একটা সময় ইংরেজি কিংবা তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার্থীদের ফলাফল খারাপ হতো। গণিতেও অনেকে ভালো ফলাফল করতে পারত না। তবে এবারের সদ্য প্রকাশিত পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, স্কুল, মাদরাসা ও কারিগরি বোর্ডের শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি খারাপ ফলাফল করেছে গণিতে। নয়টি স্কুল বোর্ড, মাদরাসা ও কারিগরি বোর্ডের বিষয়ভিত্তিক ফলাফলে যেখানে বাংলায় ৯০ শতাংশের ওপরে ভালো করেছে শিক্ষার্থীরা, সেখানে গণিত এর ধারেকাছেও নেই।
এবারের ফলাফলে বিগত বছরের চেয়ে পাসের হার কমেছে ১৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ। এ বছর গড় পাসের হার ৬৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ এবং মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে এক লাখ ৩৯ হাজার ৩২ জন। বেশিরভাগ বোর্ডেই গণিতে ফেল করেছে শিক্ষার্থীরা।
তবে সব বোর্ডের শিক্ষার্থীরা বেশি ভালো করেছে বাংলায়। এরপর বিজ্ঞানের বিভাগের বিষয় রসায়নেও ভালো করেছে শিক্ষার্থীরা।
চলতি বছরের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষায় সারাদেশে শতভাগ পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৯৮৪টি। দেশের মোট ১৩৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষার্থীই পাস করেনি।
গণিতের এমন ফলাফল খারাপ হওয়ার বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘অনেক সময় প্রশ্ন কঠিন হলে তার প্রভাব পড়ে। এসএসসিতে ফলাফলের শতাংশ নির্ভর করে অংক ও গণিতের ওপর। এইচএসসিতে ইংরেজির ওপর নির্ভর করে। এবার হতে পারে প্রশ্ন কঠিন হয়েছে। আরেকটি বিষয় হলো, বিশেষ করে মফস্বলে ইংরেজি ও গণিতের ভালো শিক্ষক নেই। সরকারের উচিত এই দিকগুলোতে নজর দেওয়া। তাহলে হয়ত গণিত ও ইংরেজিতে শিক্ষার্থীরা ভালো করতে পারবে।’
সহানুভূতির নম্বর না দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে তিনি বলেন, ‘ফলাফল অন্য বছরের চেয়ে খারাপ হওয়ার পেছনে এটাও একটা কারণ। তবে নম্বর বাড়িয়ে দেওয়ার বিষয়টি কিন্তু বোর্ড থেকে বলে দিতো তেমন না। শিক্ষকরা হয়তো কাউকে ভালো গ্রেডের কাছাকাছি নম্বর থাকলে একটু বাড়িয়ে দিতেন। এবার এ বিষয়ে কড়াকড়ি করা হয়েছে।’
কোন বোর্ডে কোন বিষয়ে কেমন হলো ফলাফল
ফলাফল অনুযায়ী, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৬৭ দশমিক ৫১ শতাংশ, বরিশালে ৫৬ দশমিক ৩৮, চট্টগ্রামে ৭২ দশমিক ০৭, কুমিল্লায় ৬৩ দশমিক ৬, দিনাজপুর ৬৭, যশোর ৭৩ দশমিক ৬৯, রাজশাহী ৭৭ দশমিক ৬৩, সিলেট ৬৮ দশমিক ৫৭, ময়মনসিংহ ৫৭ দশমিক ৩৫। এ ছাড়া, মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডে ৬৮ দশমিক ০৯ ও কারিগরিতে ৭৩ দশমিক ৬৩ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে।
পাঁচটি বিষয়ের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, রাজশাহী বোর্ডে পাসের হার বাংলায় ৯৮ দশমিক ৯০, ইংরেজিতে ৯৩ দশমিক ১০, গণিতে ৮৬ দশমিক ৫২, পদার্থে ৯৭ দশমিক ৮২, রসায়নে ৯৫ দশমিক ৫৬, আইসিটিতে ৯৮ দশমিক ১১, পৌরনীতিতে ৯৮ দশমিক ৩৩ ও অ্যাকাউন্টিংয়ে ৯২ দশমিক ৬৪।
