেশনে রয়েছে শিবচরের একই পরিবারের ৮ সদস্য। এমন পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে এক জরুরী সভায় শিবচর পৌরসভার ২ টি ওয়ার্ড, পাঁচ্চর ইউনিয়নের ১ টি গ্রাম ও দক্ষিন বহেরাতলা ইউনিয়নের ১ টি গ্রামে কনটেইনমেন্ট ঘোষনা করে এলাকার মানুষদের চলাচল সীমিত করা হয়। উপজেলার গণপরিবহন বন্ধ ঘোষনা করে প্রশাসন । এ ঘোষনার পর শুক্রবার সকাল থেকেই উপজেলাটি থেকে সকল বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। সচেতনতা বাড়ায় জনশুন্য হয়ে পড়ে বাজার ঘাট। শুক্রবার শিবচরে অতিরিক্ত ডিআইজি, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, সিভিল সার্জন, আইডিসিআর স্থানীয় কর্মকর্তাদের সাথে দফায় দফায় সভা করে জনসমাগমে কঠোর বিধি নিষেধ আরোপ করেন। চিহ্নিত এলাকায় জনজীবন নিয়ন্ত্রন করে তাদের হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখাসহ উপজেলাটির জনজীবন নিয়ন্ত্রন আনতে বাজারগুলোর দোকানপাট ব্যবসা বানিজ্য ও জনসমাগমে নিয়ন্ত্রন আরোপ করে। প্রস্তুত করা হচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন হিসেবে একটি স্কুলকে। রাতেই জরুরী সেবা ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যর দোকান ছাড়া সকল দোকান বন্ধ করে দেয়া হয়। এদিকে স্বতস্ফূর্তভাবে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা পালন করতে দেখা গেছে শিবচরবাসিকে। সকাল থেকেই বেশিরভাগ দোকানপাট বন্ধ ছিল।
জেলা প্রশাসক মো. ওহিদুল ইসলাম বলেন, করোনা মোকাবেলায় আমাদের সকলকে খুব সচেতন থাকতে হবে। শিবচরের চারটি এলাকায় প্রশাসনের বাড়তি নজরদারি রয়েছে। ঐ চার এলাকায় সব সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন রয়েছে। করোনার কারন দেখিয়ে যেসব ব্যবসায়ীরা পন্য বেশি দামে বিক্রি করতে না পারে এবং বাজার যাতে নিয়ন্ত্রনে থাকে সে জন্য আমরা সার্বক্ষিণিক কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের প্রতিটি উপজেলায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা প্রতিনিয়তই বাজার মনিটারিং করছে। যারা অতিরিক্ত দামে পন্য বিক্রি করছে তাদের ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করা হচ্ছে। রোববার জেলার ব্যবসায়ীদের নিয়ে আমরা মিটিং করবো কিভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম স্বাভাবিক রাখা যায়।
সম্পাদক ও প্রকাশক- মেহেদী হাসান
Copyright © 2024 Livenews24. All rights reserved.