

সমুদ্র থেকে ড্রোন হামলায় দানিয়ুব নদীর বদ্বীপে ইউক্রেনের ‘সর্ববৃহৎ’ রণতরীকে ধ্বংস করেছে রাশিয়া। সাড়ে তিন বছর আগে জোড়া ক্ষেপণাস্ত্রে মস্কোর যুদ্ধজাহাজ ডুবিয়েছিল কিয়েভ।
কড়ায়-গণ্ডায় তারই প্রতিশোধ নিল ক্রেমলিন? উঠছে প্রশ্ন। আর স্যাকরার ঠোকাঠুকি নয়। রুশ হাতুড়ির মোক্ষম বাড়িতে ব়ড় ধাক্কা খেল ইউক্রেন! দু’পক্ষের তুমুল যুদ্ধের মধ্যেই কিয়েভের ‘সর্ববৃহৎ’ রণতরীকে ড্রোন হামলায় ডুবিয়েছে মস্কো।
এই ঘটনা সাড়ে তিন বছর ধরে চলা পূর্ব ইউরোপের সংঘাতে ‘খেলা ঘোরাতে’ পারে বলে মনে করছেন সাবেক সেনাকর্তাদের একাংশ।
অনেকে আবার একে ক্রেমলিনের চরম প্রতিশোধ হিসাবে বর্ণনা করেছেন। তাদের অনুমান, আগামী দিনে লড়াইয়ের ঝাঁজ আরও বাড়াবেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
২৮ অগস্ট ইউক্রেনের ‘সর্ববৃহৎ’ রণতরী ধ্বংস নিয়ে বিবৃতি দেয় রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। দানিয়ুব নদীর বদ্বীপে সলিলসমাধি ঘটা কিয়েভের যুদ্ধজাহাজটির নাম ছিল ‘সিম্ফেরোপল’।
মস্কোর এহেন সামরিক সাফল্যের খবর প্রকাশ্যে আসতেই সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে ড্রোন হামলায় রণতরীতে বিস্ফোরণের হাড়হিম করা ভিডিও। তবে যুদ্ধজাহাজ হারানোর কথা একরকম স্বীকার করে নিয়েছে কিয়েভ।
তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, রুশ আগ্রাসন ঠেকাতে প্রথম থেকেই স্থলের যুদ্ধকে জলে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে ইউক্রেন।
লড়াইয়ের একেবারে গোড়ায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় মস্কোর একটি রণতরী ডুবিয়ে দেয় কিয়েভ। ক্রেমলিনের কাছে সেটা ছিল বড় ধাক্কা। প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের একাংশের দাবি, সাড়ে তিন বছরের মাথায় সেই ঘটনার মোক্ষম প্রতিশোধ নিল রাশিয়া।
শুধু তা-ই নয়, পুতিনের এই আঘাত সামলে প্রতি আক্রমণে যাওয়া ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির কাছে কঠিন হতে চলেছে বলেই মনে করছেন তারা।
ইউক্রেনীয় হামলায় ধ্বংস হওয়া রুশ যুদ্ধজাহাজটির নাম ছিল ‘মস্কোভা’। ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র বহণকারী ওই রণতরীটি মস্কোর কৃষ্ণসাগর নৌবহরে থাকাকালীন লড়াইয়ে অংশগ্রহণ করে।
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি পুতিন কিয়েভ আক্রমণের নির্দেশ দিলে সেভাস্তোপোল বন্দর ছেড়ে ধীরে ধীরে ইউক্রেনীয় উপকূলের দিকে এগোতে শুরু করে ‘মস্কোভা’।
সর্প দ্বীপ (স্নেক আইল্যান্ড) দখল ছিল এর উদ্দেশ্য। সংশ্লিষ্ট যুদ্ধজাহাজটির সঙ্গে ‘ভ্যাসিলি বাইকভ’ নামের টহলদারি জলযানকেও পাঠিয়েছিল ক্রেমলিন।
প্রাথমিক পর্যায়ে অবশ্য ভালই সাফল্য পেয়েছিল ‘মস্কোভা’। প্রায় একার ক্ষমতাতেই সর্প দ্বীপকে ঘিরে ধরে আক্রমণ শানায় ওই রণতরী। সেই চাপ ইউক্রেনীয় সৈন্যবাহিনী সহ্য করতে পারেনি।
তাদের বেশ কয়েক জনকে বন্দিও করে রুশ সেনারা। পরবর্তীকালে দক্ষিণ ইউক্রেনের ওডেসা বন্দরের দিকে ‘মস্কোভা’কে নতুন অপারেশনের দায়িত্ব দিয়ে পাঠান পুতিন। আর সেখানেই মস্ত বড় ভুল করে বসেন রুশ প্রেসিডেন্ট।
২০২২ সালের ১৩ এপ্রিল রণতরী ধ্বংসকারী দু’টি ‘আর-৩৬০ নেপচুন’ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ‘মস্কোভা’কে নিশানা করে ইউক্রেনীয় বাহিনীঅ। ওই সময়ে ওডেসা বন্দর থেকে ৮০ নটিক্যাল মাইল (প্রায় ১৫০ কিলোমিটার) দূরে ছিল ওই রুশ যুদ্ধজাহাজ।
নিঃশব্দে কৃষ্ণসাগরের দিক দিয়ে এগোচ্ছিল এটি। তখনই রেডারে তার উপস্থিতি টের পেয়ে জোড়া ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে বসে জেলেনস্কির বাহিনী। বিদ্যুৎগতিতে সেগুলি আছড়ে পড়তেই বিকট বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে ‘মস্কোভা’তে আগুন ধরে যায়।
ইউক্রেনীয় গণমাধ্যমগুলির প্রতিবেদন অনুযায়ী, স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ জোড়া ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে টলে ওঠে রুশ রণতরী। তার পরেও যুদ্ধজাহাজটিকে বাঁচানোর কম চেষ্টা করেননি মস্কোর নৌযোদ্ধারা।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাতে ব্যর্থ হন তারা। ২০২২ সালের ১৪ এপ্রিল সম্পূর্ণ ভাবে ‘মস্কোভা’র সলিলসমাধি ঘটে। ক্রেমলিন অবশ্য যুদ্ধজাহাজ ডুবে যাওয়ার নেপথ্যে কিভের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কথা স্বীকার করেনি।