ঢাকা বোর্ডে পাসের হার বাংলায় ৯৬ দশমিক ৮৪, ইংরেজিতে ৮৭ দশমিক ৮৫, গণিতে ৭৫ দশমিক ১৪, পদার্থে ৯২ দশমিক ৫৩, রসায়নে ৯৪ দশমিক ৯৭, আইসিটিতে ৯৮ দশমিক ৩৪, পৌরনীতিতে ৯৪ দশমিক ২৬, অ্যাকাউন্টিংয়ে ৯২ দশমিক ৪৯।
কুমিল্লা বোর্ডে পাসের হার বাংলায় ৯৮ দশমিক ৮৬, ইংরেজিতে ৮৮ দশমিক ৭৮, গণিতে ৭২ দশমিক ২, পদার্থে ৯৮ দশমিক ৬৩, রসায়নে ৯৮ দশমিক ৪২, আইসিটিতে ৯৯ দশমিক ৪২, পৌরনীতিতে ৯৬ দশমিক ৯৪, অ্যাকাউন্টিংয়ে ৮৯ দশমিক ৮০।
যশোর বোর্ডে পাসের হার বাংলায় ৯৭ দশমিক ৯২, ইংরেজিতে ৮৩ দশমিক ৭৭, গণিতে ৮৫ দশমিক ২, পদার্থে ৯৬ দশমিক ৮, রসায়নে ৯৫ দশমিক ৮৫, আইসিটিতে ৯৭ দশমিক ১৪, পৌরনীতিতে ৯৫ দশমিক ৬৭, অ্যাকাউন্টিংয়ে ৯২ দশমিক ৬০।
চট্টগ্রাম বোর্ডে পাসের হার বাংলায় ৯৮ দশমিক ৬২, ইংরেজিতে ৮৩ দশমিক ২৪, গণিতে ৮১ দশমিক ৫৩, পদার্থে ৯৭ দশমিক ৬১, রসায়নে ৯৭ দশমিক ২৯, আইসিটিতে ৯৭ দশমিক ৯৫, পৌরনীতিতে ৯৫ দশমিক ৯৯, অ্যাকাউন্টিংয়ে ৯৫ দশমিক ৫৬।
বরিশাল বোর্ডে পাসের হার বাংলায় ৯২ দশমিক ৭৫, ইংরেজিতে ৬৯ দশমিক ৫৬, গণিতে ৬৪ দশমিক ৬২, পদার্থে ৯২ দশমিক ১০, রসায়নে ৯১ দশমিক ৫১, আইসিটিতে ৯৬ দশমিক ৫৯, পৌরনীতিতে ৮৯ দশমিক ৬১, অ্যাকাউন্টিংয়ে ৮৬ দশমিক ২৭।
সিলেট বিভাগে পাসের হার বাংলায় ৯৫ দশমিক ৩৩, ইংরেজিতে ৮৯ দশমিক ৬১, গণিতে ৮৩ দশমিক ১৭, পদার্থে ৮৩ দশমিক ০৬, রসায়নে ৯৩ দশমিক ৫১, আইসিটিতে ৯৬ দশমিক ৭৬, পৌরনীতিতে ৯৭ দশমিক ৮৭, অ্যাকাউন্টিংয়ে ৯১ দশমিক ৬২।
দিনাজপুর বোর্ডে পাসের হার বাংলায় ৯৯ দশমিক ২৩, ইংরেজিতে ৮৮ দশমিক ৫৫, গণিতে ৭১ দশমিক ৩৫, পদার্থে ৯৮ দশমিক ২৩, রসায়নে ৯৭ দশমিক ৮৭, আইসিটিতে ৯৯ দশমিক ৫২, পৌরনীতিতে ৯৬ দশমিক ৮৫, অ্যাকাউন্টিংয়ে ৯৪ দশমিক ৮৬।
ময়মনসিংহ বিভাগে পাসের হার বাংলায় ৯৭ দশমিক ২১, ইংরেজিতে ৮৪ দশমিক ৪৪, গণিতে ৬৪ দশমিক ২৭, পদার্থে ৯৫ দশমিক ৪৭, রসায়নে ৯২ দশমিক ৭৪, আইসিটিতে ৯৪ দশমিক ৬৫, পৌরনীতিতে ৯৪ দশমিক ৫৫, অ্যাকাউন্টিংয়ে ৯১ দশমিক ৩২।
মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৬৮ দশমিক ০৯ শতাংশ। এই বোর্ডে বাংলায় ৯৭ দশমিক ৭৪, ইংরেজিতে ৯২ দশমিক ২, গণিতে ৭৯ দশমিক ৭৩, পদার্থে ৮৯ দশমিক ৭৯, রসায়নে ৯২ দশমিক ৪৫, আইসিটিতে ৯৪ দশমিক ৪৫, পৌরনীতিতে ৭৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ পাস করেছে।
কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৭৩ দশমিক ৬৩ শতাংশ। এই বোর্ডে বাংলায় ৯৬ দশমিক ৫৯, ইংরেজিতে ৯৪ দশমিক ৩৬, গণিতে ৮৮ দশমিক ৭২, পদার্থে ৯২ দশমিক ৯২, রসায়নে ৯২ দশমিক ২৯ শতাংশ পাস করেছে।
এর আগে ২০২৪ সালে শতভাগ পাস করেছিল ২ হাজার ৯৬৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। সে হিসেবে শতভাগ পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কমেছে ১ হাজার ৯৮৪টি। একইভাবে ২০২৪ সালে একজন শিক্ষার্থীও পাস করেনি এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ৫১টি। যা এবার ৮৩টি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩৪টিতে।
সম্পাদক ও প্রকাশক- মেহেদী হাসান
Copyright © 2025 Livenews24. All rights reserved.